নিজস্ব প্রতিবেদক: আমার স্বামীর কোনো শত্রু ছিল না, অফিসে কারও সাথে সমস্যা ছিল না, রাজনীতিও করতো না। যারা তাকে তুলে নিয়ে গেছে তাদের চেহারা সিসিটিভি ফুটেজে স্পষ্ট দেখা গেছে। তারপরও কেন তাদের ধরা সম্ভব হচ্ছে না? আমি নিশ্চিত সরকার ভালোভাবে তদন্ত করলে আমরা তাকে ফিরে পাব। তাই আমি তাকে ফিরে পেতে প্রধানমন্ত্রীর সাথে দেখা করতে চাই। এক সংবাদ সম্মেলনে কান্না জড়িত কণ্ঠে এসব কথা বলেন তেজগাঁও থেকে নিখোঁজ আইটি বিশেষজ্ঞ আতাউর রহমান শাহীনের স্ত্রী তানিয়া আক্তার।
আজ বুধবার (৩ জুলাই) ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে (ডিআরইউ) এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।
এসময় তানিয়া আক্তার বলেন, আমি সন্তানসম্ভবা, অসুস্থ। স্বামী নিখোঁজ দুই মাস। স্বামীর জন্য দুই মাস ধরে বিভিন্ন জনের দ্বারে দ্বারে ঘুরেছি। স্পিকার, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, র্যাব, ডিবির কাছে গিয়েছি। সবাই শুধু বলেন, দেখছি। ৯ বছরের ছেলেকে নিয়ে আমি কোথায় যাব? আমার স্বামীকে ফিরিয়ে দিন, আমার অনাগত সন্তান ও ৯ বছরের সন্তানের বাবাকে ফিরিয়ে দিন।
সংবাদ সম্মেলনে তিনি আরোও বলেন, আমার স্বামী (শাহীন) বেঙ্গল গ্লাস কোম্পানিতে অ্যাসিস্ট্যান্ট ম্যানেজার হিসেবে কর্মরত ছিলেন। এছাড়াও ৪ বছর ধরে সে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে (পিএমও) আইটি বিশেষজ্ঞ হিসেবে খন্ডকালীন চাকরি করতো। স্বামীকে না পেয়ে আমি জাতীয় সংসদের স্পিকার শিরীন শারমীন চৌধুরী, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, ডেপুটি স্পিকারসহ পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সাথে যোগাযোগ করি। কিন্তু কেউই তার নিখোঁজের বিষয়ে কোনো তথ্য দিতে পারেননি। এ বিষয়ে জাতীয় মানবাধিকার কমিশনে চিঠি দিয়েছি কিন্তু কোনো কাজ হয়নি।
সংবাদ সম্মেলনে শাহীনের বাবা আব্দুল আউয়াল মন্ডল বলেন, ছেলে নিখোঁজ হওয়ার পর আমি র্যাবের কাছে যাই। প্রথমে তারা তৎপর ছিল, পরে থেমে গেছে। ডিবিও প্রথমে তৎপর থেকে পরে থেমে গেছে। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, দেখছি। তিনি আরোও বলেন, আমার ছেলে শাহীনের নিখোঁজ হওয়ার তদন্ত বারবার থেমে যাচ্ছে। আমরা মনে করছি, সরকারি কোনো সংস্থা এর সাথে সংশ্লিষ্ট থাকতে পারে।
বাবাকে ফিরে পেতে সংবাদ সম্মেলনে শাহীনের ছেলে তাসদিদ আন নাফি কান্নায় ভেঙ্গে পড়ে বলে, বাবা সেদিন দুপুরে আমাকে ফোন দিয়েছিল। বলেছে, সন্ধ্যায় ফিরবে, আর ফেরেনি। আমি আমার বাবাকে খুব মিস করি। বাবাকে তাড়াতাড়ি সহিসালামতে আমার কাছে ফিরিয়ে দাও।
জানা গেছে, চলতি বছরের ২ মে রাতে শাহীন বাসায় না ফেরায় স্ত্রী তানিয়া আক্তার মোবাইলে ফোন দিয়ে বন্ধ পান। এরপর তিনি বিষয়টি তার স্বজন ও সহকর্মীদের জানান। তারা সম্ভাব্য বিভিন্ন স্থানে খোঁজ করেন। রাতেই বিভিন্ন হাসপাতালেও খোঁজ করেন। কোথাও সন্ধান না পেলে পরদিন ৩ মে সকালে শাহীনের স্বজনরা তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল থানায় যান। সেখানে শাহীনের মামা সাইফুল ইসলাম একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি নম্বর ১২৩) করেন।
ঘটনার পর পুলিশ আকিজ হাউজের সিসিটিভি ক্যামেরার ফুটেজ সংগ্রহ করে। ফুটেজ থেকে রাত ৮টা ৫ মিনিটে শাহীনকে একটি মাইক্রোবাসে কয়েকজন তুলে নিয়ে যায় বলে ধরা পড়ে। পরে মাইক্রোবাসটিকে শনাক্ত করার চেষ্টা করে পুলিশ। তারপরও শাহীনের খোঁজ না পেয়ে মামলা করে তার পরিবার।




Discussion about this post