পিবিআই এর কাজ কি?
পিবিআই মূলত ডাকাতি, খুন, দস্যূতা, নারী ও শিশু নির্যাতন সংক্রান্ত মামলা, অগ্নি সংযোগ, সাইবার ক্রাইম ও ফিন্যান্সিয়াল ক্রাইম ইত্যাদি সংক্রান্ত অপরাধ তদন্ত করে থাকে।
পুলিশের এই ইউনিটটির কাজের ধরন হবে যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (এফবিআই) মতো। আর এখন থেকে চাঞ্চল্যকর মামলার তদন্তে সক্রিয় থাকবে পিবিআই। স্বরাষ্ট্র, আইন ও অর্থ মন্ত্রণালয়ের অনুমোদনের পর সম্প্রতি পিবিআই বিধিমালা সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে। তাতে পিবিআইকে ১৫ ধরনের মামলা তদন্তের ক্ষমতা দেয়া হয়েছে। তারা পুলিশের অন্যান্য ইউনিটের মতোই আইন ও নীতিমালা মেনে চলবে।
তাছাড়া এ ইউনিটের তদন্তাধীন মামলা অন্য সংস্থা বা ইউনিটকে দিতে হলে পুলিশের মহাপরিদর্শকের (আইজিপি) লিখিত অনুমোদন লাগবে। পুলিশ বিভাগ সংশ্লিষ্ট সূত্রে এ তথ্য জানা যায়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, পিবিআইয়ের প্রশিক্ষিত সদস্যরা কর্মপরিধি ও সাংগঠনিক কাঠামো চূড়ান্ত না হওয়ার কারণে এতোদিন অলস সময় কাটিয়েছেন। এ ইউনিটের উন্নত প্রযুক্তি ও দক্ষতা দিয়ে বছরে ৭০ হাজার মামলার তদন্ত করার সক্ষমতা রয়েছে। এখন পিবিআই অনেক চাঞ্চল্যকর মামলার রহস্য উন্মোচন করতে পারবে বলে পুলিশ বাহিনী সংশ্লিষ্টরা আশাবাদী।
মূলত ২০১১ সালে চাঞ্চল্যকর ঘটনায় জড়িত অপরাধীদের চিহ্নিত করে দ্রুত শাস্তির ব্যবস্থা করার জন্যই যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (এফবিআই) আদলে পিবিআই নামে পুলিশের একটি তদন্ত ইউনিট গঠনের প্রস্তাব করা হয়েছিল।
মূল্যায়ন শেষে ২০১২ সালের ১৮ অক্টোবর পুলিশ অ্যাক্ট ১৮৬১-এর সেকশন ১২-এর ক্ষমতাবলে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের আদেশে পিবিআই গঠিত হয়। আর পুলিশ সদর দফতরের সুপারিশে ৮৬টি ক্যাডার পদসহ বিভিন্ন পদে ৯৭০ জনকে নিয়োগের অনুমোদন দেয়া হয়।
সূত্র জানায়, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে জনবল নিয়েই পিবিআইয়ের যাত্রা শুরু হয়। এই ইউনিটের এরই মধ্যে কর্মকর্তাদের ইতিমধ্যে দেশে-বিদেশে বিশেষ প্রশিক্ষণ দেয়া হয়েছে। রাজধানীর ধানম-িতে ভাড়া বাড়িতে চালু হয়েছে প্রধান কার্যালয়। ৭টি বিভাগে একজন পুলিশ সুপারের নেতৃত্বে এবং ৩২ জেলায় একজন অতিরিক্ত পুলিশ সুপারের নেতৃত্বে অফিস চালু করা হয়েছে।
সংশ্লিষ্টদের মতে, লজিস্টিক সাপোর্ট পেলে প্রতিবছর ৭০ হাজার মামলার তদন্ত করার সক্ষমতা পিবিআইয়ের রয়েছে। তবে বিধিমালার অভাবে এতোদিন এই ইউনিটের কার্যক্রম থেমে ছিল। কিন্তু গতবছরের শেষদিকে চাঞ্চল্যকর ঘটনার তদন্তে পিবিআই অন্যান্য ইউনিটকে সহায়তা করতে কাজ শুরু করে। অবশেষে কাঙ্ক্ষিত বিধিমালা অনুমোদিত হওয়ায় সদস্যদের মধ্যে কর্মচাঞ্চল্য দেখা দিয়েছে।
বিধিমালা অনুযায়ী থানা, জেলা ও মেট্রোপলিটন এলাকা অনুযায়ী পিবিআইয়ের অধিক্ষেত্র বা কর্ম-এলাকা ভাগ করা হবে। পুলিশ কমিশনার বা জেলা পুলিশ সুপারকে (এসপি) পিবিআইয়ের তফসিলভুক্ত মামলা (১৫ ধরনের অপরাধ) তদন্তের জন্য হস্তান্তরের নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। তারপর কমিশনার বা এসপি অধিক্ষেত্রের পিবিআইয়ের কাছে তদন্তভার হস্তান্তর করবেন। পরে পিবিআইয়ের কাছ থেকে তদন্তভার হস্তান্তর করতে হলে সংশ্লিষ্ট কমিশনার বা এসপিকে আইজিপির লিখিত অনুমোদন নিতে হবে।
সূত্র আরো জানায়, বিধিমালার তফসিল অনুযায়ী পিবিআই যে ১৫ ধরনের মামলার তদন্তে করবে সেগুলো হলো- (১) খুন, (২) ডাকাতি, দস্যুতা, খুনসহ ডাকাতি, (৩) অগি্নসংযোগ বা বিস্ফোরকদ্রব্য ব্যবহার, (৪) গাড়ি চুরি, (৫) জোরপূর্বক সম্পত্তি দখল, (৬) প্রতারণা ও অপরাধমূলক বিশ্বাসভঞ্জন, (৭) ধর্ষণ, (৮) অস্ত্রসংক্রান্ত, (৯) বিস্ফোরকদ্রব্য সংক্রান্ত, (১০) কম্পিউটার সিস্টেম বা কম্পিউটার নেটওয়ার্ক সংক্রান্ত, (১১) মানবপাচার সংক্রান্ত, (১২) সন্ত্রাসী কর্মকা-, (১৩) চোরাচালান ও কালোবাজারি, (১৪) মাদকদ্রব্য সংক্রান্ত এবং (১৫) নিরাপদ খাদ্য ব্যবস্থা সংক্রান্ত মামলা।
তাছাড়া আদালতের নির্দেশে এবং আইজিপির নির্দেশে অন্যান্য মামলার তদন্তও পিবিআই করতে পারবে। এই ইউনিটের তদন্ত কর্মকর্তা থানার অফিসার ইনচার্জের (ওসি) মতোই আসামি গ্রেফতার, আটক, তল্লাশি ও আলামত জব্দ করতে পারবেন। তদন্তের জন্য প্রযুক্তির ব্যবহার করে তথ্য সংগ্রহ এবং অন্যান্য তদন্তকারী ইউনিটের সাথে তথ্যের আদান-প্রদান করবেন তারা। সংঘবদ্ধ অপরাধের মামলার তদন্তে পিবিআই সদর দফতরের প্রতিনিধি ও তদন্তকারীদের বিশেষ টিম কাজ করবে।
এদিকে পিবিআই বিধিমালা অনুযায়ী কোনো অপরাধের ঘটনায় মামলা দায়েরের ২৪ ঘণ্টার মধ্যে মামলার (এফআইআর) অনুলিপি দিয়ে জেলার দায়িত্বপ্রাপ্ত পিবিআই কর্মকর্তাকে অবহিত করবেন সংশ্লিষ্ট থানার ওসি। তবে ক্রাইম সিন ম্যানেজমেন্ট বা প্রাথমিক আলামত সংগ্রহ ও ঘটনাস্থল সংরক্ষণ করবে থানা পুলিশ।
থানার মতোই পিবিআইয়ের হাজতখানা, মালখানা ও জিজ্ঞাসাবাদের কক্ষ থাকবে। গ্রেফতার, পলায়ন, পুনরায় গ্রেফতার, সমন, ক্রোক ও তল্লাশির ক্ষেত্রে পিবিআই ফৌজদারি কার্যবিধি, পুলিশ বিধিমালা অনুসরণ করবে।
পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন:
পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) ২০১২ সালের সেপ্টেম্বরে যাত্রা শুরু করে। পরবর্তীতে ৫ই জানুয়ারী, ২০১৬ সালে পিবিআই এর জন্য একটি নিজস্ব বিধিমালা অনুমোদিত হওয়ার পর পিবিআই কর্তৃক মামলা তদন্তের কার্যক্রম শুরু হয়। পিবিআই মূলত ডাকাতি, খুন, দস্যূতা, নারী ও শিশু নির্যাতন সংক্রান্ত মামলা, অগ্নি সংযোগ, সাইবার ক্রাইম ও ফিন্যান্সিয়াল ক্রাইম ইত্যাদি সংক্রান্ত অপরাধ তদন্ত করে থাকে।

পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (সংগঠন):
২০১২ সালের ১৮ সেপ্টেম্বরে ৯৭০ জনবল নিয়ে পিবিআই যাত্রা শুরু করলেও বর্তমানে ২০২০ জনবল নিয়ে বাংলাদেশের মোট ৪২ টি জেলায় পিবিআই এর সর্বমোট ৪৯ টি ইউনিট কাজ করছে।
কার্যক্রম শুরুর পর থেকে পিবিআই এর ইউনিটসমূহ জিআর ও সিআর মামলাসমূহ তদন্ত করে আসছে। পিবিআই একজন ডিআইজির নেতৃত্বে পরিচালিত হয়। অপারেশনাল কার্যক্রম অনুসারে পিবিআইকে পূর্বাঞ্চল ও পশ্চিমাঞ্চল এ দুইটি অঞ্চলে বিভক্ত।
দুইজন অতিরিক্ত ডিআইজির নেতৃত্বে এ দুটি অঞ্চল পরিচালিত হয়। এছাড়া কাজের সুবিধার্থে সমগ্র বাংলাদেশকে ৮টি অপরাধ বিভাগ ও ৭৪ টি জেলা ও মেট্রোপলিটন এলাকায় বিভক্ত করা হয়েছে। প্রত্যেক ইউনিট একজন পুলিশ সুপার দ্বারা পরিচালিত।
পিবিআিই হেডকোয়ার্টার্স এর অধীনে এসআইএন্ডও, ডিজিটাল ফরেনসিক ল্যাব, সিটিইউ ও অর্গানাইজড ক্রাইম ইউনিট পরিচালিত হয়।
পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন ( ইতিহাস ):
২০১১ সালে পুলিশ এ্যাক্টের একটি ধারার ক্ষমতাবলে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের আদেশে পিবিআই গঠিত হয়। এ লক্ষ্যে বাংলাদেশ পুলিশের একটি আধুনিক ও নিরপেক্ষ তদন্ত সংস্থা হিসাবে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) ২০১২ সালের সেপ্টেম্বরে যাত্রা শুরু করে।
পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন এর উল্লেখযোগ্য মামলাসমূহ:-
- নুসরাত হত্যা মামলা
- সালমান শাহ হত্যা মামলা
- সগিরা মোর্শেদ হত্যা মামলা
- মোনায়েম হত্যা রহস্য
পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন গঠন:
বিশেষায়িত একটি দল নিয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (এফবিআই) এর আদলে তৈরী হয়েছে।পিবিআইয়ের কর্মকর্তারা এফবিআই ও মার্কিন পুলিশের বিশেষ শাখা থেকে প্রশিক্ষণ নিয়েছেন।
কিভাবে মামলার রহস্য উন্মোচন করছেন পিবিআই ?
পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই), একের পর এক ক্লু-লেস মামলার রহস্য উন্মোচন করে চলেছে। এমনও দেখা গেছে, মামলার তদন্ত করতে গিয়ে কুলকিনারা না পেয়ে হাল ছেড়ে দিয়েছে পুলিশের অন্য ইউনিট। এ ধরনের মামলার তদন্তেও সাফল্য দেখিয়েছে পিবিআই।
সম্প্রতি বেশ কিছু আলোচিত মামলার তদন্ত করে পিবিআই যেমন সবার নজর কেড়েছে, তেমনি তাদের প্রতি সাধারণ মানুষের আস্থা বেড়েছে। আর এ কারণে পিবিআই মামলার তদন্তে নতুন ধারা নিয়ে এসেছে।
এমনকি ভিকটিমের বক্তব্য শুনে অপরাধীর ছবি আঁকার জন্য আর্টিস্টের পদ সৃষ্টিরও উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে পুলিশের এই বিশেষায়িত ইউনিটে।
পিবিআই’র তদন্তে নতুন ধারা এবং কর্মকৌশল নিয়ে গণমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলেছেন সংস্থাটির প্রধান ডিআইজি বনজ কুমার মজুমদার। তিনি বলেন, ‘পুলিশের তদন্তের কিছু কৌশল আছে। সব কৌশলই হচ্ছে—কীভাবে মামলার রহস্য উদঘাটন করা হবে, কাকে ধরতে হবে। বলা যায় একই কৌশল। তারপরও কৌশল প্রয়োগের ক্ষেত্রে অন্যদের সঙ্গে পিবিআই’র কাজের কিছুটা পার্থক্য আছে।
কী ধরনের কৌশল বা তদন্তের ধারা সম্পর্কে জানতে চাইলে বনজ কুমার মজুমদার বলেন, ‘আমরাও থানা ও জেলা পুলিশে চাকরি করেছি। সবার তদন্তের কৌশলই এক। তবে আমরা (পিবিআই) মামলা তদন্তের সময় উচ্চ পর্যায়ের মনিটরিং একটু বেশিই করি।
প্রতিটি মামলায় যতটুকু সময় লাগবে ততটুকু সময় দেই। মামলার ভিকটিম ও আসামি—উভয়ের স্বার্থ দেখার চেষ্টা করি। ভিকটিম ন্যায়বিচার অবশ্যই পাবেন, আবার আসামির প্রতিও যেন অবিচার করা না হয়। এই দিকগুলো গুরুত্বের সঙ্গে দেখা হয়।’
তিনি বলেন, ‘প্রত্যেকটি মামলাকে আমরা তিন স্তরে পর্যালোচনা করে থাকি। তদারক কর্মকর্তা থেকে শুরু করে প্রত্যেকেরই ক্ষমতা আছে— মামলাটি পর্যালোচনা বা অনুসন্ধান করার। আমাদের কাছে এমন কোনও ম্যাজিক নাই, যে ম্যাজিক দিয়ে আমরা আসামি ধরে ফেলবো। রহস্য উদঘাটন করে ফেলবো।
এই যে তদারকি এবং তদারকির ফলে সময় দেওয়া, যে সময়টুকু হয়তো অনেকে দিতে চান না। কিন্তু আমরা প্রয়োজনীয় সেই সময় দেই বলেই কিছুটা উপকৃত হচ্ছি। তারপরও অনেক সময় ছোটখাটো ভুল হয়ে যায়।’
পিবিআই প্রধান বলেন, ‘আমাদের মূল কৌশল হচ্ছে—তদন্ত, তদন্ত এবং তদন্ত। আমি অফিসারদের বলে দিয়েছি, রাত ১০টা কিংবা ১২টা যেকোনও সময় ফোন করতে পারি যে—ওই মামলাটার কী হলো। তখন তাকে সেই মামলার নতুন তথ্য আমাকে দিতে হয়।
এর কারণ হলো, আমার কাছে মামলার সব তথ্য লেখা আছে। আরেকটি বিষয় হচ্ছে, আমরা ভিজিটরকে খুব প্রাধান্য দেই। তিনি আসামি কিংবা বাদী যে-ই হোক। ভুল তথ্য আর মিথ্যা তথ্য যা-ই দিক না কেন, আমরা সবার কথা শুনি। সবার কথা যাচাই করে দেখি। এই অর্থে আমরা আসামিদেরও ফেভার করি।’
বনজ কুমার মজুমদার বলেন, ‘পিবিআই’র গ্রেফতারের ক্ষমতা আছে। থানার একজন ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার মতো পিবিআই ক্ষমতা ভোগ করে। কিন্তু গ্রেফতারের ক্ষেত্রে খুব বিচার-বিবেচনা করা হয়। আমাদের যত ক্ষমতাই থাকুক না কেন, যাকে গ্রেফতার করলে আমার কোনও কাজে আসবে না, তাকে আমরা গ্রেফতার করি না।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা তার তদারক কর্মকর্তার অনুমতি ও পরামর্শ ছাড়া কোনও আসামিকে গ্রেফতার করেন না। এমনও হয়েছে, একজন লোক আসামি, কিন্তু তাকে ধরে বেশি তথ্য পাওয়া যাবে না, তাই আমরা তাকে ধরি না।’
পিবিআই’র এই কর্মকর্তা বলেন, ‘সারাদেশে পিবিআই’র ৫০টির মতো ইউনিট আছে। সেক্ষেত্রে আমরা আরেকটি বিষয় অনুসরণ করি। হত্যা, ডাকাতি বা অন্য যে মামলাই হোক, যেমন ঘটনা চট্টগ্রামের, কিন্তু আসামি চলে গেছে ময়মনসিংহে। তখন আমরা ময়মনসিংহকে বলে দেই, তারা আসামি ধরার কাজটি করে ফেলে। পরে তদন্ত কর্মকর্তা গিয়ে আসামিকে নিয়ে আসেন।’
ফেনীর নুসরাত জাহান রাফি হত্যাকাণ্ডসহ বিভিন্ন মামলার রহস্য উদঘাটনে তদারকি করে পিবিআইকে আলোচনায় নিয়ে আসা পুলিশের ডিআইজি বনজ কুমার মজুমদার বলেন, ‘মামলার তদন্তের জন্য উন্নতমানের একটি ফরেনসিক ল্যাবরেটরি থাকা দরকার, সেটি আমাদের আছে। এই ল্যাবে অত্যাধুনিক যন্ত্রপাতি আছে। আছে ল-ফুল ইন্টারসেপশন। ফলে অনেক কাজ আমরা নিজেরা প্রাথমিকভাবে করে থাকি।
সব মিলিয়ে টেকনিক্যালি একটি মামলা তদন্তের জন্য যতটুকু সাপোর্ট থাকা দরকার, সরকার সবই আমাদের দিয়ে দিয়েছে। এদিক থেকেও অনেকের চেয়ে আমরা এগিয়ে আছি। এগুলোই আমাদের মূল কৌশল।’
পিবিআই প্রধান বলেন, ‘আমাদের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ কৌশল হচ্ছে—তিন মাস পর পর মামলাগুলো নিয়ে আমরা মিটিং করি। যেসব মামলার কোনও ক্লু ছিল না, সেই মামলারও রহস্য উদঘাটিত হয়। মফস্বলের অনেক বড় বড় মামলা, হয়তো চার, পাঁচ কিংবা সাত বছর আগের। যেসব মামলার কথা হয়তো গণমাধ্যমও ভুলে গেছে। তখন এ মামলাগুলোর রহস্য উদঘাটন করতে গিয়ে আমাদের অনেক পরিশ্রম করতে হয়েছে, বুদ্ধি খাটাতে হয়েছে।
আমরা এ মামলাগুলোকে কেস স্টাডি হিসেবে গ্রহণ করি। তদন্ত কর্মকর্তা ও তার তদারক কর্মকর্তাকে (ইউনিট ইনচার্জ) আমরা বিভিন্ন জেলায় পাঠাই। তারা সেখানে গিয়ে মামলা নিয়ে ব্রিফ করে আসেন। সেখানে ২০-২৫ জন কর্মকর্তা থাকেন। বলা হয়, এ ধরনের ঘটনা হাতে আসার পর আমরা কী কী ভুল করেছি, তা ব্রিফ করা। এটি আমাদের বড় একটি কৌশল।
মামলার তদন্ত শেষে যখন আমরা সফল হয়ে যাই, তখন কেস স্টাডি হিসেবে সেগুলো আমরা বিভিন্ন ইউনিটে পাঠিয়ে দেই। সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা গিয়ে সেখানে বিষয়টি উপস্থাপন করে বুঝিয়ে দিয়ে আসেন। ফলে আমাদের অফিসারদের মধ্যে এমন একটি ধারণা হয়েছে, যে মামলাই হোক, পিবিআই ক্লু উদ্ধার করতে পারবে। মূল কথা হচ্ছে, আমাদের কৌশল একটাই—সেটা হচ্ছে, অব্যাহতভাবে কঠোর পরিশ্রম ও পর্যাপ্ত সময় দেওয়া।’
তিনি বলেন, ‘পিবিআই হলো এমনই একটি সংস্থা, যেখানে ইউনিট ইনচার্জ থেকে শুরু করে কনস্টেবল পর্যন্ত সবাইকে ২৪ ঘণ্টা মামলা নিয়েই চিন্তা করতে হয়। আমরা একটি জিনিস নিশ্চিত করেছি, যে যেখানেই যাক, বাসায় কিংবা বাজারে, তাকে তার মামলা নিয়ে চিন্তা করতে হবে। কারণ, কয়েকদিন পরপরই মামলার অগ্রগতি সম্পর্কে তার কাছে জানতে চাওয়া হয়।’
ডিজিটালি বা টেকনোলজি ব্যবহার করে অপরাধ বিশ্লেষণ বা তদন্ত করা হয় কিনা, জানতে চাইলে বনজ কুমার মজুমদার বলেন, ‘আমাদের একটি ফরেনসিক ল্যাব আছে, যা সম্পূর্ণ ডিজিটাল ও আধুনিক ল্যাব। সর্বশেষ যেসব টেকনোলজি বাংলাদেশে আছে, সেগুলো আমরা ব্যবহার করি। আমাদের ফেস আইডেন্টিফিকেশন সিস্টেম আছে। এক্ষেত্রে ভিকটিমের মুখে শুনে আমাদের অপারেটর ছবি আঁকেন। তবে এটা করতে খুব দক্ষ অপারেটর লাগে। সফটওয়্যার আরও ডেভেলপ করা দরকার।
এক্ষেত্রে আমরা বলছি, ডিজিটালে যাবো না, আমরা ম্যানুয়ালে যাবো। সেটি হচ্ছে আমাদের প্রত্যেকটি ইউনিটে একজন করে আর্টিস্টের পদ সৃষ্টি করতে হবে। যখন অপরাধীর বর্ণনা কোনও ভিকটিম দেবেন, তখন সেই আর্টিস্ট সেই অপরাধীর ছবি আঁকবেন। কয়েকটি ছবি আঁকার পর দেখা যাবে, ছবি অপরাধীর চেহারার কাছাকাছি চলে আসছে। পুলিশ সদর দফতরকে বলার পর তারা বলেছে, তোমরা চাইলে আমরা মন্ত্রণালয়কে এ বিষয়টি লিখবো। এটি হলে আরেকটি বিপ্লব হয়ে যাবে।’
পিবিআই প্রধান বলেন, ‘আমরা ডিজিটালের পাশাপাশি এনালগ পদ্ধতিকেও গুরুত্ব দিয়ে থাকি। তাছাড়া ২৪ ঘণ্টা যদি আপনি তদন্ত নিয়ে চিন্তা করেন, তাহলে আপনার মাথায় একটা না একটা বুদ্ধি আসবেই। পিবিআইকে আমরা এমনভাবে গড়ে তুলতে চাই, কোনও মামলাই আর রহস্যাবৃত থাকবে না। এটাই হচ্ছে আমাদের মূল কৌশল।’
মামলা তদন্তকালে রাজনৈতিক চাপ থাকে কিনা প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘২০১৬ সালে আমরা যখন তদন্ত শুরু করেছি, তখন থেকেই আমরা এই বিষয়গুলো আমলে নেইনি। শুরু থেকে যেহেতু আমরা তদন্তের ক্ষেত্রে নিরপেক্ষ লাইনে আছি, তাই আমাদের কর্মকর্তারাও এগুলোকে কিছু মনে করে না।’
আরো জানুন বাংলাদেশের সংবিধান কি ও সংবিধান সম্পর্কে বিস্তারিত
লেখকঃ ল ফর ন্যাশনস, ইমেইলঃ lawfornations.abm@gmail.com, মোবাইল: 01842459590.
Discussion about this post