ডেস্ক রিপোর্ট
বিশিষ্ট সাংবাদিক ও প্রথম আলোর যুগ্ম সম্পাদক মিজানুর রহমান খানের মৃত্যুতে তার পরিবার ও গণস্বাস্থ্য নগর হাসপাতালের পক্ষ থেকে পাল্টাপাল্টি অভিযোগ করা হয়েছে। বিষয়টি নিয়ে মঙ্গলবার (১২ জানুয়ারি) জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে মিজানুর রহমান খানের জানাজায় উভয় পক্ষের মাঝে উত্তেজনা দেখা গেছে। এ সময় হাতাহাতির উপক্রমও হয়েছে।
জানাজা শুরুর আগে বক্তৃতায় মিজানুর রহমান খানের ভাই সিদ্দিকুর রহমান অভিযোগ করে বলেন, ‘গণস্বাস্থ্য নগর হাসপাতালের অবহেলার কারণেই আমার ভাই মিজানুর রহমান খানের মৃত্যু হয়েছে। কিন্তু এরপরও আমরা কোনও অভিযোগ করছি না।

মিজানুর রহমান খানের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে আসেন ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী
জানাজা শেষে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদনের সময় গণস্বাস্থ্য নগর হাসপাতালের প্রতিষ্ঠাতা ও ট্রাস্টি জাফরুল্লাহ চৌধুরীকে দেখে জাতীয় প্রেসক্লাবের যুগ্ম সম্পাদক মাইনুল আলম মাইকে বলেন, ‘গণস্বাস্থ্যের বিরুদ্ধে মিজানুর রহমান খানের চিকিৎসায় অবহেলার অভিযোগ এসেছে। আমরা আশা করি আপনারা ভবিষ্যতে আরও দায়িত্বশীলতা ও সাবধানতা অবলম্বন করবেন।’
জবাবে জাফরুল্লাহ চৌধুরী এগিয়ে এসে মাইনুল আলমকে বলেন, ‘আপনারা জানেন না। না বুঝে কথা বলবেন না। যা বলবেন বুঝে শুনে কথা বলবেন।’
মিজানুর রহমান খানের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে আসেন ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী
এ সময় তিনি উল্টো অভিযোগ করে বলেন, ‘মিজানুর রহমান খানের হত্যাকারী তারই ভাই মশিউর রহমান খান।’ এ সময় জাফরুল্লাহ চৌধুরীর এ বক্তব্য মাইকে মৃদু শব্দের মাধ্যমে সবার নজরে আসে।এর পরপরই পরিস্থিতি উত্তপ্ত হতে থাকে।
এ সময় সিদ্দিকুর রহমানকে জাফরুল্লাহর দিকে তেড়ে আসতেও দেখা গেছে। পাশাপাশি জাফরুল্লাহর সঙ্গে থাকা লোকজনকেও উত্তেজিত বাক্য ব্যবহার করতে দেখা গেছে।এ সময় জাফরুল্লাহ চৌধুরীও উপস্থিত সাংবাদিকদের তোপের মুখে পড়েন। পরে গণমাধ্যমকর্মীদের সহযোগিতায় তিনি প্রেসক্লাব ত্যাগ করেন।

পরে মিজানুর রহমান খানের ভাই মশিউর রহমান খান সাংবাদিকদের বলেন, ‘গণস্বাস্থ্যে আমার ভাই ভর্তি ছিলেন। আমরা তাদের চিকিৎসা ও সার্বিক ব্যবস্থাপনায় অসন্তুষ্ট ছিলাম। এজন্য আমরা হাসপাতাল চেঞ্জ করেছি। এখন আমার কানে শব্দটা এসেছে যে আমরা হাসপাতাল পরিবর্তন করার কারণে ভুল করেছি, এটা জাফরুল্লাহ স্যার বলতে চেয়েছেন। উনি শ্রদ্ধেয় ব্যক্তিত্ব। আমাদের বিরুদ্ধে তিনি নানান ধরনের অপপ্রচারে লিপ্ত হচ্ছেন। আমরা মনে করি তিনি নিজের বয়স ও অবস্থান বিবেচনা করবেন। আমরাশোকাহত। এর বাইরে আমাদের এখন আর কিছু বলা সম্ভব না।
জাতীয় প্রেস ক্লাবে মিজানুর রহমান খানের প্রতি শ্রদ্ধা
উল্লেখ্য, সোমবার (১১ জানুয়ারি) সন্ধ্যা ৬টা ২০ মিনিটে চিকিৎসকরা মিজানুর রহমান খানকে মৃত ঘোষণা করেন। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৫৩ বছর। গত ডিসেম্বর মাসে তিনি করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হন। এরপর থেকেই ইউনিভার্সেল মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন। শনিবার (৯ জানুয়ারি) সন্ধ্যায় মিজানুর রহমান খানকে লাইফ সাপোর্টে নেওয়া হয়।

মিজানুর রহমান খান
ইউনিভার্সেল মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের (সাবেক আয়েশা মেমোরিয়াল হাসপাতাল) ব্যবস্থাপনা পরিচালক ডা. আশীষ কুমার গণমাধ্যমকে বলেন, শনিবার আমরা তাকে ভেন্টিলেটরে নিই।
তিনি প্রায় এক মাস ধরে চিকিৎসাধীন ছিলেন। তার পোস্ট কোভিড কমপ্লিকেশন দেখা দিয়েছিল। তাতে তার রেস্পায়রেটরি মাসেলগুলোর শক্তি কমে যায়। রেস্পায়রেটরি ড্রাইভ ঠিক না থাকলে শরীরে কার্বন-ডাই অক্সাইডের পরিমাণ বেড়ে যায়। এ কারণে ভেন্টিলেটর দেওয়া ছাড়া উপায় থাকে না। শনিবার থেকে তিনি ভেন্টিলেটরে ছিলেন।
Discussion about this post