
যশোরের উদীচী ট্র্যাজেডির ১৭ বছর পার হলেও ঘাতকদের বিচার হয়নি আজও। দীর্ঘ বছর ধরে নিহত ও আহতের স্বজনরা বিচার দাবি করে আসলেও রাষ্ট্রের কাছ থেকে শুধু আশ্বাস পেয়েছেন তারা। ট্র্যাজেডির বর্ষপূতিতে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী এবারও আশ্বাস দিয়েছেন অ্যাটর্নি জেনারেলের সঙ্গে দেখা করে মামলা দ্রুত নিষ্পত্তির কথা বলবেন।
১৯৯৯ সালের ৬ মার্চ গভীর রাতে যশোর টাউন হল মাঠে উদীচীর দ্বাদশ জাতীয় সম্মেলনের শেষ দিনের সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে পর পর দুটি শক্তিশালী বোমা বিস্ফোরণে নিহত হন ১০ জন। এ ঘটনায় আহত হন আড়াই শতাধিক নিরীহ মানুষ।
উদীচী ট্রাজেডিতে নিহতরা হলেন— নূর ইসলাম, নাজমূল হুদা তপন, সন্ধ্যা রাণী ঘোষ, ইলিয়াস মুন্সী, শাহ আলম বাবুল, বাবুল সূত্রধর, শাহ আলম, বুলু, রতন রায় ও রামকৃষ্ণ। প্রতিবছরের মতো এবারও শহীদদের স্মরণে আলোচনা, স্মরণসভা, শহীদ স্মারকে মোমবাতি প্রজ্জ্বলন কর্মসূচির আয়োজন করা হয়েছে।
যশোর পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) রফিকুল ইসলাম পিন্টু জানান, বর্তমানে মামলাটি উচ্চ আদালতে বিচারাধীন। ২৩ আসামির মধ্যে ২ জন নিহত এবং একজনের স্বাভাবিক মৃত্যু হয়েছে। বাকিরা জামিনে আছেন। মামলাটির বিচার কাজ দ্রুত চালুর জন্য শিগগির অ্যাটর্নি জেনারেল মহোদয়ের সঙ্গে দেখা করে কথা বলা হবে।
জানা যায়, সিআইডির ত্রুটিপূর্ণ চার্জশিটের কারণে ২০০৬ সালের ৩০ মে আদালত থেকে খালাস পেয়ে যায় এই মামলার সব আসামি। পরে সরকার ওই রায়ের বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে আপিল করলে মামলাটি পুনরুজ্জীবিত হলেও আটকে আছে আইনের বেড়াজালে। বিচারের এই দীর্ঘ বিড়ম্বনায় ক্ষুব্ধ যশোরের মানুষ এখন দ্রুত এ মামলা চালু করার দাবি জানান। এত বড় একটি বর্বর ঘটনার বিচার এবং ঘাতকদের শাস্তি না হওয়ায় এক বুক যন্ত্রণা নিয়ে দিন কাটাচ্ছেন বোমা হামলায় আহতরা।
উদীচী ট্র্যাজেডিতে নিহত তপনের বোন নাজমুস সুলতানা বিউটি বলেন, ‘বর্তমান সরকারের আমলে অনেক বিচার হচ্ছে। কিন্তু দীর্ঘদিনেও উদীচী ট্র্যাজেডির বিচার হচ্ছে না। আমার মা বার্ধক্যে পড়েছে। মৃত্যুর আগে সন্তান হত্যার বিচার দেখে যেতে চান। প্রধানমন্ত্রীর কাছে দাবি দ্রুত উদীচী হত্যা মামলার বিচার সম্পন্ন করে দোষীদের সর্বোচ্চ শাস্তি দেয়া হোক।’
নাজমুস সুলতানা বিউটি আরও বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর পক্ষ থেকে আমাদের যে বাড়ি বরাদ্দ দেয়া হয়েছিল সেটি পুলিশ দখল করেছে। আমরা আতঙ্কে আছি। আবার আমরা বাড়িটি ফিরে পেতে চাই।’
উদীচী ট্র্যাজেডিতে দুই পা হারানো নাহিদ বলেন, ‘দুঃসহ যন্ত্রণা নিয়ে বেঁচে আছি। প্রধানমন্ত্রীর কাছে আবেদন হামলাকারীদের বিচার দেখতে চাই।’
বোমা হামলায় এক পা হারানো সুকান্ত দাস বলেন, ‘একের পর এক বছর চলে যাচ্ছে। কিন্তু উদীচী হামলার ঘটনায় জড়িতদের বিচারের মুখোমুখি করা সম্ভব হয়নি। প্রকৃত অপরাধীদের শাস্তি চাই। সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে। এজন্য সরকারের আন্তরিকতা প্রয়োজন। ১৯৯৯ সালে উদীচী ট্র্যাজেডির সময় আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় ছিল। বতর্মানেও আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় রয়েছে। এই সরকারের আমলে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের রায় কার্যকর হয়েছে। তাহলে উদীচী ট্র্যাজেডির বিচার কেন বিলম্বিত। অবিলম্বে উদীচী হত্যাকাণ্ডের বিচার দাবি করছি।’
জেলা উদীচীর সভাপতি ডিএম শাহিদুজ্জামান বলেন, ‘সাংস্কৃতিক সংগঠন হিসেবে রাজনৈতিক শক্তির বিরুদ্ধে আমাদের লড়াই করা সম্ভব নয়। তারপরও উদীচী বোমা হামলার ঘটনার বিচার দাবিতে আমরা সোচ্চার আছি। যশোরের মানুষ হত্যাকাণ্ড মেনে নেয়নি। আমরা প্রকৃত অপরাধীদের শাস্তি দাবি করছি।’




Discussion about this post