বিডি ল নিউজঃ গত তিনবার রায় দেওয়ার কথা থাকলেও অবশেষে দেওয়া হয় নি। তবে, এবার ফাইনালি একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধকালীন মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় জামায়াতে ইসলামীর আমির মতিউর রহমান নিজামীর ফাঁসির আদেশ দিয়েছেন আদালত। ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিমের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ বুধবার এ আদেশ দেন। মতিউর রহমান নিজামীর বিরুদ্ধে ১৬টি সুনির্দিষ্ট অভিযোগের মধ্যে ৮টি অভিযোগ প্রমাণিত হয়েছে। ১, ২, ৩, ৪,৬, ৭, ৮ ও ১৬ নম্বর অভিযোগ প্রমাণিত হয়েছে।
১ নম্বর অভিযোগে বলা হয়েছে— একাত্তরের ৩ আগস্ট নিজামী চট্টগ্রাম মুসলিম ইনস্টিটিউট হলে শহর ছাত্রসংঘের এক সুধী সমাবেশে বক্তব্য দেন। তিনি সেখানে পাকিস্তান রক্ষার পক্ষে বক্তব্য দেন। ওই সভায় চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রসংঘের সভাপতি আবু তাহের হিন্দু সম্প্রদায়কে নিশ্চিহ্ন করার আদেশ দেন। নিজামী ওই সভায় উপস্থিত থেকেও আবু তাহেরের বক্তব্যের বিরোধিতা না করে মৌন সম্মতি দেন।
২ নম্বর অভিযোগে বলা হয়েছে— একই বছরের ২২ আগস্ট নিজামী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামিক একাডেমি হলে আল-মাদানি স্মরণসভায় বক্তব্য রাখেন। তিনি এ সভায় দলীয় নেতাকর্মীদের স্বাধীনতাকামীদের নিশ্চিহ্ন করতে উদ্বুদ্ধ করেন। এরপর তারা সারাদেশে সংগঠিত হয়ে অপরাধ করতে থাকেন। যার দায় নিজামীর।
৩ নম্বর অভিযোগে বলা হয়েছে— একই বছরের ৮ সেপ্টেম্বর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কলাভবন প্রাঙ্গণে এক ছাত্রসমাবেশে উস্কানিমূলক বক্তব্য দেন নিজামী।
৪ নম্বর অভিযোগে বলা হয়েছে— একই বছরের ৯ ও ১০ সেপ্টেম্বর যশোর বিডি হলে ছাত্রসংঘের সভায় তিনি জিহাদের সমর্থনে বক্তব্য দেন। নিজামী ওই সভায় বক্তব্য দিয়ে নিরীহ স্বাধীনতাকামী বাঙালি হত্যার নির্দেশ দেন।
৬ নম্বর অভিযোগে বলা হয়েছে— নিজামীর নির্দেশে পাকিস্তান বাহিনীর সহযোগিতায় একই বছরের ৮ মে পাবনার সাঁথিয়া থানার করমজা গ্রামে লোক জড়ো করে নির্বিচারে সুরেন্দ্রনাথ ঠাকুরসহ অসংখ্য লোককে হত্যা করা হয়। নারীদের ধর্ষণ করা হয়।
৭ নম্বর অভিযোগে বলা হয়েছে— একই বছরের ২৭ ও ২৮ নভেম্বর পাবনার সাঁথিয়া থানার ধোলাউড়ি গ্রামে ডা. আবদুল আওয়ালের বাড়ি ও আশপাশের বাড়িতে হামলা চালিয়ে ৩০ জনকে গুলি করে হত্যা করা হয়। সেখান থেকে চারজনকে ধরে নিয়ে ইছামতি নদীর পাড়ে নিয়ে বেয়নেট দিয়ে খুঁচিয়ে হত্যা করা হয়। সেখানে শাহজাহান আলী নামে একজনকে গলা কেটে ফেলে রাখা হয়। সৌভাগ্যক্রমে তিনি বেঁচে যান।
৮ নম্বর অভিযোগে বলা হয়েছে— ঈশ্বরদি থানার আটপাড়া ও বুথেরগাড়ি গ্রামে ১৬ এপ্রিল হামলা চালিয়ে ১৯ জনকে গুলি করে হত্যা করা হয়।
১৬ নম্বর অভিযোগে বলা হয়েছে— আলবদর বাহিনীর প্রধান হিসেবে নিজামী একাত্তরের ১৬ ডিসেম্বর বিজয়ের ঊষালগ্নে বুদ্ধিজীবী হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে সরাসরি জড়িত বলে অভিযোগ করা হয়।
চেয়ারম্যান বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিমের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ বুধবার সকাল ১১টা ৮ মিনিটে এ রায় পাঠ শুরু করেন। ২০৪ পৃষ্ঠার সংক্ষিপ্ত রায়ের প্রথমাংশ পাঠ করেন বিচারপতি আনোয়ারুল হক। এরপর সকাল ১১টা ৩৫ মিনিটে বিচারপতি জাহাঙ্গীর হোসেন রায়ের পর্যবেক্ষণগুলো পাঠ শুরু করেন। এরপর মূল রায় পাঠ করেন চেয়ারম্যান বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহমান।
এর আগে চেয়ারম্যান বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম রায় নিয়ে বিলম্ব ও অন্যান্য প্রসঙ্গের ভূমিকায় বলেন, আমরা আইনের বাইরে টক শো বা রাস্তায় রায় নিয়ে কথা বলতে পারি না। সংবিধান ও আইনের মধ্যে থেকেই এ রায় পাঠ করা হচ্ছে।
এর আগে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে মতিউর রহমান নিজামীকে বুধবার সকাল ৯টা ২৫ মিনিটে ট্রাইব্যুনালে আনা হয়।
এদিকে, চিফ প্রসিকিউটর গোলাম আরিফ টিপু, প্রসিকিউটর তুরিন আফরোজ, মোখলেজুর রহমান বাদলসহ রাষ্ট্রপক্ষের বেশ কয়েকজন আইনজীবী এবং নিজামীর আইনজীবী তাজুল ইসলাম, ফরিদ উদ্দিন আহমেদ খান, রেজাউল কবির, সাইফুর রহমানসহ আসামিপক্ষের ৮-১০জন আইনজীবী ট্রাইব্যুনালে উপস্থিত রয়েছেন।
নিজামীর স্বজনদের মধ্যে উপস্থিত আছেন তার ছেলে ব্যারিস্টার নাজিব মোমেন।
মানবতাবিরোধী অপরাধ মামলার দশম রায় এটি। আগের নয়টি মামলায় জামায়াতের সাবেক ও বর্তমান আটজন এবং বিএনপির দুই নেতাকে দণ্ডাদেশ দেয় ট্রাইব্যুনাল।
এর আগে গত ২৪ জুন অসুস্থতার কারণে নিজামীকে আদালতে হাজির না করায় রায় ঘোষণা করেনি ট্রাইব্যুনাল।
গত ২৪ মার্চ নিজামীর বিরুদ্ধে মামলার বিচার কার্যক্রম সমাপ্ত ঘোষণা করে মামলাটি যেকোনো দিন রায় (সিএভি) ঘোষণার জন্য রাখে ট্রাইব্যুনাল। নিজামীর মামলাটি একমাত্র মামলা যেটি তিনবার রায়ের জন্য অপেক্ষমান রাখা হয়েছে।
Discussion about this post