ডেস্ক রিপোর্ট
রাজধানীর কলাবাগানে ‘ও’ লেভেল শিক্ষার্থীকে (১৭) ধর্ষণের পর হত্যা মামলার একমাত্র আসামি ফারদিন ইফতেফার দিহানের (১৮) ডোপটেস্ট সম্পন্ন হয়েছে। এখন দিহানের ডিএনএ ও ভিকটিমের ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন পেলেই মামলার চার্জশিট দাখিল করবে পুলিশ। এজন্য মামলার তদন্ত কর্মকর্তা এই দুটি প্রতিবেদন পাওয়ার জন্য তাগিদও দিয়েছেন।
মঙ্গলবার (২৬ জানুয়ারি) মামলার তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের জন্য দিন ধার্য ছিল। কিন্তু এদিন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা কলাবাগান থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) আ ফ ম আসাদুজ্জামান প্রতিবেদন দাখিল না করে সময়ের আবেদন করেন। ঢাকা মহানগর হাকিম বেগম ইয়াসমিন আরা সময়ের আবেদন মঞ্জুর করে প্রতিবেদন দাখিলের জন্য ১১ ফেব্রুয়ারি দিন ধার্য করেন।
আবেদনে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা উল্লেখ করেন, আসামি ফারদিন ইফতেফার দিহান নিজের দোষ স্বীকার করে ফৌজদারি কার্যবিধি ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি প্রদান করেছে। সংশ্লিষ্ট আদালতের মাধ্যমে আসামির সঠিক নাম-ঠিকানা যাচাই করেছি। আদালতের অনুমতি ও আদেশ মোতাবেক আসামির ডোপটেস্ট রাজারবাগ পুলিশ হাসপাতালের মাধ্যমে সম্পন্ন করে ডোপটেস্টের রিপোর্ট সংগ্রহ ও পর্যালোচনা করেছি।
আসামি ও মামলা সংশ্লিষ্ট জব্দকৃত আলামতের ডিএনএ নমুনা সংগ্রহ ও প্রোফাইলিং করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের ফরেনসিক বিভাগ কর্তৃক ভিকটিমের সংগৃহীত ডিএনএ প্রোফাইলিংয়ের সঙ্গে পরীক্ষা-পূর্বক মতামত প্রদান ও ডিএনএ সংরক্ষণ করার আবেদন জানিয়ে সিআইডিতে আলামত প্রেরণ করেছি এবং জরুরিভিত্তিতে ডিএনএ পরীক্ষার রিপোর্ট সরবরাহের জন্য তাগিদ আবেদন করেছি। ভিকটিমের ময়নাতদন্ত রিপোর্ট জরুরিভিত্তিতে সরবরাহের জন্য ঢামেকের ফরেনসিক বিভাগ বরাবর তাগিদ আবেদন করেছি।

এছাড়া জব্দকৃত গাড়ির সঠিক মালিকানা যাচাইয়ের জন্য বিআরটিএ বরাবর আবেদন করেছি। কিন্তু ভিকটিমের বয়স নির্ধারণসহ ময়নাতদন্ত ও ডিএনএ পরীক্ষার রিপোর্ট এবং বিআরটিএ’র প্রতিবেদন না পাওয়ায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন-২০০০ (সং/০৩) এর ১৮(১)(ক) ধারা মোতাবেক নির্ধারিত সময়সীমার মধ্যে মামলার তদন্ত কাজ সমাপ্ত করা সম্ভব হয়নি। এ অবস্থায় মামলাটির তদন্ত সময়সীমা ৩০ কার্যদিবস বৃদ্ধি করা হলো।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা আ ফ ম আসাদুজ্জামান জাগো নিউজকে বলেন, ‘মামলাটি গুরুত্বসহকারে তদন্ত করা হচ্ছে। এরই মধ্যে আসামির ডোপটেস্টের রিপোর্ট হাতে পেয়ে পর্যালোচনা করছি। আসামি দিহানের ডিএনএ ও ভিকটিমের ময়নাতদন্ত প্রতিবেদনের জন্য তাগিদ দেয়া হয়েছে। এগুলো পেলে মামলার প্রতিবেদন দাখিল করা হবে।’
এর আগে গত ৮ জানুয়ারি ঢাকা মহানগর হাকিম মামুনুর রশীদের আদালতে দিহান দায় স্বীকার করে স্বেচ্ছায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন। গত ৭ জানুয়ারি রাতে ওই স্কুলছাত্রীকে ধর্ষণের পর হত্যার ঘটনায় ফারদিন ইফতেফার দিহানকে একমাত্র আসামি করে কলাবাগান থানায় মামলা করেন নিহতের বাবা।
মামলার এজাহারে উল্লেখ করা হয়, ৭ জানুয়ারি সকাল আনুমানিক সাড়ে ৮টার দিকে ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীরা মা কর্মস্থলের উদ্দেশ্যে বাসা থেকে বের হয়ে যান। এর এক ঘণ্টা পর তার বাবাও ব্যবসায়িক কাজে বাসা থেকে বের হয়ে যান। দুপুর পৌনে ১২টার দিকে ওই শিক্ষার্থী তার মাকে ফোন করে কোচিং থেকে পড়ালেখার পেপার্স আনার কথা বলে বাসা থেকে বের হয়েছিলেন।
মামলার একমাত্র আসামি দিহান দুপুর আনুমানিক ১টা ১৮ মিনিটে ফোন করে ওই শিক্ষার্থীর মাকে জানান, মেয়েটি তার বাসায় গিয়েছিলেন। হঠাৎ অচেতন হয়ে পড়ায় তাকে আনোয়ার খান মডার্ন হাসপাতালের জরুরি বিভাগে নেয়া হয়। অফিস থেকে বের হয়ে আনুমানিক দুপুর ১টা ৫২ মিনিটে ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীর মা হাসপাতালে পৌঁছান।
হাসপাতালের কর্মচারীদের মাধ্যমে তিনি জানতে পারেন— আসামি তার কলাবাগান ডলফিন গলির বাসায় ডেকে নিয়ে মেয়েটিকে ধর্ষণ করে। প্রচুর রক্তক্ষরণের কারণে অচেতন হয়ে পড়লে বিষয়টি ভিন্নখাতে প্রবাহিত করার জন্য আসামি নিজেই তাকে আনোয়ার খান মডার্ন হাসপাতালে নিয়ে যান। হাসপাতালে ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী মারা যান।
Discussion about this post