বিডি ল নিউজঃ
বিএনপির বিগত দুর্দিনের মতো এবারও তৃণমূলই ভরসা দলের চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার। সিনিয়র নেতাদের থেকে বিচ্ছিন্নপ্রায় বেগম জিয়া গুলশান কার্যালয়ে ‘অবরুদ্ধ’ থেকে নিয়মিত মাঠপর্যায়ের নেতা-কর্মীদের সঙ্গে যোগাযোগ করছেন। একই সঙ্গে আন্দোলন কর্মসূচি চালিয়ে যাওয়ার দিকনির্দেশনা দিচ্ছেন তিনি। দলের সিনিয়র নেতাদের সঙ্গে বেগম জিয়া নানাভাবে যোগাযোগের চেষ্টা করেও পাচ্ছেন না। তাই প্রতিদিনই জেলা-উপজেলা পর্যায়ের নেতাদের সঙ্গেই কথা বলে সময় কাটছে ২০-দলীয় জোট প্রধানের। একইভাবে দলের সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানও জেলা-উপজেলা পর্যায়ের নেতাদের সঙ্গে ফোনে কথা বলছেন নিয়মিত। দলীয় সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে এ তথ্য। জানা গেছে, অবরুদ্ধ থাকার ১০ দিনে তৃণমূলের অন্তত দুই হাজার নেতার সঙ্গে কথা বলেন বিএনপি প্রধান। তৃণমূলের সঙ্গে ফোনালাপে তিনি আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার জন্য নেতা-কর্মীদের প্রতি আহ্বান জানান। একই সঙ্গে বিগত ওয়ান-ইলেভেনের কথাও তাদের স্মরণ করিয়ে বেগম জিয়া বলেন, ‘ওই সময় আপনারা যেভাবে আমাকে সহযোগিতা করেছেন, এখনো আমি সেই সহযোগিতা চাইছি। বিজয় না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চালিয়ে যেতে হবে।’ তৃণমূল সূত্রে জানা গেছে, খালেদা জিয়া সাংগঠনিক ৭৫টি জেলার মাঠপর্যায়ে কথা বলে পূর্ণোদ্যমে আন্দোলন কর্মসূচি চালিয়ে যাওয়ার প্রতিশ্র“তি আদায় করেছেন। তৃণমূলের নেতারাও তাকে বলেছেন, ‘অতীতেও আমরা বিএনপি চেয়ারপারসনের ডাকে সাড়া দিয়েছি, এখনো দিচ্ছি এবং ভবিষ্যতেও দেব।’ কথা বলার সময় বেগম জিয়া অনেকটাই আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন বলে সূত্রে জানা গেছে। এদিকে নব্বইয়ের ছাত্রনেতারা আজ কোথায়-এ প্রশ্ন তুলেছেন খোদ তারেক রহমান। কয়েকজন সাবেক ছাত্রনেতাকে ফোন করে তিনি এ প্রশ্ন করেন। বেগম খালেদা জিয়ার ফোন পাওয়ার কথা স্বীকার করে বরিশাল জেলা (উত্তর) বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আ ক ন কুদ্দুসুর রহমান বলেন, ‘গুলশান কার্যালয়ে অবরুদ্ধ চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার সঙ্গে আমার কথা হয়েছে। তিনি দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত নেতা-কর্মী-সমর্থকদের নিয়ে আন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়তে বলেছেন। আমরাও বেগম জিয়ার দিকনির্দেশনা অক্ষরে অক্ষরে পালন করার চেষ্টা করছি।’ বেগম জিয়ার ফোনে তৃণমূল নেতা-কর্মীদের মধ্যে চাঙ্গা ভাব লক্ষ্য করা গেছে বলেও জানান তিনি। বরিশাল বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মজিবর রহমান সরোয়ার, সাবেক এমপি আবুল হোসেন খান, মেজবাহ উদ্দিন ফরহাদসহ নেতৃস্থানীয় বেশ কয়েকজন নেতার সঙ্গে কথা বলেন বেগম জিয়া। একইভাবে ঢাকা, চট্টগ্রাম, রংপুর, রাজশাহী, খুলনা ও সিলেট বিভাগের মহানগর, জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে কথা বলেন ২০-দলীয় জোট প্রধান। সূত্র জানায়, রবিবার গুলশান কার্যালয়ে যান বিএনপির স্থায়ী কমিটির তিন সদস্য লে. জেনারেল (অব.) মাহবুবুর রহমান, ব্যারিস্টার জমিরউদ্দিন সরকার ও ব্যারিস্টার রফিকুল ইসলাম মিয়া। এ সময় বেগম জিয়ার সঙ্গে দেখা করতে আরও কয়েকজন স্থায়ী কমিটির সদস্যের যাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু তারা কথা দিয়েও গুলশান কার্যালয়ে যাননি। তারা কেন যাননি, এ প্রশ্নের ব্যাখ্যায় বিএনপির সিনিয়র এক নেতা বলেন, ‘দুঃসময়ে এসব নেতা নিজেকে নিয়েই সব সময় বেশি ব্যস্ত থাকেন। আবার সুদিনে যে কোনো উপায়ে তারাই বেগম খালেদা জিয়ার কাছাকাছি থাকেন।’ গুলশান কার্যালয়ে যাওয়া নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, দাবি আদায়ে বেগম জিয়া এখনো তার অবস্থানে অনড় রয়েছেন। তিনি নেতাদের উদ্দেশে বলেছেন, নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন না দেওয়া পর্যন্ত অবরোধ কর্মসূচি অব্যাহত থাকবে। প্রয়োজনে হরতালসহ আরও কঠোর কর্মসূচি দেওয়া হবে। তৃণমূল নেতারা বলেন, বিএনপি চেয়ারপারসন নিজেই অবরুদ্ধ। সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানও লন্ডনে অবস্থান করছেন। দলের ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরও কারারুদ্ধ। এরই মধ্যে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, ভাইস চেয়ারম্যান শমসের মবিন চৌধুরী, যুগ্ম-মহাসচিব মো. শাহজাহান, যুববিষয়ক সম্পাদক সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, সহ-দফতর সম্পাদক শামীমুর রহমান শামীম, সাবেক ছাত্রনেতা আবদুল মতিনসহ অনেকেই গ্রেফতার হয়েছেন। কেন্দ্রীয় নেতারা প্রায় সবাই মামলায় জর্জরিত। মামলার বোঝা মাথায় নিয়ে ঢাকা মহানগরসহ দলের সিনিয়র নেতারাও আত্মগোপনে। এ অবস্থায় তৃণমূল নেতারাই বেগম জিয়ার শেষ ভরসা। এ প্রসঙ্গে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য লে. জেনারেল (অব.) মাহবুবুর রহমান বলেন, বেগম জিয়া অবরুদ্ধ থেকেই ২০-দলীয় জোটের অবরোধ কর্মসূচির নেতৃত্ব দিচ্ছেন। তিনি খুবই আত্মপ্রত্যয়ী ও দৃঢ়চেতা। দলের সিনিয়র নেতাদের পাশাপাশি তিনি তৃণমূলের নেতাদের সঙ্গেও কথা বলছেন। অবশ্য রাজধানীতে থাকা কেন্দ্রীয় নেতারা ইচ্ছা করলেও এখন বেগম জিয়ার সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারছেন না। পুলিশ যেভাবে গুলশান কার্যালয় ঘিরে রেখেছে, তাতে নেতা-কর্মীদের সেখানে যাওয়ার সুযোগ কম। গণতন্ত্রের বিজয় না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চলবে।অবরুদ্ধ খালেদার ১০ দিন : বিপুলসংখ্যক পুলিশ আর জলকামানে বেষ্টিত অবস্থায় বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার গুলশান কার্যালয়। সেখানে অবস্থান নেওয়া দলটির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার অবস্থানেরও ১০ দিন আজ। কার্যালয়ের সামনের সড়কে জনসাধারণের চলাচল বন্ধ করে দিয়েছে পুলিশ। এ ছাড়া কার্যালয়ের মূল ফটকের দুই পাশে পুলিশের পিকআপ ভ্যান ও জলকামান রেখে বন্ধ করে রাখা হয়েছে গুলশান-২-এর ৮৬ নম্বর সড়কটি। কার্যালয়ের মূল ফটকে কয়েক দফা তালা খোলা ও লাগানো হয়। গতকাল দিনভর অবশ্য গুলশান কার্যালয়ের মূল ফটক খোলাই ছিল। রবিবার সকালে আবারও বালু, সিমেন্ট ও কাঠভর্তি সাতটি ট্রাক এনে রাখা হয় বেগম জিয়ার কার্যালয়ের দুই পাশে। কিন্তু গতকাল তা দেখা যায়নি। তবে পুলিশ প্রহরা রয়েছে আগের মতোই। অন্যান্য দিনের মতোই বেগম খালেদা জিয়ার সঙ্গে নেতা-নেত্রী ও নিরাপত্তারক্ষীরা অবস্থান করছেন। এদিকে নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের মূল ফটকেও তালা লাগানো রয়েছে। বের করে দেওয়া হয়েছে দলের অফিস স্টাফদের। নয়াপল্টন এলাকায়ও এখন সুনসান নীরবতা। গতকাল দুপুরে মহিলা দলের ৯ সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল খাবার নিয়ে গুলশান কার্যালয়ে যান। সন্ধ্যায় সাবেক সংসদ সদস্য নিলোফার চৌধুরী মনিও বেগম জিয়ার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। বেরিয়ে এসে মনি সাংবাদিকদের বলেন, প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন বেগম খালেদা জিয়া।বরিশাল নেতাদের খালেদা জিয়ার ফোন : বরিশালের নিজস্ব প্রতিবেদক রাহাত খান জানান, ২০ দলের চলমান অবরোধ কঠোর থেকে কঠোরতর করতে জেলা ও মহানগর পর্যায়ের নেতাদের তাগিদ দিয়েছেন বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া। তিনি নিজেই বরিশাল মহানগর এবং উত্তর ও দক্ষিণ জেলার দায়িত্বপ্রাপ্ত কয়েকজন নেতাকে ফোন করেন। নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত অবরোধ চালিয়ে যাওয়ার নির্দেশ দেন নেতা-কর্মীদের। এ কারণে অবরোধে যারা আত্মগোপনে কিংবা গা ঢাকা দিয়েছিলেন, তারাও এখন মাঠে নানা তৎপরতা দেখাচ্ছেন।গুলশান কার্যালয়ে থাকা বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান বেগম সেলিমা রহমান বলেন, ২০-দলীয় জোটনেত্রী অবরুদ্ধ। অবরুদ্ধ গোটা দেশ। এ অবস্থা থেকে উত্তরণে নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে জাতীয় নির্বাচনের দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত বেগম জিয়া সবাইকে সর্বাত্মক শক্তি নিয়োগ করতে বলেছেন। চেয়ারপারসনের এই ফোনকল নেতা-কর্মীদের মনোবল অনেক বাড়িয়ে দিয়েছে। আন্দোলনে তারা আগের চেয়ে অনেক উজ্জীবিত। এর প্রমাণও মিলছে বলে তিনি জানান।
Discussion about this post