বিডি ল নিউজঃ
নওগাঁর অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ কাজী আবদুল হাসিব মো. আবু সাঈদের সুরতহাল রিপোর্ট ও পোস্টমর্টেম রিপোর্টে গুরুতর অমিল ধরা পড়েছে। একাধিক বিষয়ে এ অমিল ধরা পড়লে দুটি রিপোর্টের মধ্যে কোনটি সত্য তা নিয়ে সন্দেহ তৈরি করেছে। ফলে বিচারক আবু সাঈদের মৃত্যু নিয়ে হত্যা না আত্মহত্যা এ বিষয়ে সন্দেহ আরো ঘনীভূত হয়েছে। এসব কারণে মামলাটির তদন্তভার সিআইডি’র উপর ন্যস্ত করা হয়েছে। ১৬ সেপ্টেম্বর কাজী আবদুল হাসিব মো. আবু সাঈদের রহস্যজনক মৃত্যুর পর ৩০ সেপ্টেম্বর পোস্টমর্টেম রিপোর্ট দেয়া হয়। কিন্ত পোস্টমর্টেম রিপোর্ট আর সুরতহাল রিপোর্টের মধ্যে অনেক বিষয়ে গুরুতর অমিল পাওয়া যায়।
তম্মধ্যে সুরতহাল রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়, নিহত বিচারকের মাথায় ধাতব পদার্থের আঘাতে ক্ষয়ে যাওয়া অংশের পরিমাণ আধা ইঞ্চি, আর পোস্টমর্টেম রিপোর্টে বলা হয় ক্ষয়ে যাওয়া অংশের পরিমাণ ৮ ভাগের ১ ইঞ্চি। সুরতহাল রিপোর্টে মৃত ব্যক্তির মুখ থেকে লালা নির্গত হওয়ার কথা উল্লেখ রয়েছে, কিন্তু পোস্টমর্টেম রিপোর্টে লালা নির্গত হওয়ার কথা উল্লেখ নেই। সুরতহাল রিপোর্টে মাথায় একাধিক আঘাত আর পোস্টমর্টেম রিপোর্টে একটি আঘাতের কথা উল্লেখ রয়েছে। সুরতহাল রিপোর্টে দুই কানের নীচ থেকে গলায় দাগ রয়েছে বলে উল্লেখ থাকলেও পোস্টমর্টেম রিপোর্টে শুধু ডান কানের নীচ থেকে গলায় দাগ রয়েছে উল্লেখ করা হয়েছে। এছাড়া আরো অনেক বিষয়ে দুটি রিপোর্টে বৈসাদৃশ্য রয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়।
গতকাল বৃহস্পতিবার এ বিচারকের মৃতদেহ উত্তোলনের অনুমতি চেয়ে আবেদন জানিয়েছে সিআইডি চট্টগ্রাম। সুরতহাল রিপোর্টের সাথে পোস্টমর্টেম রিপোর্টে গুরুতর গড়মিল থাকায় আবারো ময়না তদন্তের আবেদন দাখিল করা হয় সিএমএম আদালতে। এ বিষয়ে বৃহস্পতিবার শুনানি হয় সিনিয়র মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ ফরিদ আলম-এর আদালতে। এ বিষয়ে আদেশের জন্য আদালত আগামি রবিবার দিন ধার্য করেছেন।
সুরতহাল রিপোর্টের সাথে পোস্টমর্টেম রিপোর্টে গুরুতর কিছু অমিল পরিলক্ষিত হওয়ায় মৃতদেহ উত্তোলন করে আবারো ময়না তদন্তের আবেদন জানিয়ে দরখাস্ত দাখিল করেন মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা সিআইডি চট্টগ্রাম জোনের ইনস্পেক্টর কাজল কান্তি বড়ুয়া। জানতে চাইলে তিনি বলেন, সুরতহাল ও পোস্টমর্টেম রিপোর্টে একাধিক বিষয়ে গড়মিল থাকায় নিহত বিচারকের মৃতদেহ উত্তোলন করে আবারো পোস্টমর্টেম করার জন্য আদালতে দরখাস্ত দাখিল করেছি। রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী মহানগর পিপি এডভোকেট মো. ফখরুদ্দিন চৌধুরী বলেন, দুটি রিপোর্ট নিহত বিচারকের মৃত্যু রহস্য আরো বাড়িয়ে দিয়েছে। সুরতহাল ও পোস্টমর্টেম রিপোর্টে ব্যাপক গড়মিল থাকার বিষয়টি শুনানিতে আদালতে উপস্থাপন করেছি।
প্রসঙ্গত: ১৬ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যায় লাকী আক্তার ও তার মেয়ে সানজিদা আক্তার মিশু নওগাঁর অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ কাজী আবদুল হাসিব মো. আবু সাঈদকে নিয়ে গুরুতর আহত অবস্থায় চমেক হাসপাতালের জরুরি বিভাগে ভর্তি করেন। কর্তব্যরত চিকিৎসক আবু সাঈদকে মৃত ঘোষণা করেন। মাথায় ধাতব পদার্থ দিয়ে আঘাত করার ফলে বিচারকের মৃত্যু হয়েছে বলে চিকিৎসক জানান। লাকী আক্তার নিহতের শাশুড়ি ও মিশু নিহতের স্ত্রী দাবি করে রহস্যের জন্ম দেন। উল্লেখ্য, বিচারক সাঈদ মৃত্যুকালে স্ত্রী মনিকা, পুত্র অনিন্দ্য ও মেয়ে রোসাবাকে রেখে যান। তাঁর পৈত্রিক বাড়ি ঢাকার মীরপুরে। তিনি চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট ও পটিয়া যুগ্ম জেলা জজ হিসেবে কর্মরত থাকার পর নওগাঁর অতিরিক্ত জেলা জজ হিসেবে পদোন্নতি পেয়ে বদলি হন। বিচারক সাঈদ খুনের ঘটনায় হালিশহর থানা পুলিশ হত্যা মামলা দায়ের করেন। দুই মহিলা বর্তমানে জেলহাজতে রয়েছেন।
Discussion about this post