বিকল্প বিরোধ নিস্পত্তি কি
বিকল্প বিরোধ নিস্পত্তি বা ADR হলো এমন একটা পদ্ধতি, যার মাধ্যমে মধ্যস্থতাকারী ব্যক্তির উপস্থিতিতে আদালতের ভেতরে বা বাইরে বসে বিরোধ নিষ্পত্তি করা । এডিআরের মাধ্যমে একটি মামলা নিষ্পত্তি হতে সময় লাগে ৯০ দিন।
বিকল্প বিরোধ নিষ্পত্তি আইন
বিকল্প বিরোধ-নিষ্পত্তির পদ্ধতি প্রয়োগে মধ্যস্থতা ও সালিশির মাধ্যমে দেওয়ানি মামলা নিষ্পত্তির জন্য দেওয়ানি কার্যবিধি (সংশোধনী) আইন, ২০০৩ বলে দেওয়ানি কার্যবিধিতে ৮৯ক ও ৮৯খ ধারা দুটির বিধান সংযোজিত হয়েছে।
দেওয়ানি কার্যবিধির ৮৯খ ধারার বিধানে বিরোধ বা বিরোধগুলো সালিশের কাছে পাঠানোর জন্য সংশ্লিষ্ট পক্ষগুলোর আবেদনের ভিত্তিতে দেওয়ানি আদালতকে মামলা প্রত্যাহারের অনুমতি দেয়ার ক্ষমতা দেয়া হয়েছে।
অর্থঋণ আদালতগুলোতে বিচারের অপেক্ষায় থাকা অর্থলগ্নি প্রতিষ্ঠানগুলোর পাওনা ঋণ আদায়ের মামলাগুলো এর আওতার বাইরে রাখা হয়েছে।তবে নতুন করে সংবিধিবদ্ধ অর্থঋণ আদালত আইন ২০০৩ সালের ৫ম অধ্যায়ে ফয়সালামূলক বৈঠক ও মধ্যস্থতার মাধ্যমে বিকল্প বিরোধ-নিষ্পত্তির ব্যবস্থা রাখা হয়েছে।

বিধিমালা
দেওয়ানি কার্যবিধির নতুন সংযোজিত ৮৯ক ধারার বিধানে বলা হয়েছে, দেওয়ানি আদালতকে মামলায় লিখিত বক্তব্য পেশ হবার পর প্রতিদ্বন্দ্বী পক্ষগণ স্ব-শরীরে বা উকিলের মাধ্যমে আদালতে উপস্থিত হয়ে মধ্যস্থতার মাধ্যমে নিষ্পত্তির জন্য মামলার শুনানী মূলতবী করে মামলার বিরোধ মধ্যস্থতা করা বা পক্ষগুলোর নিয়োজিত উকিলের কাছে বা উকিল নিয়োগ করা না থাকলে পক্ষ বা পক্ষগুলোর কাছে অথবা স্থানীয় আইনজীবী সমিতির সঙ্গে পরমর্শক্রমে জেলা জজ প্রণীত প্যানেলের মধ্য থেকে একজন মধ্যস্থতাকারীর কাছে পাঠানোর ক্ষমতা দেয়া হয়েছে।
একটি দরখাস্ত সালিশি আইন, ২০০১-এর ৯ ধারার অধীনে একটি সালিশ চুক্তি বলে গণ্য হবে। কোনো ধরনের সালিশ না হলে কিম্বা সালিশ ব্যর্থ হলে ইতোপূর্বে প্রত্যাহূত মামলাটি নতুন করে রুজু করার অধিকার সংশ্লিষ্ট পক্ষগুলোর থাকবে। আপীল মামলার ক্ষেত্রেও অনুরূপ মধ্যস্থতার ব্যবস্থা করে দেওয়ানি কার্যবিধি (সংশোধনী) আইন, ২০০৬ এর মাধ্যমে ৮৯ গ ধারা উক্ত কার্যবিধিতে সংযোজিত করা হয়েছে।
মক্কেলদের সম্মতিক্রমে বিরোধ নিষ্পত্তির জন্য একজন নিরপেক্ষ উকিল যেমন একজন অবসরপ্রাপ্ত জজ অথবা জেলা জজ প্রণীত নামের প্যানেল থেকে একজন মধ্যস্থতাকারী বা উপযুক্ত অপর যেকোন ব্যক্তিকে নিয়োগ করবেন।
মধ্যস্থতার জন্য মামলাটি পাঠানোর তারিখ থেকে ১০ দিনের মধ্যে তাদের আদালতকে জানাতে হবে, এবং আদালতকে জানানোর তারিখ থেকে ৬০ দিনের মধ্যে মধ্যস্থতার কাজ সম্পূর্ণ করতে হবে যদি না আদালত এই মোকদ্দমাটির মেয়াদ আরও ৩০ দিন বাড়িয়ে দেন।
মধ্যস্থতা ও কার্যক্রমের ফলাফল সম্পর্কে আদালতের কাছে রিপোর্ট পেশ করবেন এবং ফলাফল যদি মামলার বিরোধগুলোর আপোষ নিষ্পত্তি হয়ে যায় তাহলে আপোষের শর্তাবলি একটি চুক্তির আকারে লিপিবদ্ধ করতে হবে।
চুক্তিতে সংশ্লিষ্ট পক্ষগণ স্বাক্ষর করবে এবং মধ্যস্থতাকারী ও উকিলরা তা সত্যায়িত করবেন।অতঃপর আদালত সেই চুক্তির ভিত্তিতে আদেশ বা ডিক্রি জারী করবেন।মধ্যস্থতার কার্যক্রম গোপন থাকবে এবং মধ্যস্থতা চলাকালে এমন যেকোন যোগাযোগ বা সংলাপ প্রকাশ না করার বিশেষ অধিকার হিসেবে গণ্য হবে এবং একই মামলার পরবর্তী কোনো শুনানীতে বা অপর কোনো কার্যক্রম উল্লেখ করা যাবে না ও সাক্ষ্য প্রমাণ হিসেবে গ্রহণযোগ্যতা পাবে না।
মধ্যস্থতার মাধ্যমে আপোষ নিষ্পত্তি অনুযায়ী আদালতের দেয়া কোনো আদেশ বা ডিক্রির বিরুদ্ধে কোনরকম আপীল করা বা পর্যালোচনার আবেদন করা যাবে না।
বিকল্প বিরোধ নিষ্পত্তি মানে মামলা বা বিরোধ নিষ্পত্তির ক্ষেত্রে আনুষ্ঠানিক বা উপানুষ্ঠানিক পদ্ধতি ব্যবহার না করা |এটা আদালতের বাইরে “বিকল্প বিরোধ নিষ্পত্তি” পদ্ধতির ব্যবহার |

এটা হতে পারে conciliation (পারস্পরিক আলোচনার মাধ্যমে নিষ্পত্তি ) বা mediation (তৃতীয় পক্ষের মাধ্যমে নিষ্পত্তি) বা arbitration (arbitrator দ্বারা arbitration award এর মাধ্যমে নিষ্পত্তি) |
বিকল্প বিরোধ নিষ্পত্তি বলতে আমাদের দেওয়ানি আইনে mediation (তৃতীয় পক্ষের মাধ্যমে নিষ্পত্তি) বা arbitration (arbitrator দ্বারা arbitration award এর মাধ্যমে নিষ্পত্তি) বুঝানো হয়েছে ।
লেখকঃ ল ফর ন্যাশনস, ইমেইলঃ lawfornations.abm@gmail.com, মোবাইল: 01842459590
Discussion about this post