শীর্ষ সন্ত্রাসী তোফায়েল আহমেদ ওরফে জোসেফের সাজা মওকুফের জন্য আবারও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে। তবে এবার পরিবার নয়, এই প্রস্তাব পাঠিয়েছে খোদ কারা অধিদপ্তর।
হত্যা, অস্ত্র মামলাসহ ১১ মামলার আসামি জোসেফ ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে রয়েছেন। এর আগে গত বছরের জুনে ‘অন্যায়ভাবে সাজা খাটানো হচ্ছে’ দাবি করে তাঁর মা রেনুজা বেগম ছেলের সাজা মওকুফের জন্য আবেদন করেছিলেন। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে তা আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হলে সাজা মওকুফের পক্ষে মতামত দেওয়া হয়। ইতিবাচক মতামত দিয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় তা পাঠিয়েছিল প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরে। ওই আবেদনের ফলাফল কী হয়েছে তা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানাতে পারেননি।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সূত্র বলেছে, কারা অধিদপ্তর কারাবিধির ৫৬৯ ধারা অনুযায়ী সম্প্রতি এই প্রস্তাব পাঠিয়েছে। এই বিধি কোন ধরনের কয়েদিদের জন্য প্রযোজ্য, জানতে চাইলে এই ধারায় মুক্তির জন্য গঠিত যাচাই-বাছাই কমিটির প্রধান ও মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (কারা) মুহিবুল হক গতকাল মঙ্গলবার গণমাধ্যমকে বলেন, ২০ বছর সাজা খেটেছেন এমন কয়েদিদের মধ্যে যাঁরা খুব অসুস্থ, অক্ষম বা বৃদ্ধ তাঁদের জন্যই এ ধারা প্রযোজ্য। এ ছাড়া কেউ খুব ভালো আচরণ করলে তাঁর ক্ষেত্রেও ধারাটি প্রয়োগ হতে পারে। তবে বিতর্কিত কারও জন্য এ ধারা প্রযোজ্য হওয়ার কথা নয়।
অতিরিক্ত কারামহাপরিদর্শক ইকবাল হাসানের স্বাক্ষরিত ওই প্রস্তাবে বলা হয়েছে, ‘২০১৫ সালের ১১ এপ্রিল জোসেফের হাজতবাস তথা রেয়াতসহ প্রকৃত সাজা ২০ বছর পূর্ণ হয়েছে। এই কয়েদির মামলার সব কাগজপত্র আগেই পাঠানো হয়েছে। এ অবস্থায় কারাবিধির ৫৬৯ ধারা মোতাবেক অবশিষ্ট সাজা মওকুফের সিদ্ধান্ত দিতে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র পাঠানো হলো।’
কারা সূত্রের তথ্য অনুযায়ী, ১৯৯৯ সালের একটি হত্যা মামলায় জোসেফকে ২০০৪ সালের ৭ মে নিম্ন আদালত মৃত্যুদণ্ড দেন। এই রায় বহাল রাখেন হাইকোর্ট। পরে ২০১৫ সালে আপিল বিভাগ সাজা কমিয়ে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেন। তাঁর সাজা ভোগ করার বাকি আছে ২০ বছর ৯ মাস। তাঁর সম্ভাব্য মুক্তির তারিখ ২০৩৯ সালের ২৪ জানুয়ারি।
২০০৫ সালে নারায়ণগঞ্জ থেকে জোসেফকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। এর আগের বছর তাঁকে ধরিয়ে দিতে ৫০ হাজার টাকা পুরস্কার ঘোষণা করে তৎকালীন সরকার।
জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল গতকাল গণমাধ্যমকে বলেন, ‘জোসেফের সাজা মওকুফের জন্য কারা অধিদপ্তরের প্রস্তাব আমরা পেয়েছি। সে যদি আইনানুযায়ী, নিয়মানুযায়ী কিছু সুযোগ-সুবিধা পায়, আমরা দেব। মওকুফের জন্য এ প্রস্তাব বিবেচিত হলে এ বিষয়ে আইন মন্ত্রণালয়ের মতামত নেব। এরপরই প্রধানমন্ত্রীর কাছে অনুমোদনের জন্য পাঠানো হবে। এ ক্ষেত্রে রাষ্ট্রপতির অনুমোদনের প্রয়োজন হবে না।’
নব্বইয়ের দশকের শীর্ষ সন্ত্রাসী ও মোহাম্মদপুর এলাকার সাবেক ছাত্রলীগ নেতা জোসেফ কোনো জটিল রোগ ছাড়াই টানা ২০ মাস হাসপাতালে ছিলেন। এ নিয়ে একটি জাতীয় দৈনিকে ৩ মে প্রতিবেদন প্রকাশ হওয়ার পর গত সোমবার দুপুরে তাঁকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএসএমএমইউ) হাসপাতালের প্রিজন সেল থেকে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে নেওয়া হয়।
সাজা মওকুফের আবেদনের বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে আইনজীবী ও সংবিধান বিশেষজ্ঞ শাহদীন মালিক গণমাধ্যমকে বলেন, ‘জোসেফের মতো সন্ত্রাসীর সাজা মওকুফ করা মানে হচ্ছে আমরা মগের মুল্লুকে আছি। এসব সাজা মওকুফ করার কথা মানবিক বিবেচনায় অর্থাৎ ব্যবহার যথেষ্ট ভালো বা এমন কোনো রোগে আক্রান্ত হলেন, যার জন্য মুক্তির প্রয়োজন, তাঁর ক্ষেত্রে।’
এসব বিষয়ে জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের সাবেক চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান গণমাধ্যমকে বলেন, সরকারের সাজা মওকুফের যে ক্ষমতা তা প্রয়োগ করতে হবে গভীর বিবেচনার মাধ্যমে, অত্যন্ত সতর্কতার সঙ্গে। আইনে যখন কোনো বিশেষ ধারা থাকে তখন বুঝতে হবে ওই ধারা বিশেষ প্রয়োজনে বিশেষ ব্যক্তির জন্য। এখন এই ধারা যদি জোসেফের ক্ষেত্রে প্রয়োগ করা হয়, তবে বুঝতে হবে সরকার জেনেবুঝে ক্ষমতার অপব্যবহার করছে।




Discussion about this post