বিডি ল নিউজঃ
বোমাতঙ্কে রেড অ্যালার্ট এখন দেশজুড়ে। সচিবালয় থেকে শুরু করে সংসদ ভবন, সর্বোচ্চ আদালত, সরকারি ব্যবস্থাপনার রেডিও-টেলিভিশন সেন্টার, আণবিক শক্তি কমিশন, ডিএফপি নিয়ন্ত্রণাধীন দফতর, বিমানবন্দর, বিদ্যুৎ, ওয়াসা, গ্যাস সরবরাহের স্টেশনসহ রাষ্ট্রীয় গুরুত্বপূর্ণ সব স্থাপনায় সর্বোচ্চ সতর্কাবস্থায় এখন পুলিশ ও গোয়েন্দারা। নিরাপত্তার দিক থেকে অত্যন্ত স্পর্শকাতর আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়সহ বেশ কয়েকটি দফতর ও ভবনে দর্শনার্থী নিষিদ্ধ করা হয়েছে। কয়েক ধাপের নিরাপত্তা বলয় তৈরি করা হয়েছে রাজধানীর কূটনৈতিক এলাকা ঘিরে। রাষ্ট্রের বিশিষ্ট ব্যক্তি ও তাদের বাসভবনেও দেওয়া হয়েছে অতিরিক্ত নিরাপত্তা। জননিরাপত্তায় দেশের ২২ জেলায় বিজিবি মোতায়েন করা হয়েছে। সীমান্ত এলাকাতেও বাড়ানো হয়েছে নজরদারি।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, রাজনৈতিক কর্মসূচির নামে ব্যাপক হারে ককটেল ও বোমা বিস্ফোরণ ঘটায় বোমাতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে গোটা দেশে। বিশেষ করে মন্ত্রী, এমপি, বিচারক, কূটনীতিকসহ রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের বাসভবন, দেশের সর্বোচ্চ আদালত, দূতাবাস, কূটনৈতিক এলাকাসহ বিভিন্ন স্থাপনায় ককটেল ও বোমা হামলায় এই আতঙ্ক এখন সর্বমহলে। সাধারণ মানুষের মধ্যে এ অজানা আতঙ্ক কাজ করছে। অভিভাবকরা তাদের সন্তানদের স্কুল-কলেজে যাওয়া বন্ধ করে দিয়েছেন। সরকারের ঘনিষ্ঠ সূত্রগুলো জানায়, আশঙ্কাজনক এই পরিস্থিতিতে সরকার ভীষণ উদ্বিঘ্ন। কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থার মধ্যেও বোমারুদের হামলা বন্ধ না হওয়ায় ভাবিয়ে তুলেছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে।গতকালও রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থানে ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। ঢাকায় স্বাস্থ্যমন্ত্রীর অনুষ্ঠানের কাছে পরপর বেশ কয়েকটি বোমা বিস্ফোরিত হলে আতঙ্কের মাত্রা বেড়ে যায় বহুগুণ। এই পরিস্থিতিতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী এখন রেড অ্যালার্টে।বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০-দলীয় জোটের অবরোধ কর্মসূচি শুরুর পর থেকেই ককটেল ও বোমা হামলার ঘটনা শুরু হয়। গত ৫ জানুয়ারি থেকে শুরু হওয়া এমন নাশকতায় গোটা রাজধানী যেন এখন ককটেল বোমার নগরীতে পরিণত হয়েছে। পুলিশ ও গোয়েন্দারা বলছে, ককটেল ও বোমা তৈরির কারখানার সন্ধান করছেন তারা। বোমারুদেরও গ্রেফতারে অভিযান চলছে। বোমারুরা এতটাই দুর্ধর্ষ যে, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কাছাকাছি পৌঁছেই ককটেল ছুড়ে হাওয়া হয়ে যাচ্ছে। গোয়েন্দারা জানতে পেরেছে, রাজধানীতে যেসব বোমার বিস্ফোরণ ঘটছে, সেসব বোমা তৈরি হচ্ছে রাজধানীতেই।দর্শনার্থী নিষিদ্ধ : শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়সহ নিরাপত্তার দিক থেকে স্পর্শকাতর এমন বিভিন্ন দফতরে নিরাপত্তা বাড়ানোর পাশাপাশি দর্শনার্থী প্রবেশ নিষিদ্ধ করা হয়েছে। সিভিল এভিয়েশন কর্তৃপক্ষ গতকাল থেকেই হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে দর্শনার্থী প্রবেশ নিষিদ্ধ ঘোষণা করে। এ ছাড়া বাড়ানো হয়েছে নিরাপত্তা কর্মীর সংখ্যাও। পরবর্তী ঘোষণা না দেওয়া পর্যন্ত এই আদেশ বলবৎ থাকবে।বিমানবন্দরের দায়িত্বশীল সূত্র জানায়, রাজনৈতিক অস্থিরতা ও বিভিন্ন স্থানে নাশকতামূলক কর্মকাণ্ডের পরিপ্রেক্ষিতেই এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। আন্তর্জাতিক এই বিমানবন্দর ব্যবহার করে যারা দেশের বাইরে যাচ্ছেন ও যারা আসছেন তাদের সার্বিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে এই ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। এখন থেকে বিমানবন্দরের অভ্যন্তরে কেবল যাত্রীই ঢুকতে পারবে। দর্শনার্থীদের টিকিট কেটে ভিতরে ঢোকার সুযোগ থাকবে না।কেপিআই-ডিপিআই জোনে নিরাপত্তা জোরদার : কি পয়েন্ট ইন্সটলেশন (কেপিআই) এবং ডিপলোমেটিক পয়েন্ট ইন্সটলেশন (ডিপিআই) জোনে নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। রাষ্ট্রীয় গুরুত্বপূর্ণ এসব জোনের ৩৯১টি পয়েন্টের স্থাপনায় যে কোন ধরনের নাশকতা ঠেকাতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অতিরিক্ত সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে।দায়িত্বশীল সূত্র জানায়, অবরোধ কর্মসূচি চলাকালে নিয়মিত নিরাপত্তা কাঠামোর পাশাপাশি বাড়ানো হয়েছে পোশাক ও সাদা পোশাকধারী নিরাপত্তা টহল। নিরাপত্তা ব্যবস্থা সম্পর্কে জানতে চাইলে সরকারের গোয়েন্দা কর্মকর্তারা জানান, এ বিষয়ের নিরাপত্তা ব্যবস্থা সব সময়ই একটু ভিন্ন রকমের থাকে। গুরুত্বপূর্ণ বলেই এ বিষয়ে নিরাপত্তার সব ব্যবস্থা গোপন রাখা হয়। কেপিআই ও ডিপিআইয়ের নিরাপত্তা ব্যবস্থা সম্পূর্ণ সুরক্ষিত রাখার সব ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। ঢাকা মহানগর পুলিশের কর্মকর্তারা জানান, যে কোনো সময়ের চেয়ে এবার কেপিআই ও ডিপিআইয়ের নিরাপত্তা ব্যবস্থা অধিক জোরদার করা হয়। গোয়েন্দা শাখার সূত্র জানায়, কেপিআই ও ডিপিআই জোন এবং আশপাশ এলাকায় বেশকিছু চেকপোস্ট বসিয়ে চলাচলকারীদের ব্যাগেজ ও দেহ তল্লাশি করা হচ্ছে। এসব চেকপোস্টে পুলিশ সদস্যরা দায়িত্ব পালন করলেও বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যরা তা পর্যবেক্ষণ করছে। সূত্র জানায়, কূটনীতিকপাড়ার নিরাপত্তা ব্যবস্থা অনেকটা ঢেলে সাজানো হয়। গুলশান-বারিধারা এলাকার কূটনীতিকপাড়ায় র্যাব পুলিশের পাশাপাশি গোয়েন্দারা কাজের পরিধি বাড়িয়েছে।এদিকে গতকাল থেকে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) কার্যালয়ে নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। সেগুনবাগিচার দুদকের প্রধান কার্যালয়ের মূল ফটক ও প্রতিটি প্রবেশদ্বারে নিরাপত্তা কর্মীরা সতর্ক অবস্থানে রয়েছেন। বিভিন্ন তলায় মেটাল ডিটেক্টর যন্ত্রসহ কর্মীদের দায়িত্ব পালন করতে দেখা গেছে। এ বিষয়ে দুদক চেয়ারম্যান মো. বদিউজ্জামান গণমাধ্যমের কাছে বলেন, উচ্চ আদালতে বোমা পাওয়ার পর আমাদের মনে হয়েছে নিরাপত্তা জোরদার করা উচিত। সে লক্ষ্যেই সকাল থেকে অতিরিক্ত নিরাপত্তাকর্মী নিয়োজিত করা হয়েছে।২২ জেলায় বিজিবি : জননিরাপত্তা রক্ষায় দেশের ২২ জেলায় সীমান্তরক্ষী বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) সদস্যদের মোতায়েন করা হয়েছে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সূত্র জানায়, দেশের সামগ্রিক অবস্থা বিবেচনা করে ‘অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড স্বাভাবিক রাখা, জনগণের জানমালের নিরাপত্তা বিধান ও আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি সমুন্নত রাখতে’ গত সোমবার এই নির্দেশনা দেওয়া হয়।স্বাস্থ্যমন্ত্রীর অনুষ্ঠানের সময় ককটেল : পুরান ঢাকায় স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজে স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন সন্ধানীর এক পুনর্মিলনী অনুষ্ঠান চলার সময় কয়েকটি ককটেল বিস্ফোরিত হয়েছে। যেখানে প্রধান অতিথি ছিলেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম। গতকাল সকাল সাড়ে ৯টায় অনুষ্ঠান শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত অন্তত সাতটি ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, সকাল সাড়ে ৯টায় হাসপাতালে প্রধান ফটকের সামনে পরপর দুটি ককটেলের বিস্ফোরণ ঘটায় দুর্বৃত্তরা।
Discussion about this post