ডেস্ক রিপোর্ট
সাতক্ষীরার কলারোয়ায় ২০০২ সালে তৎকালীন বিরোধী দলীয় নেতা এবং বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার গাড়িবহরে হামলার মামলায় বিচারিক (নিম্ন) আদালতে সাজাপ্রাপ্ত ১১ জনের জামিন আবেদনের বিষয়ে আদেশের দিন পিছিয়েছে।
রোববার (৩০ মে) দিন ধার্য থাকলেও এ বিষয়ে কোনো আদেশ দেয়া হয়নি। আদেশের বিষয়ে হাইকোর্ট আগামী ২০ জুন পর্যন্ত মুলতবি (স্ট্যান্ডওভার) ঘোষণা করেছেন।
হাইকোর্টের বিচারপতি মোস্তফা জামান ইসলাম ও বিচারপতি মো. ইকবাল কবিরের সমন্বয়ে গঠিত ভার্চুয়াল বেঞ্চ আসামিদের করা জামিন আবেদনের বিষয়ে আদেশ মুলতবি করে এ আদেশ দেন। বিষয়টি গণমাধ্যমকে নিশ্চিত করেছেন রাষ্ট্রপক্ষের অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল এসএম মুনীর।
এর আগে গত ২৪ মে সাতক্ষীরার কলারোয়ায় ২০০২ সালে শেখ হাসিনার গাড়িবহরে হামলার মামলায় বিচারিক (নিম্ন) আদালতে বিভিন্ন মেয়াদে সাজাপ্রাপ্ত ১৮ জনের জামিন আবেদনের ওপর শুনানি শেষ হয়। এ বিষয়ে আদেশের জন্য মঙ্গলবার (২৫ মে) হাইকোর্টের ভার্চুয়াল বেঞ্চ সাতজনের জামিন মঞ্জুর করে আদেশ দেন। বাকিদের জামিনের বিষয়ে আদেশ দেয়ার জন্য ৩০ মে পরবর্তী তারিখ নির্ধারণ করেন।

এর আগে গত ২৪ মে ১৮ জনের জামিন আবেদনের ওপর শুনানি শেষ করা হয়। ওই দিন জামিন আবেদনকারীদের পক্ষে শুনানি করেন ব্যারিস্টার এএম মাহবুব উদ্দিন খোকন, অ্যাডভোকেট গাজী মহসীন। অন্যদিকে রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন অ্যাটর্নি জেনারেল এএম আমিন উদ্দিন, অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল এস এম মুনীর, ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল ইয়াহিয়া দুলাল ও সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল মুহাম্মদ শাহীন মৃধা।
২০০২ সালে কলারোয়ার এক মুক্তিযোদ্ধার স্ত্রীকে ধর্ষণ করা হয়। ওই বছরের ৩০ আগস্ট শেখ হাসিনা সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালে ওই মুক্তিযোদ্ধার স্ত্রীকে দেখে মাগুরায় যাচ্ছিলেন।
কলারোয়া উপজেলা বিএনপি অফিসের সামনে তার গাড়িবহর পৌঁছলে একদল সন্ত্রাসী লাঠিসোটা, ধারালো অস্ত্র, বোমা ও আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে হামলা চালায়। সেসময় শেখ হাসিনা প্রাণে রক্ষা পেলেও তার গাড়ি বহরে থাকা সাতক্ষীরা জেলা আওয়ামী লীগের আহ্বায়ক ইঞ্জিনিয়ার শেখ মুজিবুর রহমান, কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগ নেত্রী ফাতেমা জাহান সাথী, জোবায়দুল হক রাসেল, শেখ হাসিনার ক্যামেরাম্যান শহীদুল হক জীবনসহ অনেকেই আহত হন। বেশ কয়েকজন সাংবাদিকও এ ঘটনায় আহত হন।
ঘটনার পরে ওই দিনই কলারোয়া উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার মোসলেম উদ্দিন বাদী হয়ে মামলা করেন। এ মামলায় তদন্ত শেষে ৫০ জনের বিরুদ্ধে ২০১৫ সালে অভিযোগপত্র দাখিল করে পুলিশ।আসামিদের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগে বলা হয়, শেখ হাসিনাকে হত্যার উদ্দেশ্যে এই হামলা হয়েছে। এরপর রাকিব নামে এক আসামির আবেদনে ২০১৭ সালের ২৩ আগস্ট হাইকোর্ট মামলার কার্যক্রমের ওপর স্থগিতাদেশ দেন। একইসঙ্গে রাকিবের ক্ষেত্রে মামলার কার্যক্রম কেন বাতিল করা হবে না তা জানতে চেয়ে রুল জারি করা হয়।
পরে রাকিবকে জামিন দেয়া হয়। রাকিবের আবেদনে বলা হয়, যখন ঘটনার কথা বলা হয় তখন অর্থাৎ ২০০২ সালে তার বয়স ছিল ১০ বছর। সুতরাং তার বিচার হতে হলে শিশু আইনে হবে। বড়দের সঙ্গে দায়রা জজ আদালতে করা যাবে না।গত বছর ৮ অক্টোবর ওই রুল খারিজ করে রায় দেন আদালত। এই রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করেন রাকিব। এ আবেদনে আপিল বিভাগ তিন মাসের মধ্যে নিম্ন আদালতে বিচার সম্পন্ন করার নির্দেশ দেন।
এরপর বিচার শেষে সাতক্ষীরার চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত গত ৪ ফেব্রুয়ারি এ মামলায় বিএনপির সাবেক এমপি হাবিবুল ইসলাম হাবিবসহ তিনজনের সর্বোচ্চ ১০ বছর করে এবং বাকি ৪৭ আসামিকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড দিয়ে রায় দেন।
এদিকে, একই মামলায় বিচারিক (নিম্ন) আদালতে দণ্ডপ্রাপ্ত ১৮ জন আসামির মধ্যে সাতজনকে হাইকোর্ট থেকে দেয়া জামিন রাষ্ট্রপক্ষের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে স্থগিত করেছেন আপিল বিভাগের চেম্বার জজ আদালত।এ মামলায় সাজাপ্রাপ্ত ১৮ আসামির জামিন চেয়ে করা আবেদন শুনানি নিয়ে গত মঙ্গলবার (২৫ মে) সাতক্ষীরা জেলা আইনজীবী সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট আবদুস সাত্তারসহ সাতজনকে জামিন দেন হাইকোর্টের একই ভার্চুয়াল বেঞ্চ। পরে আপিল বিভাগের সংশ্লিষ্ট শাখায় রাষ্ট্রপক্ষ আপিল আবেদন করেন।
পরে সেই আবেদনের ওপর বৃহস্পতিবার (২৭ মে) শুনানি নিয়ে ওই সাতজনের জামিন স্থগিত করে আদেশ দেন আপিল বিভাগের বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকীর চেম্বার জজ আদালত।নিম্ন আদালতে সাজাপ্রাপ্ত হাইকোর্ট থেকে জামিন পাওয়া অ্যাডভোকেট আবদুস সাত্তার ছাড়া অন্যান্যরা হলেন- গোলাম রসুল, আইনজীবী আব্দুস সামাদ ও জহিরুল ইসলাম, রাকিব, শাহাবুদ্দিন ও মনিরুল ইসলাম। পরে হাইকোর্টের দেয়া আদেশ স্থগিত করেন চেম্বারজজ আদালত। ওই আদেশ আজ (৩০ মে) বহাল রাখেন সুপ্রিমকোর্টের আপিল বিভাগ।
Discussion about this post