বিডি ল নিউজঃ বিশ্বকাপে এর চেয়ে ভাল শুরু বোধহয় আশা করতে পারত না অস্ট্রেলিয়া টিম আর সমর্থকেরা!
প্রথম ম্যাচেই চিরশত্রু ইংল্যান্ডকে গুঁড়িয়ে জেতাটা দারুণ তৃপ্তির। তবে শনিবারের লড়াই যদি ক্রিকেটের সবচেয়ে প্রাচীন শত্রুতার ঝকঝকে বিজ্ঞাপন হয়, তা হলে রবিবারেরটা ক্রিকেটের সবচেয়ে বড় দুই শত্রুর মহাযুদ্ধ! ভারত-পাক নিয়ে উত্তেজনার পারদ বরাবর আকাশছোঁয়া। আজও একশো কোটির বেশি মানুষ দুই চিরপ্রতিদ্বন্দ্বীর জন্য গলা ফাটাবে।
ওয়ান ডে-তে ইদানীং পাকিস্তানের তেমন চোখধাঁধানো জয় না থাকলেও ওরা খুব ভাল ওয়ান ডে টিম। যে কোনও দিন অঘটন ঘটানোর ক্ষমতা রাখে। আমার মতে এ বারের বিশ্বকাপের সেরা দল অস্ট্রেলিয়া। সেই অস্ট্রেলিয়াকেই ওরা কিছু দিন আগে টেস্ট সিরিজে ২-০ হারিয়েছিল। পাক বোলিং রীতিমতো ভাল। অস্ট্রেলিয়ার পিচ আর আবহাওয়ায় বল করাটা পাক পেসাররা উপভোগ করবে। ওদের তরুণ ব্যাটিংও ইউনিস খান আর মিসবা উল হকের নেতৃত্বে সেরাটা দেওয়ার জন্য ছটফট করছে।
অধিনায়ক মিসবাকে আমার অনেকটা ইমরান খানের মতো লাগে। ইমরানের মতোই সামনে থেকে নেতৃত্ব দেয়। বিরানব্বইয়ে বিশ্বের এই প্রান্ত থেকেই কাপ জিতেছিল ইমরান। ওর নেতৃত্বে পাকিস্তানকে যে রকম এককাট্টা হয়ে লড়তে দেখেছিলাম, মিসবার নেতৃত্বেও সেই ব্যাপারটা লক্ষ্য করছি। এর সঙ্গে আছে শাহিদ আফ্রিদি। গত ক’বছরে যত বার অবসর নিয়ে আবার ফিরেছে, সেটা শুধুমাত্র কোনও রক ব্যান্ডের সঙ্গেই তুলনা করা যায়। তবে প্রত্যেকে নিজের দিনে ম্যাচ উইনার। আর দেখেছি, পাকিস্তান বিশ্বকাপে একটা বাড়তি গিয়ার খুঁজে পায়। আমার মতে এই বিশ্বকাপের অন্যতম আন্ডাররেটেড দল পাকিস্তানই।
তবে পাকিস্তান সামনে পড়লেই ভারতও যেন বাড়তি জ্বলে ওঠে! আজ পর্যন্ত প্রতিটা বিশ্বকাপে পাকিস্তানকে হারিয়ে সেটা প্রমাণ করেছে ভারত। আর মহেন্দ্র সিংহ ধোনির মিডাস টাচ আর চওড়া কপালকে অগ্রাহ্য করবএত বড় দুঃসাহস আর যে-ই দেখাক, আমি দেখাতে পারছি না!
গত বারের বিশ্বচ্যাম্পিয়নদের এই মুহূর্তে অবশ্য খুব একটা দুর্ভেদ্য লাগছে না। তবে সেটা বোঝার ভুল হতে পারে। হয়তো গোটা তিনেক ম্যাচ খেলেই কোহলি, রোহিত, ধবনরা দারুণ ছন্দ পেয়ে গেল। তখন ভারতকে রোখা খুব কঠিন হবে। বিশ্বকাপের ফর্ম্যাট এমন যে, দু’-একটা ম্যাচ দেখে নিয়ে জাঁকিয়ে বসার সময় পাবে ওরা। কে বলতে পারে, চিরশত্রুর বিরুদ্ধে ম্যাচটাই হয়তো ওদের তাতিয়ে তোলার জন্য যথেষ্ট হবে! ভারতের দুশ্চিন্তা বোলিং। বিশেষত পেসারদের ফিটনেস। ফিল্ডিংও উদ্বেগের জায়গা!
অস্ট্রেলিয়ার জন্য আবার মাইকেল ক্লার্কের ফিটনেস নিয়ে সংবাদমাধ্যমের লাগাতার জল্পনাটা সমস্যা। শনিবারের জয় কিন্তু দেখিয়ে দিল, ক্লার্ক যত দিন না ফিরছে, তত দিন পর্যন্ত ঘাঁটি আগলে রাখার ক্ষমতা টিমের বাকিদের রয়েছে। অস্ট্রেলিয়া আর নিউজিল্যান্ড জিতে শুরু করায় বিশ্বকাপ নিয়ে এই অঞ্চলের সাধারণ মানুষের উত্সাহ আকাশ ছুঁয়েছে! প্রথম দিনের দু’টো ম্যাচে গ্যালারিতে ফাঁকা জায়গা ছিল না। আর অ্যাডিলেডে রবিবারের ভারত-পাকিস্তান তো দর্শক সংখ্যার নতুন রেকর্ড গড়তে চলেছে!
পঞ্চাশ ওভারের খেলাটাকে মৃত্যুপথযাত্রী ধরে নিয়ে ইদানীং প্রচুর শোকগাথা লেখা হয়েছে। বিশ্বকাপ জমে গেলে কিন্তু ওয়ান ডে ক্রিকেটের আবার দিন ফিরবে।
সূত্রঃ আনন্দবাজার
Discussion about this post