সাইবার ট্রাইব্যুনাল ২০১৩ সালে গঠন করে সরকার। সাইবার অপরাধে এসব মামলা নিষ্পত্তির জন্য ২০১৩ সালের জুন থেকে আদালতটির কার্যক্রম শুরু হয়। এ ট্রাইব্যুনাল প্রায় তিন বছর পরও স্থায়ী ঠিকানা পায়নি । পরের মাসে ট্রাইব্যুনালটিতে বিচারক হিসেবে নিয়োগ পান কে এম সামছুল আলম। একই বছরের ২৮শে অক্টোবর পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) হিসেবে নিয়োগ পান মোহাম্মদ নজরুল ইসলাম শামীম। একইভাবে শামীম আল মামুন পেশকার, মোহাম্মদ আলী স্টেনোগ্রাফার, মোহাম্মদ ইসহাক জারিকারক, মো. আজিজুল হক অফিস সহায়ক এবং মোহাম্মদ রাসেল চালক হিসেবে নিয়োগ পান। গেজেট প্রকাশের প্রায় তিন বছরেও মামলার বিচারকাজ চালানোর জন্য এজলাস কক্ষও জুটেনি এই গুরুত্বপূর্ণ ট্রাইব্যুনালের। এজলাসের জন্য এ পর্যন্ত কোনো কক্ষ বা স্থানই বরাদ্দ দেয়া হয়নি। বর্তমানে মহানগর দায়রা আদালত ভবনের ষষ্ঠ তলায় বিশেষ জজ-১ এর এজলাস কক্ষে ওই আদালতের কার্যক্রমের পরে সময় পাওয়া গেলে পালা করে বসছে সাইবার ট্রাইব্যুনালের এজলাস।<br /> প্রায় প্রতিদিন বেলা ২টা থেকে বিকাল ৪টার মধ্যে বিশেষ জজ-১ আদালতের দিনের বিচারিক কার্যক্রম শেষ হলে পরে ট্রাইব্যুনালটির বিচারকাজ পরিচালনার সুযোগ পায়। ফলে প্রতিদিন পূর্ণ দিবসের পরিবর্তে মাত্র কয়েক ঘণ্টা বিচারকাজ চালানোর সুযোগ মিলছে। এতে পূর্ণ কার্যদিবসে যেখানে দিনে ৪০ থেকে ৫০টি মামলার বিচারিক কাজ পরিচালনা সম্ভব, সেখানে চলছে মাত্র ৫ থেকে ১০টি। অথচ বিধান অনুযায়ী সারা দেশের যে থানায় মামলা দায়ের হোক না কেন, তদন্তের পর তা সংশ্লিষ্ট এলাকার জেলা বা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেটের অবগতির পর সরাসরি ওই সাইবার ট্রাইব্যুনালে পাঠিয়ে দেয়া হয়। এই ট্রাইব্যুনালে অভিযোগ গঠনের ৬ মাসের মধ্যে মামলা নিষ্পত্তির বাধ্যবাধকতা রয়েছে। এই সময়ের মধ্যে শেষ না হলে উচ্চ আদালতের অনুমতি নিয়ে আরও ৯০ দিন সময় বাড়ানো যায়। তাতেও নিষ্পত্তি সম্ভব না হলে তা উচ্চ আদালতের এখতিয়ারে চলে যায়। কিন্তু পূর্ণ কার্যদিবস মামলা পরিচালনার সময় না পাওয়ায় এক দিকে যেমন যথাসময়ে মামলা নিষ্পত্তি হচ্ছে না, তেমনি সারা দেশ থেকে বিচারপ্রার্থীরা রাজধানীতে এসে দুর্ভোগে পড়ছেন।<br /> ট্রাইব্যুনালের বিচারকের জন্য খাসকামরা, পিপি বা পেশকারের কক্ষ বা বসার স্থানসহ কোনো কর্মকর্তা-কর্মচারীর জন্য কোনো কক্ষ বা স্থানই জুটেনি ট্রাইব্যুনালটির। ট্রাইব্যুনালের বিচারক যৌথভাবে বসছেন বিশেষ জজ-১ আদালতের বিশ্রাম কক্ষে। ওই আদালতটির একটি ছোট কক্ষে তাদের সঙ্গে যৌথভাবে কাজ চালিয়ে নিচ্ছে ট্রাইব্যুনালটির পিপি ও পেশকার। বিচারের জন্য এ পর্যন্ত ১৮৮টি মামলা ট্রাইব্যুনালটিতে গেছে। এর মধ্যে ২১ মামলার রায় হয়েছে। আরও ৩০টির মতো মামলা তদন্ত কর্মকর্তার চূড়ান্ত প্রতিবেদন উপস্থাপন বা অন্যান্যভাবে নিষ্পত্তি হয়েছে। উচ্চ আদালতের স্থগিতাদেশ রয়েছে ৩টি মামলায়। আর বর্তমানে ঢাকা, ফরিদপুর, নেত্রকোনা, সিলেট, যশোর, পাবনা, চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, রংপুর, দিনাজপুরসহ দেশের অর্ধেকের বেশি জেলার প্রায় দেড় শতাধিক মামলা সাইবার ট্রাইব্যুনালে বিচারাধীন রয়েছে। মামলাগুলোর প্রায় সবগুলোই তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি আইন ২০০৬ (সংশোধনী ২০১৩) এর ৫৪, ৫৫, ৫৬, ৫৭, ৬৩ ও ৬৬ ধারায় দায়েরকৃত। এর মধ্যে সিংহভাগই আইনটির ৫৭ ধারায় দায়েরকৃত।<br /> সাইবার ট্রাইব্যুনাল ঢাকার পাবলিক প্রসিকিউটর মোহাম্মদ নজরুল ইসলাম শামীম বলেন, সাইবার অপরাধের বিচারের জন্য দেশের একমাত্র আদালত হওয়ায় ট্রাইব্যুনালটিতে সারা দেশ থেকেই মামলা আসে। আদালতটি প্রতিষ্ঠার পর প্রয়োজনীয় লোকবল নিয়োগ হলেও এজলাস, বিচারক, পিপি ও সেরেস্তার প্রয়োজনীয় কাজ চালানোর জন্য কোনো স্থান বা কক্ষ বরাদ্দ দেয়া হয়নি। ফলে যা হওয়ার তাই হচ্ছে। অন্য আদালতের বিচারকাজের পর প্রতিদিন কয়েক ঘণ্টা এজলাস ফাঁকা পাওয়া গেলে সে সুযোগ নিয়ে যে কটা মামলার বিচারকাজ চালানো সম্ভব তাই চালানো হচ্ছে। এতে বিচারপ্রার্থীদের চরম ভোগান্তি তো অস্বীকার করার উপায় নেই। কিন্তু ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে মৌখিক ও লিখিতভাবে বহুবার চেয়েও স্থান বরাদ্দ পাওয়া যায়নি।<br /> আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক মন্ত্রী আনিসুল হক বলেন, দেশের একমাত্র সাইবার ট্রাইব্যুনালের এজলাস না থাকার বিষয়ে আমি অবগত। এ বিষয়ে ঢাকা মহানগর দায়রা জজ এবং ঢাকা জেলা ও দায়রা জজের সঙ্গে কথাও বলেছি। ঢাকা আদালতপাড়ায় একাধিক ভবনের বর্ধিত অংশ নির্মাণের কাজ শিগগিরই হাতে নেয়া হবে। তা হলে পরে সাইবার ট্রাইব্যুনালের জন্য একটি এজলাস বরাদ্দ দেয়া যাবে।</p>




Discussion about this post