একের পর এক নিম্ন মানের অখাদ্য ছবি নির্মান, বিশেষ একজন নায়কের একক আধিপত্য, কম বাজেট ও নিম্ন মানের প্রযুক্তি দিয়ে তামিল তেলেগু ছবির অনুকরনের হাস্যকর অপচেষ্টা, পুরোপুরি ভাবে হলবিমুখ বিত্তবান ও মধ্যবিত্ত শ্রেণী সব মিলিয়ে সদ্য কাটপিস, অশ্লীন সিনেমা নামক ভাইরাস থেকে সেরে ওঠা ঢালিউডের আকাশে তখন শুধুই ঘুটঘুটে অন্ধকার।
এমন করুন পরিস্থতিতেই হঠাৎ ক্ষীন আশার আলোর ঝলকানি হয়ে ঢালিউডে আগমন ঘটে অনন্ত জলিলের৷ তার প্রথম মুভি তৎকালীন সময়ে বহুল আলোচিত “খোজ দা সার্চ” ছিল বাংলাদেশের প্রথম ডিজিটাল বানিজ্যক চলচিত্র৷ অবশ্য ডিজিটাল প্রেক্ষাগৃহের অভাবে সেসময়ে মুভিটি পুজি হারিয়েছিল৷ এবং বাজে নির্মান ও যাচ্ছেতাই অভিনয়ের জন্য বিভিন্ন মহলে নিন্দিত হয়েছিল৷ তথাপি বর্তমানে ঢালিউডে ডিজিটাল সিনেমার নামে যে বিপ্লবের ঢেউ প্রবাহমান তার উত্থান কিন্তু ঐ মুভি দিয়েই৷
ব্যাক্তিগত জীবনে একজন সফল বিজনেস ম্যান৷ অভিনয় তার মূল পেশা নয়৷ তার ওপর প্রথম মুভি ফ্লপ! আপনি আমি হলে হয়ত আবার ফিরে আসার চিন্তাও করতাম না৷ কিন্তুু ঢালিউডকে অনেক কিছু দেওয়ার আছে৷ সেটা জানান দিতেই হয়ত “হৃদয় ভাঙ্গা ঢেউ” মুভি নিয়ে ঢালিউডে আবার ফিরে আসেন অনন্ত জলিল। কিন্তুু তার দ্বিতীয় যাত্রায়ও হতাশ হন তিনি৷ বক্স অফিসে চরম ভাবে ফ্লপ হয় মুভিটি৷
একবার না পারিলে কর শতবার উক্তিটি হয়ত তার সাথেই বেশি খাটে, তাইতো প্রথম দুই যাত্রায় ব্যার্থতার পরও ঢালিউডে আকাশে তৃতীয় বারের মতো উদয় হন তিনি৷না এবার তিনি অতটাও ব্যার্থ হননি৷ বাংলাদেশ ও মালয়শিয়া যৌথ প্রযেজনার ছবি “দ্যা স্পিড” হতাশ করেননি তাকে৷ বিগ বাজেটর মুভিটি পুজি তুলতে সক্ষম হয় পাশাপাশি প্রচন্ড সাড়া ফেলে দেশব্যাপী৷ বিশেষ করে বাংলা সিনেমা বিমুখ মধ্যবিত্ত ও বিত্তবান শ্রেণীর দৃষ্টি আকর্ষন করতে সক্ষম হয় ছবিটি৷
সবমিলিয়ে মুভিটি ছিল ঢালিউডের জন্য একটি বড় ধরনের ব্রেক থ্রো৷ মুভিটি নিয়ে ব্যাপক ইতিবাচক আলোচনা সবাইকে ডিজিটাল ছবি তৈরিতে উৎসাহিত করে৷ ছবিটি মুক্তি পাওয়ার কিছুদিন পর থেকেই একের পর এক ডিজিটাল ছবি নির্মানের ঘোষনা আসতে থাকে৷ শুরু হয় ডিজিটাল সিনেমা বিপ্লব৷
ঢালিউডের এমন দিন বদলের সময়ে ষড়যন্ত্র থেমে থাকেনি৷ কিছু অর্থলোভী মানুষ ডিজিটাল বিপ্লবের সুযোগ নিয়ে একের পর এক সল্প বাজেটের টেলিফিল্ম মার্কা ছবি মুক্তি দিতে শুরু করে৷ ফলে শুরুতেই দর্শক ডিজিটাল ছবির প্রতি আস্থা হারিযে ফেলতে শুরু করে৷ ঢালিউডের নবউত্থান যেন অঙ্কুরেই বিনষ্ট হওয়ার উপক্রম হয়৷কিন্তুু তা হতে দেননি ঢালিউডের নবযাত্রার মহানায়ক এম.এ.জলিল অনন্ত৷
“মোস্ট ওয়কাম” ও “নিস্বার্থ ভালবাসা” মুভি গুলোর মাধ্যমে তিনি হাতে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দেন যে ডিজিটাল ক্যামেরা দিয়ে সিনেমা শ্যুট করালেই ডিজিটাল সিনেমা হয় না৷ ভাল সাউন্ড, ক্যামেরার কাজ, যথাযথ পোস্ট প্রডাকশন ইত্যদির সমন্বয়ে তৈরি হয় ডিজিটাল ছবি৷ মোস্ট ওয়েলকাম ও নিস্বার্থ ভালবাসা ছবি দুটি ব্যাবসায়িক ভাবে ব্যাপক সাফল্য লাভ করে এবং এগুলোর মাধ্যমেই দেশব্যাপী সুপারস্টার বনে যান অনন্ত৷ এরমধ্যে নিস্বারর্থ ভালবাসা মুভিটি প্রথম বাংলাদেশী মুভি হিসেবে কান চলচিত্র উৎসবে অংশগ্রহনের গৌরব অর্জন করে৷
কিন্তুু ভাল প্রযুক্তি ও বাজেটের সমন্বয়ে একটি যথাযথ ডিজিটাল মুভি তৈরি তো অনেক খরচার ব্যাপার! পর্যাপ্ত সিনেমা হল বিহীন ঢালিউড থেকে তো সে অর্থ তোলা অসম্ভব! চিন্তা নেই আসম্ভব কে সম্ভব করার উপায়ও বের করে ফেলেছেন অনন্ত জলিল৷ তিনি নিয়ে এসেছেন ফিল্ম এক্সপোর্ট করার আইডিয়া৷
ইতিমধ্যেই মোস্ট ওয়েলকাম, মোস্ট ওয়েলকাম টু মুভি দুটি রপ্তানি করেছেন তিনি৷ “কথায় আছে অনন্ত জলিল যেখানে নতুর পথে যাত্রা শুরু সেখানে” অনন্ত জলিলের দেখানো পথ অনুসরন করে ইতিমধ্যে অন্যান্য প্রযোজকরাও বিদেশে বাংলা মুভি রপ্তানীর প্রচেস্টা চলাচ্ছে৷ ইতিমধ্যে “ছুঁয়ে দিলে মন” ছবিটি মধ্যপ্রাচ্যের বেশ কয়েকটি দেশে মুক্তি পেয়ে প্রশংসা কুড়িয়েছে৷
বংলাদেশের এক কোটির অধিক মানুষ বিদেশে বসবাস করে৷ ঢালিউড যদি এই এক কোটি মানুষের বাজার ধরতে পারে তাহলে ঢালিউডকে আর পিছনে ফিরে তাকাতে হবে না৷ বদলে যাবে ঢাকাই চলচিত্রের দিন ও রাত৷ আর ঢালিউডের দিন রাত পাল্টে দেবার প্রথম কারিগর হবেন নিস্বন্দেহে অনন্ত জলিল৷
উল্লেখ্য কাকরাইল ফিল্ম পলিটিক্সের কারনে পর্যাপ্ত হল না পাওয়ায় ও তাড়াতাড়ি পাইরেসির কবলে পড়ায় ওনার সর্বশেষ মুভি ঢালিউডের ইতিহাসের সবচেয়ে বড় বাজেটের সিনেমা মোস্ট ওয়েলকাম টু চরমভাবে ফ্লপ হয়েছে৷ যা নিসন্দেহে ওনার জন্য বড় ধরনের ধাক্কা৷ তবে এতোবড় ধাক্কা খেয়েও দমে যাননি তিনি৷ হাত দিয়েছেন দ্যা স্পাই-দেশের অগ্রযাত্রার মহানায়ক ও সিপাহী নামক আরও দুটি মেগা বাজেটের ছবির কাজে৷ এভাবেই অটুট থাকুক ঢালিউডের প্রতি অনন্তর নিস্বার্থ ভালবাসা৷ একজন অনন্ত জলিলের হাত ধরেই এগিয়ে যাক ঢালিউড৷ [লেখাটি বর্ষার পেজ থেকে সংগৃহীত]



Discussion about this post