ম্যাজিস্ট্রেট আদালত সম্পর্কে বিস্তারিত
ম্যাজিস্ট্রেট আদালত সম্পর্কে বিস্তারিত আমরা অনেকেই জানিনা, চলুন আমরা জানার চেষ্টা করবো (১) ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের প্রকার (২) ম্যাজিস্ট্রেট আদালত কোন গুলো (৩) কোন গুলো জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট (৪) কোন গুলো নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেট (৫)ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের এখতিয়ার (৬) নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের ক্ষমতা ইত্যাদি সম্পর্কে। চলুন দেখে নেওয়া যাক।
ম্যাজিস্ট্রেট আদালত এর প্রকারঃ-
সুপ্রীম কোর্ট এবং বিশেষ আইনে গঠিত ফৌজদারী আদালত ব্যতীত দুই শ্রেনীর ফৌজদারী আদালত রয়েছে। যথা- (১) দায়রা আদালতসমূহ (২) ম্যাজিস্ট্রেট আদালতসমূহ
ফৌজদারী কার্যবিধির ধারা-৬ অনুযায়ী ফৌজদারী আদালতের শ্রেণীবিভাগ সম্পর্কে আলোচনা করা হয়েছে। এখানে বলা হয়েছে,উচ্চ আদালত[সুপ্রীম কোর্ট] ব্যতীত দুই শ্রেনীর ফৌজদারী আদালত রয়েছে। (১) দায়রা আদালতসমূহ (২)ম্যাজিস্ট্রেট আদালতসমূহ
ম্যাজিস্ট্রেট দুই প্রকার। যথা-(১) জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট (২) নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট
জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটদেরকে জুডিশিয়াল সার্ভিস কমিশন নিয়োগ দিয়ে থাকে। আর নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটরা পাবলিক সার্ভিস কমিশনের মাধ্যমে নিয়োগ পেয়ে থাকেন।
ম্যাজিস্ট্রেট আদালতঃ
- জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট
১) চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত,
২) অতিরিক্ত চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত,
৩) প্রথম শ্রেণীর ম্যাজিস্ট্রেট আদাল
৪) দ্বিতীয় শ্রেণীর ম্যাজিস্ট্রেট আদালত
৫) তৃতীয় শ্রেণীর ম্যাজিস্ট্রেট আদালত
মেট্রোপলিটন এলাকার জন্যঃ
১) চীফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট
২) অতিরিক্ত চীফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট
৩) মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট
নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটঃ-
নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রে কোড অফ ক্রিমিনাল প্রসিডউর ১৮৯৮, পেনাল কোড ১৮৬০, পুলিশ রেগুলেশন ১৯৪৩ এবং অন্য আরও অপরাধ দমন আইনের বিভিন্ন ধারা কর্তৃক তাদেরকে নানা ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে।
বাংলাদেশের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটগণ আইন রক্ষা, নির্দেশদান, বিভিন্ন সামাজিক সমস্যায় (যেমন খাদ্যে ভেজাল, ইভটিজিং, মাদকদ্রব্য চোরাচালান, সরকারি সম্পত্তি বেদখল) সামাজিক সুবিচার নিশ্চিত করার লক্ষ্যে মোবাইল কোর্ট বা ভ্রাম্যমাণ আদালত (মোবাইল কোর্ট আইন ২০০৯, ধারা ৫) গঠনের ক্ষমতা রাখেন।
বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিস এর প্রশাসন ক্যাডারগণই নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট হন। নির্বাহী বিভাগের প্রধান অঙ্গ হল নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট।কর্মক্ষেত্রে তারা সীমিত বিচারিক ক্ষমতা ভোগ করেন।
বিভিন্ন ধরনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটঃ-
প্রতিটি প্রাশাসনিক জেলায় নিম্নলিখিত নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটগণ থাকবেনঃ-
(১) জেলা ম্যাজিস্ট্রেটঃ-
প্রতিটি জেলা ও প্রতিটি মেট্রোপলিটন এলাকায় সরকার প্রয়োজন অনুযায়ী উপযুক্ত সংখ্যক নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট নিয়োগ করবেন এবং তাদের একজনকে জেলা ম্যাজিস্ট্রেট হিসেবে নিয়োগ করবেন।
(২) অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট
সরকার যে কোন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটকে অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট হিসেবে নিযুক্ত করতে পারবেন এবং এই কোড অনুসারে বা অন্য কোন আইন অনুযায়ী অথবা সরকারের নির্দেশমত অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেটের একজন জেলা ম্যাজিস্ট্রেটের পূর্ণ অথবা আংশিক ক্ষমতা থাকবে।
(৩) অতিরিক্ত ডেপুটি কমিশনার
জেলার সকল অতিরিক্ত ডেপুটি কমিশনারই নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট।
(৪) উপজেলা নির্বাহী অফিসার
উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা।
(৫)সহকারী কমিশনার
জ্যেষ্ঠ সহকারী কমিশনার ও সহকারী কমিশনার।
ম্যাজিস্ট্রেট আদালত এর এখতিয়ারঃ-
ম্যাজিস্ট্রেট আদালত দুই ভাবে পরিচিত । যেমন:- মেট্রোপলিটন এলাকার ম্যাজিস্ট্রেট এবং মেট্রোপলিটন এলাকার বাহিরের ম্যাজিস্ট্রেট।
মেট্রোপলিটন এলাকায় ম্যাজিস্ট্রেট এর শ্রেণিবিভাগ নিন্মরুপ:-
১। চীফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট (সিএমএম)
২। অতিরিক্ত চীফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট
৩। মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট
বিদ্র:- মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেটরা প্রথম শ্রেনীর ম্যাজিস্ট্রেট হিসেবে গণ্য হবেন।
মহানগর এলাকার বাহিরের ম্যাজিস্ট্রেট
মেট্রোপলিটন বা মহানগর এলাকার বাহিরের ম্যাজিস্ট্রেটরা নিন্ম শ্রেনীতে বিভক্ত :-
১। চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট
২। অতিরিক্ত চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট
৩। সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট
৪। জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট
বিদ্র:- জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট বলতে সেকেন্ড ক্লাস এবং থার্ডক্লাশ ম্যাজিস্ট্রেটকে বোঝানো হয়েছে।
জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট এর এখতিয়ার ও ক্ষমতা
জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট এর এখতিয়ার ও ক্ষমতা:- (ধারা-৩২)
১। মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট ও প্রথম শ্রেণির ম্যাজিস্ট্রেট :- নির্জন কারাবস সহ ৫ বছরের অনধিক কারাদন্ড দিতে পারবেন এবং ১০ হাজার টাকা জরিমানা করতে পারবেন।
২। সেকেন্ড ক্লাস ম্যাজিস্ট্রেট :- নির্জন কারাবাস সহ ৩ বছরের কারাদন্ড এবং অনধিক ৫ হাজার টাকা জরিমানা।
৩। থার্ডক্লাশ ম্যাজিস্ট্রেট :- অনধিক ২ বছরের সাজা এবং ২ হাজার টাকা জরিমানা।
কোন আসামী যদি জরিমানার টাকা দিতে না চান সেক্ষেত্রে ম্যাজিস্ট্রেট টাকা অনাদায়ের জন্য আসামিকে দণ্ডদানের তার যে ক্ষমতা আছে তার এক-চতুথাংশের বেশি হবে না। (ধারা-৩৩)

পরিশেষে বলা যায় যে ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের সম্পর্কে আমরা অনেকেই জানিনা । ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের প্রকার এবং কোন গুলো, কোন গুলো জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট , কোন গুলো নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেট,ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের এখতিয়ার , নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের ক্ষমতা ইত্যাদি সম্পর্কে একজন আইনজীবী ও আইনের ছাত্র সহ সকল জনসাধারণের জানা দরকার । বিশেষ করে আইনের ছাত্র এবং আইনজীবী এই সম্পর্কে না জানলে সে কখনো ভালো আইনজীবী হতে পারবে না এবং কোর্ট সম্পর্কে কোন ধারণা পাবেনা তাই সকলের কোর্ট সম্পর্কে জেনে রাখা সকলের জন্য জরূরী।
লেখকঃ ল ফর ন্যাশনস, ইমেইলঃ lawfornations.abm@gmail.com, মোবাইল: 01842459590.
আইন কি? আইন সম্পর্কে বিস্তারিত ধারণা সম্পর্কে আরও বিস্তারিত পড়ুন
আরো জানতে পড়ুন বাংলাদেশের আদালত ব্যবস্থার ঐতিহাসিক বিকাশ সম্পর্কে বিস্তারিত
জেলা জজ ও ম্যাজিস্ট্রেট আদালত খোলা রাখার সিদ্ধান্ত সম্পর্কে পড়ুন
Discussion about this post