বিডি ল নিউজঃ
শুক্রবার বাদ ফজর আমবয়ানের মধ্য দিয়ে শুরু হয়েছে তাবলিগ জামাতের ৫০তম বিশ্ব ইজতেমার প্রথম পর্ব। রাজধানীর ঢাকার নিকটবর্তী গাজীপুরের টঙ্গীর তুরাগ তীরে তিন দিনব্যাপী বিশ্ব ইজতেমার প্রথম পর্ব আগামী ১১ জানুয়ারি রোববার আখেরি মোনাজাতের মধ্য দিয়ে শেষ হবে। চার দিন বিরতির পর দ্বিতীয় পর্ব ১৬ জানুয়ারি শুক্রবার বাদ ফজর থেকে শুরু হবে এবং ১৮ জানুয়ারি রোববার আখেরি মোনাজাতের মধ্য দিয়ে বিশ্ব ইজতেমার সমাপ্তি ঘটবে।এর আগে বৃহস্পতিবার বাদ আসর থেকেই ময়দানে ঈমান, আমল ও আখলাকসহ তাবলিগের ছয় উসুল সম্পর্কে অনানুষ্ঠানিক বয়ান শুরু হয়। টঙ্গীর তুরাগতীরে প্রায় ১৬০ একর এলাকাজুড়ে দেশ-বিদেশের লাখো মুসল্লি সমবেত হয়েছেন ইজতেমা ময়দানে।
বিএনপির নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোটের ডাকা সড়ক, রেল ও নৌপথ অবরোধের মধ্যেই তাবলিগ জামাতের মুসল্লিরা ট্রেন, বাস, ট্রাক ও ছোট ছোট যানবাহনে করে দীর্ঘ পথ হেঁটে, বাস, ট্রাক, রেলসহ বিভিন্নভাবে ইজতেমা ময়দানে আসেন। তাবলিগ জামায়াতের লাখ লাখ সদস্যের উপস্থিতিতে মুখর হয়ে উঠেছে তুরাগ নদীর তীর। এদিকে বিশ্ব ইজতেমা উপলক্ষে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহণ করপোরেশন (বিআরটিসি) ৭ জানুয়ারি থেকে ২০ জানুয়ারি পর্যন্ত ঢাকা, বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ এলাকা ও টার্মিনাল থেকে বিশেষ যাত্রীসেবা দিচ্ছে।
ইতিমধ্যেই লাখো মুসল্লি সেখানে সমবেত হয়েছেন। বিভিন্ন জেলার কিশোর, যুবক, বয়োজ্যেষ্ঠ সব শ্রেণির মানুষ ইজতেমায় এসেছেন। অনেকে দীর্ঘ চল্লিশ বা ১২০ দিন ইসলামের দাওয়াত শেষ করে ইজতেমায় শরিক হচ্ছেন। আবার কেউ কেউ ইজতেমা শেষে দেশ-বিদেশ ঘুরে ইসলামের দাওয়াত দিতে ৪০ বা ১২০ দিনের জন্য বেরিয়ে পড়বেন। ধনী, দরিদ্র সবাই এখানে এক শামিয়ানার নিচে একসঙ্গে অবস্থান করছেন। মুসল্লিরা প্রত্যেকে নিজ নিজ ব্যবহার্য দ্রব্যাদি কাঁধে বহন করে মাঠে আসছেন।
রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিশ্ব ইজতেমা উপলক্ষে পৃথক বাণী দিয়েছেন।
আয়োজক কমিটির মুরব্বি প্রকৌশলী মো. গিয়াসউদ্দিন জানান, এবার প্রথম দফায় দেশের ৩২টি জেলার তাবলিগ জামাতের মুসল্লি ও সর্বস্তরের মুসলমান প্রথম পর্বে অংশ নিচ্ছেন। এ ছাড়া বিশ্বের প্রায় ১৩০টি দেশের মুসল্লি এবারের ইজতেমায় অংশ নেবেন। ইজতেমার মাঠকে মোট ৪০টি খিত্তায় ভাগ করে জেলা অনুযায়ী স্থান নির্ধারণ করা হয়েছে। নির্দিষ্ট খিত্তায় নির্দিষ্ট জেলার মুসল্লিদের জন্য নির্ধারণ করা হয়েছে। এ সবের মধ্যে ১-২ নম্বর খিত্তায় গাজীপুর, ৩-১৩ নম্বর খিত্তায় ঢাকা জেলা, ১৪ নম্বর খিত্তায় সিরাজগঞ্জ, ১৫ নম্বর খিত্তায় নরসিংদী, ১৬ নম্বর খিত্তায় ফরিদপুর, ১৭ নম্বর খিত্তায় রাজবাড়ী, ১৮ নম্বর খিত্তায় শরীয়তপুর, ১৯ নম্বর খিত্তায় কিশোরগঞ্জ, ২০ নম্বর খিত্তায় নাটোর, ২১ নম্বর খিত্তায় রংপুর, ২২ নম্বর খিত্তায় শেরপুর-হবিগঞ্জ, ২৩ নম্বর খিত্তায় রাজশাহী, ২৪ নম্বর খিত্তায় জয়পুরহাট, ২৫ নম্বর খিত্তায় গাইবান্ধা, ২৬ নম্বর খিত্তায় লালমনিরহাট, ২৭ নম্বর খিত্তায় হবিগঞ্জ, ২৮ নম্বর খিত্তায় দিনাজপুর, ২৯ নম্বর খিত্তায় সিলেট, ৩০ নম্বর খিত্তায় চাঁদপুর, ৩১ নম্বর খিত্তায় ফেনী, ৩২ নম্বর খিত্তায় চট্টগ্রাম, ৩৩ নম্বর খিত্তায় বান্দরবন, খাগড়াছড়ি ও রাঙ্গামাটি, ৩৪ নম্বর খিত্তায় বাগেরহাট-কুষ্টিয়া, ৩৫ নম্বর খিত্তায় নড়াইল, ৩৬ নম্বর খিত্তায় চুয়াডাঙ্গা, ৩৭ নম্বর খিত্তায় যশোর, ৩৮ নম্বর খিত্তায় ভোলা, ৩৯ নম্বর খিত্তায় বরগুনা এবং ৪০ নম্বর খিত্তায় ঝালকাঠি জেলার মুসল্লিরা অবস্থান নেবেন। এ ছাড়া ইজতেমা ময়দানের পশ্চিম দিকে বিদেশি মেহমান খিত্তার পাশে স্থাপন করা হয়েছে নামাজের স্থান। আর তুরাগ তীরের পশ্চিম দিকে মাঠের মাঝামাঝি রয়েছে বয়ানের মঞ্চ। মাঠের প্রতিটি কোণে মুসল্লিদের বয়ান শোনার জন্য মাইক লাগানো হয়েছে। ইজতেমা চলার সময় থাকবে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ।
তাবলিগের মুরুব্বি প্রকৌশলী গিয়াস উদ্দিন জানান, বাংলাদেশের বাইরে থেকে মুসল্লিদের সংখ্যা এবার বৃদ্ধি পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। গত বছর প্রায় ১৭ হাজার বিদেশি মুসল্লি ইজতেমায় অংশ নিয়েছিলেন। এবার ২০ হাজার ছাড়িয়ে যেতে পারে। বিদেশি আবাসনের জন্য মাঠের উত্তর-পশ্চিম পাশে টিন-চট দিয়ে বিশেষ কামরা তৈরির কাজও শেষপর্যায়ে রয়েছে।
সেনা সূত্রে জানা গেছে, বিশ্ব ইজতেমায় আগত মুসুল্লিদের পারাপারের জন্য তুরাগ নদীর উপর এবার সাতটি ভাসমান সেতু স্থাপন করা হয়েছে। মাঠে স্থাপিত ১১টি নলকূপের মাধ্যমে ইজতেমায় আগত মুসল্লিদের পানি পান, ওজু-গোসল, পয়নিষ্কাশন ইত্যাদির জন্য প্রতিদিন প্রায় ৭০ লাখ গ্যালন সুপেয় পানি সরবরাহের ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। ইজতেমা এলাকায় সার্বক্ষণিক বিদ্যুৎ সরবরাহের সকল প্রস্তুতি রয়েছে। স্ট্যান্ডবাই রাখা হবে চারটি জেনারেটরও।
এদিকে টঙ্গীর শহীদ আহসান উল্লাহ মাস্টার স্টেডিয়ামে স্থাপন করা হয়েছে পুলিশের কন্ট্রোল রুম। ইজতেমায় পুলিশের পাঁচস্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা থাকবে। ইজতেমা স্থলে মুসল্লিদের নিরাপত্তা দিতে পুলিশ, র্যাব ও আনসার সদস্যসহ বিভিন্ন গোয়েন্দাসংস্থার সদস্যরা নিরাপত্তা ও শান্তিশৃঙ্খলার কাজে নিয়োজিত রয়েছেন।
ইজতেমায় স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে ঢাকা বিভাগের ১৭টি জেলা থেকে শতাধিক চিকিৎসককে আনা হয়েছে। মুসল্লিদের বিনামূল্যে চিকিৎসাসেবা দিতে মন্নু গেট, এটলাস গেট, বাটা কারখানার গেট ও টঙ্গী হাসপাতালমাঠসহ ছয়টি অস্থায়ী মেডিক্যাল ক্যাম্প স্থাপন করা হয়েছে। এখানে হৃদরোগ, অ্যাজমা, ট্রমা, বার্ন, চক্ষু এবং ওআরটি কর্নারসহ বিভিন্ন ইউনিটে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকগণ চিকিৎসা দেবেন। মুসল্লি রোগীদের হাসপাতালে নেওয়ার জন্য সার্বক্ষণিক ১৪টি অ্যাম্বুলেন্স মোতায়েন থাকবে।
Discussion about this post