বিডি ল নিউজঃ
যশোরে রসুল আলী সরদার (৫৫) নামে এক ব্যক্তি খুন হওয়ার ভয়ে টানা দুই বছর হাসপাতালের বেডে অবস্থান করছেন। তার কোনো রোগ নেই। শুধুমাত্র নিরাপত্তার অভাবে রোগী বেশে হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন। ২০১২ সালের ১৯ অক্টোবর থেকে আজ অবধি একই জায়গায় অবস্থান করছেন। গোসল, খাওয়া, ঘুম সবই হাসপাতালে। তবে কোনো চিকিৎসার জন্য নয়। জীবনের নিরাপত্তার জন্যই তিনি হাসপাতাল বেডে রয়েছেন। রসুল আলী সরদার যশোর শহরের পুরাতন কসবা মানিকতলা এলাকার দলু সরদারের ছেলে।
জমি সংক্রান্ত বিরোধের জের ধরে তিনি প্রতিপক্ষের হাতে খুন হওয়ার ভয়ে জেলা আওয়ামী লীগ নেতার পরামর্শে টানা দু’বছর ২৫০ শয্যা হাসপাতালের তৃতীয় তলার মেডিসিন ওয়ার্ডে রয়েছেন। এ দুই বছরে তিনি হাসপাতাল থেকে মুক্তির জন্য ফোনে প্রশাসনের কাছেও তদবির করেছেন। আশ্বস্ত করার মত কোনো প্রতিশ্রুতি পাননি। ফলে হাসপাতালেই থাকতে হচ্ছে তাকে। বাড়ির রান্না করা খাবার খেয়ে জীবন ধারণ করছেন তিনি।
শনিবার দুপুরে যশোর হাসপাতালের মেঝেতে কথা হয় তার সঙ্গে। তিনি জানান, কোনো রোগী একটানা দুই বছর হাসপাতালে থাকে না। আমি রোগী না হয়েও রোগীর বেডে মানবেতর জীবনযাপন করছি। বাইরে বের হলেই প্রতিপক্ষরা আমাকে খুন করে ফেলবে। আমাকে কারা মারবে প্রশাসন সবই জানে। আমি বারবার প্রশাসনের কাছে জীবনের নিরাপত্তা চেয়েছি। কিন্তু সাড়া পাইনি। একজন সুস্থ মানুষের হাসপাতালে দিনের পর দিন থাকা কতটা কষ্টের সেটা বুঝতে পারছি। অনেক কষ্টে বেঁচে আছি। এটা মানুষের জীবন হতে পারে না।
গত ২৯ মার্চ পুলিশের লোকজন আমাকে নিতে এসেছিল। তারা আমাকে সেভ কাস্টডিতে নিতে চেয়েছিল। আমি বলেছি, আমি তো চোর ডাকাত না। আমি জেলে যাব কেন। আমাকে বাড়ি ফেরার ব্যাবস্থা করেন। পরে আর পুলিশ আসেনি।
রসুল আলী সরদার বলেন, ‘২০১২ সালের অক্টোবর মাসে প্রতিপক্ষরা ঝিকরগাছা উপজেলার গদখালিতে তাকে অবরুদ্ধ করে ফেলেন। এসময় র্যাব যশোর ক্যাম্পের সদস্যরা তাকে উদ্ধার করেন। এরপর তিনি জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আলী রেজা রাজুর নেতার বাড়িতে আশ্রয় নেন। এরপর ওই নেতার পরামর্শে তিনি ২০১২ সালের ১৯ অক্টোবর জ্বরের রোগী হিসেবে হাসপাতালে ভর্তি হন। সেই থেকেই পুরুষ মেডিসিন ওয়ার্ডের মেঝেতে বিছানায় দুই বছর ধরে মানবেতর জীবনযাপন করছি।’
কোনো রোগ নেই তবুও রোগী হিসেবে আছেন তিনি। শুয়ে, বসে আর অন্যান্য রোগীর স্বজনদের সঙ্গে কথা বলে তার সময় কাটছে। গত দুই বছর ধরে ছোট বোন আয়েশা খাতুন প্রতিদিন বাড়ি থেকে খাবার রান্না করে আনেন। সেই খাবার খেয়ে বেঁচে আছি। সম্প্রতি জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপারের কাছে জীবনের নিরাপত্তা ও দখল হয়ে যাওয়া সম্পত্তি ফিরে পেতে আবেদন করেছেন বলে জানান তিনি।
এ প্রসঙ্গে হাসপাতালের তত্ত্ববধায়ক ডা. ইয়াকুব আলী মোল্লা জানান, রসুল সরদারকে হাসপাতাল থেকে বের করে দিলে পরের দিন আবার চলে আসে। তার জন্য ওয়ার্ডের অনেক রোগীর সমস্যা হয়। তিনি রীতিমত ওয়ার্ডে খবরদারি করেন। তাকে বের করে নিয়ে যাওয়ার জন্য পুলিশ সুপারকে কয়েক বার লিখেছি। আবারও লিখবো।
এ বিষয়ে যশোর পুলিশের মুখপাত্র সহকারী পুলিশ সুপার রেশমা শারমিন জানান, রসুল সরদারের ছেলে ও বোন আমার কাছে এসেছিল। আমি তাদের বলেছি তাকে বাড়ি নিয়ে যাওয়ার জন্য। কিন্তু রসুল সরদার কোনো ক্রমেই বাড়ি যেতে চায় না। তাকে নিয়ে পরিবারের সদস্যরাও বিপাকে আছেন। তিনি যদি হাসপাতাল না ছাড়েন তাহলে আমাদের কী করার আছে।
Discussion about this post