চোরাচালান যে কোনো দেশের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তার জন্য বড় হুমকি। বাংলাদেশের নিরাপত্তা বিঘ্নিত করতে এই চক্র দেশ ও দেশের বাইরে সব সময় তৎপর।
প্রযুক্তির সহায়তায় পাল্টে যাচ্ছে চোরাচালানের ধরন। তাই চোরাচালান ঠেকাতে বসে নেই শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদফতর। তবুও চোরাচালানিদের কৌশলের কাছে প্রায়ই হিমশিম খেতে হয় তাদের।
চোরাকারবারিদের সব কৌশল ব্যর্থ করে সক্ষমতা বাড়ানোর অংশ হিসেবে শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদফতরে যোগ হচ্ছে ‘ডগ স্কোয়াড’।
র্যাবের সঙ্গে স্বল্পমেয়াদী ও দীর্ঘমেয়াদী নিজেদের একটি পূর্ণাঙ্গ স্কোয়াড গঠনের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। শুল্ক গোয়েন্দার একটি সূত্র গণমাধ্যমকে এসব তথ্য জানিয়েছে।
সূত্র জানায়, সাম্প্রতিক সময়ে দেশের বিমান ও স্থলবন্দর দিয়ে স্বর্ণ, নিষিদ্ধ পণ্য ও মাদকদ্রব্যসহ বিভিন্ন জিনিসের চোরাচালান আশঙ্কাজনক হারে বেড়ে গেছে। বিশেষ করে স্বর্ণ ও মাদকদ্রব্য। স্বর্ণ দেশের অভ্যন্তরে অপরাধ সংঘটিত করতে আনা হচ্ছে। আবার কখনও বাংলাদেশকে রুট হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে। অন্য পণ্য চোরাচালানের পাশাপাশি মাদকদব্যের চোরাচালানে উদ্বিগ্ন সবাই। এর মাধ্যমে ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে ধ্বংস করার পরিকল্পনা করা হচ্ছে।
স্বর্ণের পাশাপাশি নানা কৌশলে আসা মাদকদ্রব্য সাফল্যের সঙ্গে জব্দ করছে শুল্ক গোয়েন্দা। গত কয়েক বছরে এক্ষেত্রে বেশ সফলতা দেখিয়েছে শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদফতর।
সূত্র জানায়, কর ফাঁকি রোধ ও চোরাচালান বন্ধে আইনপ্রয়োগকারী (এনফোর্সমেন্ট) সংস্থা আগের চেয়ে আরও বেশি তৎপর রয়েছে। এনফোর্সমেন্টের সঙ্গে রাষ্ট্রীয়, অর্থনৈতিক, সামাজিক, পরিবেশ ও জনস্বাস্থ্য নিরাপত্তা জড়িত। বর্তমানে কোনো দেশ অন্য দেশকে দখল করে নিরাপত্তা বিঘ্নিত করতে পারে না।
অপ্রচলিত ইস্যুর মাধ্যমে এক দেশ, অন্য দেশকে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে। বিশেষ করে সন্ত্রাসী ও চোরাচালানি চক্র বিভিন্নভাবে দেশের অভ্যন্তরে হুমকি সৃষ্টির চেষ্টা করে। এসব প্রতিহত করতে শুল্ক গোয়েন্দা কাজ করছে। বর্তমানে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণে অগ্রাধিকার দিয়ে কাজ করা হচ্ছে।
মাদকদ্রব্য চোরাচালানের মাধ্যমে অর্জিত ‘কুইক মানি’ (কালো টাকা) সন্ত্রাসী কার্যক্রমে খরচ করা হয়। অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা বিধানে ‘কুইক মানি’ রোধের বিকল্প নেই। এক্ষেত্রে ইতিবাচক ভূমিকা রাখতে পারে এনফোর্সমেন্ট।
মাদকদ্রব্য চোরাচালানে অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা বিঘ্নিত করে ট্রানজিট রুট হিসেবে বাংলাদেশকে ব্যবহার করা হয়। দু’টি ক্ষেত্রেই শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদফতর খুবই সচেতন। মাদকদ্রব্যসহ চোরাচালান রোধে সক্ষমতা বৃদ্ধিতে নানামুখী উদ্যোগের অন্যতম উদ্যোগ হচ্ছে ‘ডগ স্কোয়াড’ সংযোজন।
স্বল্পমেয়াদী ও দীর্ঘমেয়াদী এ দুই পদ্ধতিতে ডগ স্কোয়াড ব্যবহারের পরিকল্পনা নিয়েছে শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদফতর।
স্বল্পমেয়াদী হিসেবে র্যাবসহ যেসব সংস্থার মাদকদ্রব্য শনাক্ত সক্ষম প্রশিক্ষিত ডগ রয়েছে, সেসব ডগ যৌথভাবে ব্যবহার করতে যোগাযোগ করা হয়েছে।
বিশেষ করে র্যাবের ডগ স্কোয়াড ব্যবহারে চিঠি দেওয়া হয়েছে। একাধিকবার র্যাবের সঙ্গে শুল্ক গোয়েন্দাসহ এনবিআরের কর্মকর্তারা বৈঠক করেছে।
র্যাবও শুল্ক গোয়েন্দার সঙ্গে ডগ স্কোয়াড ব্যবহারে সম্মত হয়েছে। অর্থমন্ত্রীর নির্দেশ অনুযায়ী র্যাবের সঙ্গে সমঝোতা স্মারকের (এমওইউ) খসড়া কপি র্যাব সদর দফতরে পাঠানো হয়েছে। কপি শুল্ক গোয়েন্দার হাতে আসলে চূড়ান্তভাবে সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর করা হবে। সমঝোতা স্মারক অনুযায়ী, ডগ স্কোয়াড প্রয়োজনে যে কোনো সময় ব্যবহার করবে শুল্ক গোয়েন্দা।
এরই অংশ হিসেবে ইতোমধ্যে বিমানবন্দর এলাকায় র্যাবের ডগ স্কোয়াড নিয়ে মাদকদ্রব্যসহ চোরাচালান শনাক্তে যৌথভাবে মহড়াও হয়েছে।
সূত্র জানায়, দীর্ঘমেয়াদী ও স্থায়ীভাবে ডগ স্কোয়াড করার পরিকল্পনা নিয়েছে শুল্ক গোয়েন্দা বিভাগ। এর জন্য উত্তরার দিয়াবাড়িতে প্রায় তিন একর জমি চেয়ে অর্থমন্ত্রণালয়কে চিঠি দিয়েছে শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদফতর।
এসব ডগের প্রশিক্ষণ, মহড়া, ডগ রাখা ও পরিচর্যার জন্য স্থাপনা তৈরি, চিকিৎসক, তত্ত্বাবধায়কসহ সংশ্লিষ্টদের বাসস্থান তৈরিতে তিন একর জমির প্রয়োজন হবে। দিয়াবাড়ি বিমাবন্দর এলাকার কাছাকাছি হওয়ায় স্থান নির্বাচন করা হয়েছে। এখান থেকে দ্রুত যে কোনো জায়গায় ডগ মুভ করা সম্ভব হবে।
সূত্র জানায়, এজন্য জনবল, তত্ত্বাবধানসহ বাজেট, কোথায় থেকে কোন ধরনের ডগ আনা হবে, সে বিষয়ে বিস্তারিত একটি প্রস্তাবনা এনবিআরে পাঠিয়েছে শুল্ক গোয়েন্দা অধিদফতর। অর্থমন্ত্রীর অনুমোদনের পর কার্যক্রম শুরু হবে। এনবিআরের অর্গানোগ্রামে বিষয়টি অন্তভুক্ত করতে অনুরোধ করা হয়েছে।
স্বল্পমেয়াদে এখনই কাজ শুরু করতে চাই শুল্ক গোয়েন্দা অধিদফতর। এজন্য আগামী সপ্তাহে চূড়ান্ত মহড়ার অংশ হিসেবে যৌথ আরও একটি অভিযান চালানো হবে বলে জানায় সূত্রটি।
এ মহড়ার মাধ্যমে শুল্ক গোয়েন্দার বিষয়ে মানুষের মধ্যে আস্থা তৈরি হবে। চোরাকারবারিরা বার্তা পাবে চোরাচালান রোধে শুল্ক গোয়েন্দার সক্ষমতা বেড়েছে, অন্য সংস্থার সঙ্গে তাদের ভালো সু-সমন্বয় রয়েছে।
প্রাথমিকভাবে স্থায়ী ডগ স্কোয়াড ঢাকায় করা হচ্ছে। ভবিষ্যতে ঢাকার বাইরে করা হবে। এখন প্রয়োজন অনুযায়ী ঢাকার বাইরে ব্যবহার করা হবে।
ডগ বেশি দামি না হলেও এর রক্ষণাবেক্ষণ ও তত্ত্বাবধান ব্যয় অনেক বেশি। অনেক সংস্থা কাস্টমকে ডগ দিতে ইতোমধ্যে আগ্রহ প্রকাশ করেছে।
আন্তর্জাতিক কাস্টমস এর রিজিওনাল ইন্টেলিজেন্স লিয়াজোঁ অফিসেও (রাইলো) প্রতিনিধি দল শুল্ক গোয়েন্দা পরিদর্শনে এসে ডগ স্কোয়াডের জন্য বিশেষ প্রশিক্ষণ, প্রশিক্ষকসহ সর্বক্ষেত্রে সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছে।
স্বল্পমেয়াদে ডগ স্কোয়াড ব্যবহার ও নিজস্ব স্কোয়াড গঠনের বিষয়টি স্বীকার করেন শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদফতরের মহাপরিচালক ড. মইনুল খান।
তিনি বলেন, যুবকসমাজ দেশের ভবিষ্যত, যারা কল-কারখানা গড়বে, করদাতা হবে এবং দেশের নেতৃত্ব দেবে। সেই যুবসমাজের একটি অংশ মাদকদ্রব্যে আসক্ত হয়ে মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।
ডগ স্কোয়াড ব্যবহারের মাধ্যমে মাদকদ্রব্যসহ চোরাচালান প্রতিরোধে অনেক বেশি ফলাফল পাওয়া যাবে। সহসাই এর ব্যবহার শুরু হবে বলেও জানান তিনি।
জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) চেয়ারম্যান মো. নজিবুর রহমান গণমাধ্যমকে বলেন, ডগ স্কোয়াড গঠনের সিদ্ধান্ত হয়ে গেছে। সহসাই কাজ শুরু হবে।
তিনি বলেন, এর মাধ্যমে চোরাকারবারিদের কঠিন বার্তা দিতে চাই যে, সময় থাকতে সামধান হও। অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা বিঘ্নিত হলে তাদের ছাড় নেই। -বাংলানিউজ
Discussion about this post