এ বি এম শাহজাহান আকন্দ মাসুম, অ্যাডভোকেট, বাংলাদেশ সু্প্রীম কোর্ট
মনে করুন আপনি আপনার ছোট ভাইকে বিদেশ পাঠানোর উদ্দেশ্যে আপনাদের গ্রামের একজন প্রবাসী ভাইকে নগদ ৫ লক্ষ টাকা দিয়েছিলেন। কথা ছিল, উনি ৬ মাসের মধ্যে আপনার ভাইকে বিদেশ নিয়ে যাবেন। কিন্তু, প্রায় একবছর হয়ে গেলেও উনি আপনার ভাইকে বিদেশ নিচ্ছেন না।
একেকবার একেক সমস্যার কথা বলে উনি শুধু আপনাদেরকে ঘুরাচ্ছেন। এখন আপনারা সিদ্ধান্ত নিয়েছেন আপনার ভাইকে আর বিদেশ পাঠাবেন না, তাই ঐ প্রবাসী ভাইকে আপনাদের টাকা ফেরত দিতে বলছেন। কিন্তু, উনি এখন টাকা ফেরত দেওয়ার ব্যাপারেও তালবাহানা করছে। দিবো, দিচ্ছি এসব বলে আপনাদেরকে একের পর এক তারিখ দিয়ে যাচ্ছে। এখন আপনারা ওনার উপর আর বিশ্বাস রাখতে পারছেন না। তাই, আপনারা এখন আইনানুগ ব্যবস্থা নিয়ে আপনাদের টাকা গুলো ফেরত নিতে চাচ্ছেন। এখন আপনাদের করনীয় কি?

পাওনা টাকা আদায়ঃ-
আদালতে কোন কিছু প্রমাণ করতে হলে মুখের কথা যথেষ্ট নয়, অবশ্যই লিখিত ডকুমেন্টের প্রয়োজন রয়েছে। কাউকে টাকা ধার বা কোন কাজের জন্য দেওয়ার সময় অবশ্যই স্ট্যাম্প করে নেওয়া ভালো কিংবা তার কাছ থেকে চেক নিয়ে রাখা উচিত। তাহলে, সময়মত টাকা ফেরত না দিলে আপনি তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে পারবেন।
কিন্তু, প্রশ্ন থেকে বুঝা যাচ্ছে যে, ঐ প্রবাসী ভাইয়ের কোন লিখিত ডকুমেন্ট হয় নাই। যখন কোন লিখিত ডকুমেন্ট থাকবে না, তখন আপনাদের উভয়ের মধ্যকার ইমেইল বা মোবাইল ম্যাসেজ বা কথোপকথনের মাধ্যমে প্রমাণ করার যথেষ্ট কারণ সৃষ্টি করতে হবে যাতে স্পষ্ট প্রতীয়মান হয় যে, আপনি ঐলোককে টাকা ধার দিয়েছেন বা উনি আপনার কাছ থেকে টাকা ধার নিয়েছেন। তাহলেই কেবল আপনি ঐ ব্যক্তির বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে পারবেন।
কিভাবে আইনানুগ ব্যবস্থা নিবেন?
পাওনা টাকা আদায় কিংবা অন্য যেকোনো আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার আগে সর্বোচ্চ চেষ্টা করবেন ঘরোয়া ভাবে সমাধান করতে। আত্মীয়-স্বজন বা এলাকার মুরুব্বীদেরকে দিয়ে সমাধান করানোর চেষ্টা করুন। শুরুতেই মামলা মোকদ্দমায় যাওয়ার দরকার নেই। এতে অর্থ এবং সময় ব্যয়ের পাশাপাশি দুইটি মানুষ তথা পরিবারের মধ্যকার সম্পর্কও নষ্ট হয়ে যায়। সেক্ষেত্রে, যথাসাধ্য চেষ্টা করবেন আইনের আশ্রয় নেওয়ার আগে নিজেরা নিজেরা সমাধান করে ফেলতে।
কিন্তু, ঘরোয়া ভাবে সমাধান না হলে তখনি কেবল আইনানুগ ব্যবস্থা নিবেন। সেক্ষেত্রে প্রথমে, ঐ লোককে একটি লিগ্যাল নোটিশ পাঠাবেন। লিগ্যাল নোটিশে আপনি ঐ ব্যক্তি একটি নির্দিষ্ট সময় দিবেন যেমন ৩০ দিন। এই সময়ের মধ্যে ওনাকে আপনার পাওনা অর্থ পরিশোধ করার জন্য আহ্বান করবেন, অন্যথায় আপনি আইনানুগ ব্যবস্থা নিবেন হবে জানিয়ে দিবেন। তারপর, আপনার দেওয়ার সময় অপেক্ষা করবেন, তার মধ্যে অর্থ পরিশোধ করলে তো সমাধান হয়ে গেলো আর পরিশোধ না করলে তখন তার বিরুদ্ধে আপনি আপনার এলাকার দেওয়ানী আদালতে পাওনা টাকা আদায়ের জন্য মামলা করতে পারেন।
এক্ষেত্রে মনে রাখবেন, আপনি শুধু যতো টাকা ধার হিসেবে দিয়েছেন, ততো টাকাই নয়, আপনি চাইলে আপনার পাওনা টাকার ইন্টারেস্টসহ মামলার খরচাদিও মামলার আরজিতে দাবী করতে পারেন। যথেষ্ট প্রমাণাদি দিয়ে প্রমাণ করতে পারলে, আদালতের মাধ্যমেই আপনি যথাসময়ে আপনার পাওনা টাকা আদায় করতে পারবেন। ধন্যবাদ।
Discussion about this post