ডিজিটাল নিরাপওা আইন, ২০১৮
ডিজিটাল মাধ্যমে প্রকাশিত বা প্রচারিত কোনো তথ্য-উপাত্ত দেশের সংহতি, অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড, নিরাপত্তা, প্রতিরক্ষা, ধর্মীয় মূল্যবোধ বা জন শৃঙ্খলা ক্ষুণ্ণ করলে বা জাতিগত বিদ্বেষ ও ঘৃণা সৃষ্টি করলে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী তা ব্লক বা অপসারণের জন্য টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিটিআরসিকে অনুরোধ করতে পারবে। এক্ষেত্রে পুলিশ পরোয়ানা বা অনুমোদন ছাড়াই তল্লাশি, জব্দ এবং গ্রেপ্তার করতে পারবে। আইনের ১৪টি ধারার অপরাধ হবে অজামিনযোগ্য। নতুন আইনের ১৭ থেকে ৩৮ ধারায় বিভিন্ন অপরাধ ও শাস্তির বিষয় উল্লেখ করা হয়েছে। এতে দেখা গেছে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের ১৭, ১৯, ২১, ২২, ২৩, ২৪, ২৬, ২৭, ২৮, ৩০, ৩১, ৩২, ৩৩ ও ৩৪ ধারাকে জামিন অযোগ্য অপরাধ হিসেবে দেখানো হয়েছে। নতুন আইনের বেশিরভাগ ধারাই জামিন অযোগ্য হলেও এর মধ্যে মানহানির ২৯ ধারাসহ ২০, ২৫ ও ৪৮ ধারার অপরাধে জামিনের বিধান আছে।
আইনে অফিশিয়াল সিক্রেটস অ্যাক্ট যুক্ত করা হয়েছে। ফলে কোনো সরকারি, আধা-সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত বা সংবিধিবদ্ধ সংস্থার অতি গোপনীয় বা গোপনীয় তথ্য-উপাত্ত ধারণ, প্রেরণ বা সংরক্ষণ করা হয়, বা প্রকাশ করে বা কাউকে করতে সহায়তা করে ওই আইন ভঙ্গ করলে এই আইনে সর্বোচ্চ ১৪ বছরের সাজা হতে পারে, ২৫ লাখ টাকা অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ড হতে পারে।
কোনো সরকারি, আধা-সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত বা সংবিধিবদ্ধ সংস্থার অতি গোপনীয় বা গোপনীয় তথ্য-উপাত্ত যদি কম্পিউটার, ডিজিটাল ডিভাইস, ডিজিটাল নেটওয়ার্ক বা অন্য কোন ইলেকট্রনিক মাধ্যমে ধারণ, প্রেরণ বা সংরক্ষণ করা হয়, তাহলে তা গুপ্তচরবৃত্তি বলে গণ্য হবে এবং এজন্য ৫ বছরের কারাদণ্ড বা ১০ লাখ টাকা জরিমানা হতে পারে।
আইন অনুযায়ী ডিজিটাল মাধ্যমে মুক্তিযুদ্ধ বা মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বা জাতির পিতার নামে প্রোপাগান্ডা বা প্রচারণা চালালে বা মদদ দিলে অনধিক ১০ বছরের কারাদণ্ড বা এক কোটি টাকা জরিমানা অথবা উভয় দণ্ড হতে পারে।
• ডিজিটাল মাধ্যম ব্যবহার করে আক্রমণাত্মক, মিথ্যা, ভীতি প্রদর্শক তথ্য-উপাত্ত প্রকাশ, মানহানিকর তথ্য প্রকাশ, ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত, আইনশৃঙ্খলার অবনতি ঘটানো, ঘৃণা প্রকাশ, অনুমতি ছাড়া ব্যক্তিগত তথ্য সংগ্রহ, প্রকাশ বা ব্যবহার করলে জেল জরিমানার বিধান রয়েছে। এসব ক্ষেত্রে তিন থেকে সাত সাত বছরের কারাদণ্ড, জরিমানা বা উভয় দণ্ড হতে পারে। দ্বিতীয়বার এরকম অপরাধ করলে ১০ বছরের কারাদণ্ড হতে পারে।
• ডিজিটাল মাধ্যম ব্যবহার করে প্রতারণা করলে অনধিক ৫ বছরের কারাদণ্ড, ৫ লাখ টাকা জরিমানা বা উভয়দণ্ড হতে পারে।
•কম্পিউটার হ্যাকিংয়ের বিষয়েও বিধান রয়েছে এই আইনে। সেখানে ১৫ ধারায় বলা হয়েছে, কম্পিউটার, কম্পিউটার প্রোগ্রাম. কম্পিউটার সিস্টেম বা কম্পিউটার নেটওয়ার্ক বা ডিভাইস, ডিজিটাল সিস্টেম বা ডিজিটাল নেটওয়ার্কে প্রবেশাধিকার ব্যাহত করে, এমন ডিজিটাল সন্ত্রাসী কাজের জন্য অপরাধী হবেন এবং এজন্য অনধিক ১৪ বছর কারাদণ্ড অথবা এনধিক এক কোটি অর্থদণ্ড অথবা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হবে।
• ছবি বিকৃতি বা অসৎ উদ্দেশ্যে ইচ্ছেকৃতভাবে বা অজ্ঞাতসারে কারো ব্যক্তিগত ছবি তোলা, প্রকাশ করা বা বিকৃত করা বা ধারণ করার মতো অপরাধ করলে পাঁচ বছরের কারাদণ্ড হতে পারে। ইন্টারনেটে পর্নগ্রাফি ও শিশু পর্নগ্রাফির অপরাধে সাত বছর কারাদণ্ড বা পাঁচ লাখ টাকা জরিমানা বা উভয় দণ্ড হতে পারে।
• কোন ব্যাংক, বীমা বা আর্থিক সেবা প্রতিষ্ঠান থেকে কোন ইলেকট্রনিক বা ডিজিটাল মাধ্যম ব্যবহার করে আইনানুগ কর্তৃত্ব ছাড়া অনলাইন লেনদেন করলে পাঁচ বছরের কারাদণ্ড, পাঁচ লাখ টাকা জরিমানা বা উভয় দণ্ড হতে পারে।
• বাংলাদেশ বা বিশ্বের যেকোনো দেশে বসে বাংলাদেশের কোন নাগরিক যদি এই আইন লঙ্ঘন করেন, তাহলেই তার বিরুদ্ধে এই আইনে বিচার করা যাবে। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের বিচার হবে বিশেষ ট্রাইব্যুনালে।
• ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের বিচার হবে বিশেষ ট্রাইব্যুনালে। অভিযোগ গঠনের ১৮০ কার্যদিবসের মধ্যে মামলার নিষ্পত্তি করতে হবে। তবে এর মধ্যে করা সম্ভব না হলে সর্বোচ্চ ৯০ কার্যদিবস পর্যন্ত বাড়ানো যাবে।
কিভাবে ও কোথায় মামলা দায়ের করতে হয়?
আপনার মামলা করার কারণ উদ্ভব হলে নিকটস্থ থানায় গিয়ে তা জিডি বা FIR এর মাধ্যমে জানাতে হবে। থানা বিষয়টি তদন্ত করে দেখবে এবং যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করবে এবং বিষয়টি আদালতের নিকট প্রেরণ করবে। অন্যদিকে থানা অভিযোগটি গ্রহণে অপারগতা প্রকাশ করলে একজন বিজ্ঞ আইনজীবীর মাধ্যমে আদালতের নিকট পেশ করে বিচার চাইতে পারেন।
আদালত/ ট্রাইবুনালঃ
এই আইনের বিচার হবে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি আইন, ২০০৬ এর ধারা ৬৮ এর অধীন গঠিত সাইবার ট্রাইবুনালে। উল্লেখ্য সারাদেশে এখন পর্যন্ত একটাই ট্রাইবুনাল আছে যা ঢাকাতে অবস্থিত। এই ট্রাইবুনালে বিচারক হবেন একজন দায়রা জজ বা অতিরিক্ত দায়রা জজ।
আইনি প্রক্রিয়াঃ
এই আইন ফৌজদারি কার্যবিধি অনুসরণ করলেও ধারা ৪৮- ডিজিটাল নিরাপওা আইন, ২০১৮ অনুযায়ী কোনো পুলিশ অফিসারের রিপোর্ট ব্যাতিত আদালত এই আইনের অধীন বিচার করবে না।
আপনি যদি মনে করেন এই আইনের অধীনে কোন অপরাধ আপনার সাথে হচ্ছে বা হয়েছে তবে আপনি অতিসত্বর আপনার নিকটস্থ থানায় গিয়ে সাধারণ ডায়েরি করুন। যেমন আপনার আইডি হ্যাক করেছে, আপনি অ্যাকাউন্টে লগ-ইন করতে পারছেন না কিন্তু আপনাকে অ্যাক্টিভ দেখাচ্ছে, কিংবা আপনার ছবি ব্যবহার করে একই বা ভিন্ন নামে ফেইক এ্যাকাউন্ট খুলেছে, আপনার অনুমতি ছাড়া আপনার ছবি সম্মানহানির জন্য অন্য কোনো মাধ্যমে ছড়িয়েছে বা আপনার ব্যাক্তিগত ছবি বা তথ্য নিয়ে ব্ল্যাকমেইল করছে। আপনি অতিদ্রুত তথ্যগুলোর যতোটা সম্ভব বৃওান্ত রেকর্ড করে রাখুন এবং নিকটস্থ থানায় গিয়ে এজাহার দায়ের করুন।
Discussion about this post