বিডি ল নিউজঃ
চলমান রাজনৈতিক সংকট নিরসনে বিএনপির সামনে এখন ভরসা তিনটি। প্রথমত জাতিসংঘ, ইউরোপ-আমেরিকা ও ভারতসহ আন্তর্জাতিক পদক্ষেপ, দ্বিতীয়ত নাগরিক সমাজ ও বিশিষ্টজনদের উদ্যোগ এবং তৃতীয়ত আন্দোলনে সর্বস্তরের মানুষের অংশগ্রহণ। বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোট এই তিন সম্ভাবনার দিকেই তাকিয়ে। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় বা নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিরা সংলাপ-সমঝোতার প্রচেষ্টায় ব্যর্থ হলে আন্দোলনের মাধ্যমেই সমাধান চায় বিএনপি। দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মাহবুবুর রহমান বলেন, ‘বর্তমান সংকটে আন্তর্জাতিক মহলেরও করণীয় আছে। বিশেষ করে জাতিসংঘ গণতান্ত্রিক বিশ্বের অভিভাবক সংস্থা। দেশকে গণতন্ত্রের পথে ফেরাতে তাদের উদ্যোগ ইতিবাচকভাবেই দেখা উচিত। আমরাও গণতান্ত্রিকভাবে আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছি। সরকার একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের পরিবেশ সৃষ্টি না করলে আন্দোলন ছাড়া সামনে কোনো পথও খোলা নেই। দেশের সিভিল সোসাইটিসহ সব শ্রেণি-পেশার মানুষের উচিত গণতান্ত্রিক অধিকার আদায়ে আন্দোলনে সম্পৃক্ত হওয়া।’ বিএনপি চেয়ারপারসনের একজন উপদেষ্টা বলেন, ‘সংলাপ-সমঝোতার তাগিদ দিয়ে চলমান সহিংসতায় জাতিসংঘ উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। সংকট নিরসনে সংস্থাটির পক্ষ থেকে কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয় কিনা, সেদিকে দৃষ্টি রাখছে বিএনপি। একইভাবে ভারত, যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ইউরোপীয় ইউনিয়নসহ প্রভাবশালী রাষ্ট্রগুলো বাংলাদেশের পরিস্থিতিকে কীভাবে পর্যবেক্ষণ করছে- সেদিকেও নজর রাখা হচ্ছে।’ বিএনপির নীতিনির্ধারকদের মতে, আন্তর্জাতিক পদক্ষেপের পাশাপাশি এই মুহূর্তে দেশের বিশিষ্টজনরাও চুপচাপ বসে থাকবেন না। তারা কোনো না কোনো উদ্যোগ নেবেন বলে আশা করছে দলটি। উদ্বিগ্ন নাগরিক সমাজের উদ্যোগকে স্বাগত জানায় বিএনপি। সেই সঙ্গে সাবেক রাষ্ট্রপতি ও বিকল্প ধারার প্রেসিডেন্ট অধ্যাপক ডা. এ কিউ এম বদরুদ্দোজা চৌধুরী, বিশিষ্ট আইনজীবী ও গণফোরাম সভাপতি ড. কামাল হোসেন, নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না, কৃষক-শ্রমিক-জনতা লীগের বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী, জাসদের আ স ম আবদুর রবসহ সরকারবিরোধী অন্য দলগুলোর সঙ্গেও যোগাযোগ রাখা হচ্ছে। তবে সম্প্রতি বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান সাদেক হোসেন খোকার সঙ্গে মাহমুদুর রহমান মান্নার ফোনালাপ গণমাধ্যমে প্রকাশিত হওয়ার পর কিছুটা বিব্রত বিএনপি। জানা গেছে, আন্দোলন জনসম্পৃক্ত করতে নানা উদ্যোগ নিচ্ছে বিএনপি। হরতাল-অবরোধে নেতা-কর্মীদের মাঠে নামাতে গতকাল ঢাকাসহ সারা দেশে বিক্ষোভ কর্মসূচি ছিল। শেষ পর্যন্ত দলমত নির্বিশেষে সর্বস্তরের মানুষ রাজপথে নেমে আসবে বলে আশা করছেন বিএনপি নেতারা। কূটনৈতিক সংশ্লিষ্ট এক নেতা জানান, জাতিসংঘের পরবর্তী পদক্ষেপের দিকে চেয়ে আছে বিএনপি। সংস্থাটির মহাসচিব বান কি মুন দুই নেত্রীকে চিঠি দিয়েছেন। বিবৃতিতে সহিংস পরিস্থিতি নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশের পাশাপাশি সংলাপের তাগিদ দিয়েছেন। একই তাগিদ দিয়েছেন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী জন কেরিও। ইউরোপীয় ইউনিয়নের পক্ষ থেকে উদ্বেগ প্রকাশসহ দুই পক্ষকে সংলাপে বসার তাগিদ দেওয়া হয়েছে। বান কি মুনকে চিঠির জবাবও দেওয়া হবে দুই নেত্রীর পক্ষ থেকে। মূলত এর পর জাতিসংঘ কী ধরনের উদ্যোগ নেয়- সেদিকে চোখ বিএনপির। সম্প্রতি ইউরোপীয় পার্লামেন্টের মানবাধিকার কমিটির একটি প্রতিনিধি দল সফর শেষে বাংলাদেশ ছাড়ার প্রাক্কালে সংলাপের তাগিদ দেয়। বিএনপির প্রত্যাশা, বৃহৎ প্রতিবেশী ভারতও একটি উদ্যোগ নেবে। আগামী মাসে ঢাকা সফরকালে দেশটির পররাষ্ট্র সচিব দুই পক্ষকে সংলাপের মাধ্যমে সংকট নিরসনের জন্য সুনির্দিষ্ট তাগিদ দেবেন বলে আশা প্রকাশ করেন বিএনপি নেতারা। পাশাপাশি যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে সংলাপের ব্যাপারে জোরালো উদ্যোগের প্রত্যাশা তাদের। তবে এ জন্য আন্দোলনে জনসম্পৃক্ততা বৃদ্ধির পাশাপাশি গতি আরও বাড়ানোর প্রয়োজন বলেও মনে করেন তারা। সূত্র জানায়, দুর্নীতি মামলায় আগামীকাল খালেদা জিয়ার আদালতে হাজিরার তারিখ। তবে অবরোধের কারণে তার উপস্থিতির সম্ভাবনা নেই। সেক্ষেত্রে খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি হলেও পরিস্থিতি ভিন্ন দিকে মোড় নিতে পারে। তাছাড়া শিগগিরই আন্দোলনের কৌশলে পরিবর্তন আসবে। এতে আন্তর্জাতিক মহলসহ দেশের বিশিষ্টজনদের প্রতিক্রিয়াকে গুরুত্ব দেওয়া হবে।
Discussion about this post