সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সহকারী শিক্ষক নিয়োগে নারী ও পোষ্য কোটা বাতিল করে এবং আগের বিজ্ঞপ্তি বাদ দিয়ে পুনরায় বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করার নির্দেশনা চেয়ে হাইকোর্টে রিট আবেদন করা হয়েছে।সোমবার (১৬ নভেম্বর) সহকারী শিক্ষক পদের প্রার্থী মো. তারেক রহমানের পক্ষে হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখায় রিট দায়ের করেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী একলাছ উদ্দিন ভূঁইয়া এই রিট করেন। জনস্বার্থে রিট আবেদন করা হয়েছে বলে তিনি গণমাধ্যমকে নিশ্চিত করেছেন।
রিটে মন্ত্রিপরিষদ সচিব, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিব ও জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব এবং প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতরের মহাপরিচালকসহ (ডিজি) পাঁচজনকে বিবাদী করা হয়েছে। দ্রুত সময়ের মধ্যেই রিট আবেদনটি শুনানির জন্যে হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট বেঞ্চে উপস্থাপন করা হবে বলেও জানান আইনজীবী।
রিট আবেদনে বলা হয়েছে, গত ১৮ অক্টোবর প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতর সহকারী শিক্ষক নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রচারের পর বিভিন্ন গনমাধ্যম থেকে জানা গেছে যে, শিক্ষা উন্নয়ন প্রকল্প-৪ (পিইডিপি) এর আওতায় প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ৩৫ হাজারের অধিক সহকারী শিক্ষক নেয়া হবে। কিন্তু ২০১৮ সালের ৪ অক্টোবর জনপ্রশাসন মন্ত্রনালয় কোটা প্রথা বাতিল করে।

পরবর্তীতে উদ্দেশ্যমূলকভাবে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা অধিদফতর গত ২০১৪ সালের ৪ এপ্রিল একটি প্রজ্ঞাপন জারি করে ৬০ শতাংশ নারী, ২০ শতাংশ পোষ্য কোটা এবং পুরুষ প্রার্থীদের জন্য ২০ শতাংশ কোটা নির্ধারণ করে প্রজ্ঞাপন জারি করে। তারা তাদের নিজেদের স্বার্থে উক্ত প্রজ্ঞাপনের অষ্টম অনুচ্ছেদে বিষয়টি উল্লেখ করে। যা জনপ্রশাসন মন্ত্রনালয় ২০১৮ সালের ৪ জুলাই কোটা বাতিল সংক্রান্ত পরিপত্র ও সংবিধানের ২৭, ২৯ ও ৩১ অনুচ্ছেদের পরিপন্থি।
রিটকারীর আইনজীবী জানান, ‘যারা প্রাথমিক বিদ্যালয়ে চাকরি করছেন তাদের ক্ষেত্রে ২০ শতাংশ পোষ্য কোটা রাখা হয়েছে। অথচ অন্য কোনো অনগ্রসর কিংবা প্রতিবন্ধীদের বিষয়ে কিছুই উল্লেখ নেই। উক্ত কোটা বন্টনের ফলে সমাজের নিম্ন শ্রেনীর তথা দিনমজুর, শ্রমিক, রিক্সাচালক, কৃষকের সরকারি চাকরি প্রত্যাশী সন্তানদের সাথে বৈষম্যমূলক আচরণ করা হবে। যা তাদেরকে প্রজাতন্ত্রের কর্মে নিয়োগ লাভের অধিকার থেকে বঞ্চিত করে।’কোটা বাতিলের বিষয়ে সঠিক প্রতিকার না পেলে দরখাস্তকারীসহ লক্ষ লক্ষ শিক্ষিত বেকার যুবক চাকরি থেকে বঞ্চিত হবে বলেও রিটে উল্লেখ করা হয়েছে।
এর আগে ২০১০ সালের ২৫ অক্টোবর জারিকৃত বৈষম্যমূলক নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি স্থগিত করে পুনরায় সংশোধিত বিজ্ঞপ্তি প্রচারের জন্য একটি আইনি নোটিশ পাঠানো হয়েছিল। কিন্তু সেই নোটিশের কোনো জবাব না পেয়ে হাইকোর্টে উক্ত রিট দায়ের করা হয়।সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সহকারী শিক্ষক নিয়োগে নারী ও পোষ্য কোটা বাতিল করে এবং আগের বিজ্ঞপ্তি বাদ দিয়ে পুনরায় বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করার জন্য সরকারকে লিগ্যাল নোটিশ পাঠানো হয়েছে। ২৫ অক্টোবর ছাত্র অধিকার পরিষদের যুগ্ম-আহ্বায়ক ও সহকারী শিক্ষক পদে আবেদনকারী প্রার্থী মো. তারেক রহমানের পক্ষে জনস্বার্থে নোটিশ পাঠান আইনজীবী একলাস উদ্দিন ভূঁইয়া। ওই নোটিশের পর কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ না করায় রিট আবেদন করা হয়েছে।
আইনজীবী বলেন, ‘সরকারি চাকরিতে কোটা বাতিল নিয়ে আমাদের শিক্ষার্থীরা আন্দোলন করে আসছেন। এরই পরিপ্রেক্ষিতে প্রধানমন্ত্রী সংসদে কোনো কোটাই থাকছে না বলে ঘোষণা দিয়েছিলেন।
কিন্তু সম্প্রতি প্রাথমিকের শিক্ষক নিয়োগের ক্ষেত্রে নারী ৬০ শতাংশ আর ২০ শতাংশ পোষ্য কোটার কথা উল্লেখ করা হয়েছে। আর বাকি ২০ শতাংশ সাধারণের জন্য। সে কারণে প্রার্থী হিসেবে মো. তারেক রহমান সংক্ষুব্ধ।’ছাত্র অধিকার পরিষদের যুগ্ম-আহ্বায়ক মো. তারেক রহমানের বরাত দিয়ে আইনজীবী আরও বলেন, ‘এই নিয়োগে ৬০ শতাংশ নারী এবং ২০ শতাংশ পোষ্য কোটা থাকার পর মাত্র ২০ শতাংশ ছেলেদের জন্য থাকছে। এভাবে বিশাল একটি জনগোষ্ঠীকে বঞ্চিত করা হচ্ছে। এজন্য আমি আইনি প্রতিকার চাওয়ার জন্যে রিট করেছি।’
Discussion about this post