ডেস্ক রিপোর্ট
২০১৯ সালে এইচএসসি পাস করেন আবিদা জান্নাত আসমা ওরফে রাইসা (১৮)। ফেসবুকে এক ব্যক্তির সঙ্গে পরিচয়, এরপর গড়ে ওঠে প্রেমের সম্পর্ক। বাবা-মাকে না জানিয়ে পালিয়ে বিয়ে করেন ওই যুবককে। এরপর বিদেশে পড়তে যান। এরইমধ্যে স্বামীর উৎসাহে জঙ্গিবাদে জড়িয়ে পড়েন তিনি।
বৃহস্পতিবার (১৪ জানুয়ারি) জঙ্গিবাদ থেকে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসতে র্যাবের কাছে আত্মসমর্পণ করেছেন বিভিন্ন জঙ্গি সংগঠনের ৯ সক্রিয় সদস্য। আত্মসমর্পণ করা এই জঙ্গিদের মধ্যে একজন এই আবিদা জান্নাত আসমা।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল ও আইজিপি বেনজির আহমেদের কাছে আত্মসমর্পণের পর অনুভূতি জানাতে গিয়ে এই তরুণী বলেন, ‘প্রেমের সূত্র ধরে ২০১৮ সালে পরিবারের অনুমতি ছাড়াই তাকে বিয়ে করি।
পরবর্তীতে পড়াশোনার জন্য দেশের বাইরে চলে চাই। সে সময় আমার স্বামীও আমার সঙ্গে দেশের বাইরে যায়। মূলত এটা তারই পরিকল্পনা অনুযায়ী হয়। কিন্তু আমার পরিবার জানতো না।’

তিনি জানান, ‘ছয় মাসের মতো আমরা দেশের বাইরে ছিলাম। এরপর আবার দেশে ফিরে আসি। দেশে ফিরে আসলেও আমার পরিবার জানতো না। দেশে ফিরে আমি আর আমার স্বামী প্রায় দেড় বছর বিভিন্ন জায়গায় আত্মগোপন করে থাকি।
ওই সময়ই আমি আমার স্বামীর বিষয়ে জানতে পারি যে সে একটি জঙ্গি সংগঠনের সঙ্গে জড়িত। আমি জানার পর আমার স্বামী আমাকেও তার সঙ্গে যোগ দেওয়ার কথা বলে। জঙ্গিবাদে তার কাজে সাহায্য করতে বলে। স্বামীর কথা শুনে আমিও জঙ্গিবাদে জড়িয়ে যাই।’
আসমা বলেন, ‘আমি যে ভুল পথে পা বাড়িয়েছিলাম সেটা আমি ধীরে ধীরে বুঝতে পারি। একটা স্বাভাবিক জীবন না। বাবা-মায়ের আদর-ভালোবাসা-স্নেহ থেকে দূরে সরে এসে অনেক কষ্টে জীবন যাপন করতাম। ধর্মের নামে ভুল ব্যাখ্যা দিয়ে যে মানুষটি আমাকে জীবনসঙ্গী করে নিয়েছিল, সে মানুষটিও অনেক কষ্টে জীবন যাপন করতে থাকে। সমাজ ও পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে আমি মানসিকভাবে ভেঙে পড়ি।
নিজেকে খুব অসহায় লাগতে শুরু করে। একপর্যায়ে আমি ওই পথ থেকে ফিরে আসতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কাছে আত্মসমর্পণ করার সিদ্ধান্ত নেই। বিভিন্ন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে আজ আত্মসমর্পণ করি। এটি সম্ভব হয়েছে র্যাবের সহযোগিতা কারণে।’
দেশের তরুণদের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘আমি অবশেষে বুঝতে পেরেছি, আমি ভুল পথে ছিলাম। আমি চাই না আমার মতো আর কেউ ভুল করুক। এ পথে পা না বাড়িয়ে সবাই যেন সুন্দর ও স্বাভাবিক জীবন যাপন করে।
আমি আমার পলাতক স্বামীকেও ভুল পথ থেকে ফিরে আসার জন্য আহ্বান করছি। সবারই উচিত নিজের আত্মিক ও মানসিক পরিচর্যা করা। নিজের প্রতি নিজের জাজমেন্ট থাকা। কোনও কিছু অন্ধভাবে বিশ্বাস না করা।’
মেয়েকে ফিরে পেয়ে আসমার মা শাহিদা সুলতানা বলেন, ‘আজ আমার মেয়ে আমার কাছে ফিরে এসেছে। আমরা আসমাকে ছোটবেলা থেকেই অনেক ভালোবাসতাম। কিছু দিন আগে জানতে পারি আসমা যাকে পালিয়ে বিয়ে করেছে সে একজন জঙ্গি। সে তাকেও জঙ্গি বানিয়েছিল।
একজন জঙ্গির মা হওয়া অনেক কষ্টের। আমি সব মা-বাবাকে অনুরোধ করবো, আপনারা আপনাদের সন্তানদের প্রতি খেয়াল রাখুন, সময় দিন।’
Discussion about this post