বিডি ল নিউজঃ কাবার আঙিনায় নবীজির বাড়ি। ঘর থেকে মসজিদে পৌঁছাতে সামান্য পথ। পথের ওপরে পানির নালা। নবীজির বিদায়ের পর নালাটি সেভাবেই ছিল। নালাটি দেখাশোনা করতেন নবীজির চাচা হজরত আব্বাস রা.। পানির নালা থেকে একদিন রক্তের ফোটা পড়তে লাগলো। মসজিদগামী হজরত ওমরের গায়ে নালার রক্তফোটা পড়ে জামা নষ্ট হয়ে গেল। জামা বদল করে মসজিদে নববীতে ফিরে এলেন হজরত ওমর রা.। উপস্থিত লোকদের বললেন, নালাটি সরিয়ে দিন। নালা বেয়ে রক্ত পড়ছে। লোকেরা বললেন, খলিফাতুল মুসলিমিন! এতো হজরত আব্বাসের ঘর। মসজিদে নবীবি ঘেঁষা।
হজরত ওমর রা. বললেন রাষ্ট্রপ্রধান হিসাবে আদেশ করছি, নালাটি সরিয়ে দিন। নালাটি মসজিদে নববির গা ঘেঁষা। মসজিদে পানি পড়ে। এখন দেখি রক্তও পড়ছে। মানুষের অসুবিধা হচ্ছে। তাই সরিয়ে দিন।
হজরত ওমরের হুকুমে পানির নালা সরিয়ে পার্শ্বে স্থাপন করা হলো। পরদিন নবীজির চাচা হজরত আব্বাস এসে দেখলেন নালা ভেঙে দেওয়া হয়েছে। লোকজন জানালেন খলিফার আদেশে এই কাজ করা হয়েছে। আপত্তি করলেন হজরত আব্বাস রা.। তিনি সমাধানের জন্য সোজা চলে গেলেন মদিনার বিচারপতি হজরত উবায় ইবনে কাবের দরবারে। মদিনার বিচারপতি হজরত উবায় ইবনে কাবের কাছে বাইশ লক্ষবর্গ মাইল রাজ্যের বাদশাহ হজরত ওমরের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করলেন। রাষ্ট্রপ্রধানের বিপক্ষে আদালতে মামলা।
হজরত আব্বাসের অভিযোগ আমার ঘরে হস্তক্ষেপ করা হয়েছে। পানির নালা ভেঙে ফেলা হয়েছে। কেন করা হলো, কার অনুমোতিতে করা হলো? আদালতের মাধ্যমে জানতে চাই!
আদালতে ডাকা হলো হজরত ওমর রা.কে। আদালতে ওমরের উপস্থিতি বুঝতে পেয়ে দাঁড়িয়ে গেলেন বিচারপতি। বসার জায়গা করে দিলেন।
রেগে ধমকের সুরে ওমর বললেন, আপনি বিচারে বিঘ্নেতা সৃষ্টি করবেন না। এখানে আমি শাসক হয়ে আসিনি, আসামি হয়ে এসেছি। সুতরাং আমাকে আপনার আসনে নয় দাঁড়ানোর জায়গা দিন বাদি-বিবাদির সঙ্গে।
আদালতে হজরত ওমর ও হজরত আব্বাস ঘনিষ্ঠ হয়ে বসা। বিচারক হজরত ওমরের কাছে জানতে চাইলেন
আপনি পানির নালা ভেঙেছেন, বা ভাঙার অনুমতি দিয়েছেন?
আদালতে দাঁড়িয়ে হজরত ওমর বললেন
-জি সম্মানিত আদালত!
– কেন?
– মানুষের ক্ষতি হচ্ছে। গায়ে ময়লা লাগছে! নালা বেয়ে রক্ত পড়ছে। আমিসহ অনেক মসজিদগামী নামাজির কাপড় নষ্ট হয়ে গেছে! অমুক অমুক সাহাবিকে ডাকুন; তাদেরও কাপড় নষ্ট হয়েছে। শাসক হিসাবে মানুষকে ক্ষতি থেকে রক্ষা করার প্রয়োজন মনে করেছি বিধায় সরিয়ে ভিন্ন জায়গায় স্থাপন করেছি।
তবে ভুল হয়েছে, তখন হজরত আব্বাস রা. উপস্থিত ছিলেন না।
আদালত এবার হজরত আব্বাস রা.-এর জবানবন্দি শুনতে চাইল!
ইবনে আব্বাস দাঁড়িয়ে বললেন এ ঘরের ভিত্তি নির্মাণ করেছেন আমার ভাতিজা হজরত মুহাম্মদ সা.। ভাতিজার উপস্থিতিতে এই পানির নালা লাগিয়েছি। নবীজির কাদে দাঁড়িয়ে আমি এই নালা লাগিয়েছি। হজরত আনাস ও হজরত আবু হুরাইরা সাক্ষি। নবীজি বলেছিলেন পানির নালা এখানেই থাববে!
থরথর কাঁপছিলেন হজরত ওমর! অঝোর কান্না। অসহায় ওমর এবার শুনলেন আদালতের রায়।
বিচারপতি উবায় ইবনে কাব রায় দিলেন পানির নালা আগের জায়গায় আসবে।
মাথা পেতে রায় মেনে নিয়ে হজরত ওমর বললেন আমাকে ক্ষমা করবেন আদালত। আমার কাদে দাঁড়িয়ে এই নালা পুনস্থাপন করা হোক। তাই হলো। ওমরের কাদে দাঁড়িয়ে পানির নালাটি আগের জায়গায় আনা হলো!-আমাদের সময়
Discussion about this post