নিজস্ব প্রতিবেদক: রাজধানীর মতিঝিলে ১০ লাখ টাকা ছিনতাইয়ের ঘটনায় বংশাল থানা পুলিশের কনস্টেবল আল মামুনসহ তিনজনের বিরুদ্ধে ছিনতাইয়ের শিকার আবুল কালাম আজাদ বাদী হয়ে মামলা করেছেন। মামলার অন্য আসামির একজনের নাম জিতু, তবে আরেকজন অজ্ঞাতনামা।
বুধবার দিবাগত রাত ১টার দিকে মতিঝিল থানায় এই মামলা করা হয়। ছিনতাইয়ের অভিযোগে মামলা নম্বর-৮।
আজ বৃহস্পতিবার সকালে মতিঝিল থানার ডিউটি অফিসার এসআই হাফিজ গণমাধ্যমকে জানান, এ মামলায় বংশাল থানা পুলিশের কনস্টেবল আল মামুনসহ জিতু নামে এক ব্যক্তি এবং এক অজ্ঞাতনামার বিরুদ্ধে অভিযোগের সত্যতা যাচাইয়ে ইতিমধ্যে কাজ করছে পুলিশ।
এদিকে অভিযুক্ত পুলিশ কনস্টেবল আল মামুন জানান, ছিনতাই নয়, আবুল কালাম আজাদের পাওনা টাকা তুলে দিতে গিয়েছিলেন তিনি।
উল্লেখ্য, স্থানীয় ও প্রত্যক্ষদর্শীদের বিবৃতি মতে, বুধবার বিকাল সাড়ে ৩টার দিকে মতিঝিল এনআরবিসি ব্যাংক থেকে টাকা তুলে মোহামেডান ক্লাবের সামনের সড়কে এলে তিনজন পুলিশ পরিচয় দিয়ে ব্যবসায়ী আবুল কালাম আজাদের কাছ থেকে টাকার ব্যাগ ছিনিয়ে নিতে চান। এতে বাধা দিলে মামুন তার হাতে থাকা হ্যান্ডকাপ দিয়ে আজাদের মাথায় আঘাত করেন। পরে টাকার ব্যাগ নিয়ে পালানোর সময় জনতা দুজনকে ধরে ফেললেও একজন পালিয়ে যান।
মতিঝিল থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) মনির হোসেন মোল্লা বলেন, অভিযুক্ত পুলিশ কনস্টেবল বর্তমানে বংশাল থানায় কর্মরত। পাওনা টাকা তুলে দেয়ার কথা বললেও প্রাথমিক তদন্তে এখনও মামুনের বক্তব্যের সত্যতা পাইনি আমরা। তবে পুরো বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
এদিকে উদ্ধারকৃত টাকার মোট পরিমাণ ১০ লাখ ৫৫ হাজার টাকা বলে জানিয়েছেন মতিঝিল থানার ওসি ওমর ফারুক। তাই টাকাটির উৎস বিষয়ে আমরা খোঁজখবর নিয়েছি। এ টাকা হুন্ডি মারফত এলো কিনা তাও তদন্ত করেছি। তদন্ত প্রমাণে তা হুন্ডির নয় বলে প্রমাণিত হয়েছে।
অভিযুক্ত আল মামুন পুলিশের গাড়িচালক বলে জানিয়েছেন মতিঝিল থানার কয়েকজন কর্মকর্তা। তারা জানান, কিছুদিন আগে তিনি বংশাল থানায় বদলি হয়েছেন। এর আগে তিনি মতিঝিল থানায় তিন বছর চাকরি করেছেন। তাই মতিঝিলে তার পরিচিতি ও প্রভাব রয়েছে।
ছিনতাইয়ের শিকার আবুল কালাম আজাদ বলেন, ছিনতাই ঘটনার পর সকলকে থানায় নিয়ে আসা হলো। থানায় এসে দেখি মামুনকে সবাই চেনে। ওসি মামুনকে লকাপে না ঢুকিয়ে তার কক্ষে বসিয়ে রাখেন। এরপর শুরু হলো, টাকার উৎস সম্পর্কে। কে দিয়েছে, কার টাকা, এতো টাকা তুলে একা যাচ্ছিলে কেন? এটি হুন্ডির টাকা নয়তো? ইত্যাদি প্রশ্ন করা হয়। আমি বলেছি, এই টাকা আমার। আমার ব্যবসায়ীক পার্টির পাঠানো টাকা আমি ব্যাংক থেকে তুলেছি।
এর কিছুক্ষণ পর দেখি, টাকা গুনছে। আমাকে বলা হয়, কত টাকা আছে। আমি বলেছি, ১০ লাখ ৪৫ হাজার। পরে টাকা গণনা করে ১০ লাখ ৫৫ হাজার মিলেছে। আমি আলাদা ১০ হাজার তুলেছিলাম, সেটি বলতে ভুলে গিয়েছিলাম।
টাকার বিষয়ে জানতে চাইলে ওসি ওমর ফারুক বলেন, সে বলে ১০ লাখ ৪৫ হাজার, আর টাকা গণনা করে পাওয়া যায় ১০ লাখ ৫৫ হাজার। এতে সন্দেহ হলে হুন্ডির বিষয়ে জিজ্ঞেস করা হয়েছে। এটি অনেক সময় সত্যও হয়ে থাকে। তবে এক্ষেত্রে হয়নি।
প্রসঙ্গত, বুধবার বিকেল সাড়ে ৩ টার দিকে মতিঝিল এনআরবিসি ব্যাংক থেকে টাকা তুলে মোহামেডান ক্লাবের সামনের সড়কে এলে তিনজন পুলিশ পরিচয় দিয়ে ব্যবসায়ী আবুল কালাম আজাদের কাছ থেকে টাকার ব্যাগ ছিনিয়ে নিতে চায়। এতে বাধা দিলে মামুন তার হাতে থাকা হ্যান্ডকাপ দিয়ে আজাদের মাথায় আঘাত করেন। পরে টাকার ব্যাগ নিয়ে পালানোর সময় জনতা দুইজনকে ধরে ফেললেও একজন পালিয়ে যায়।
ব্যবসায়ী আবুল কালাম আজাদের বাড়ি ব্রাক্ষণবাড়িয়ার বাঞ্চারামপুরে। তিনি মতিঝিল আরামবাগ এলাকায় থাকেন। পল্টনের শখ টাওয়ারে তার ইলেক্ট্রিক সরঞ্জাম ব্যবসার অফিস আছে।
Discussion about this post