বিডি ল নিউজঃ
রাজশাহীর পবা উপজেলার নওহাটা পৌরসভা মেয়র ও আওয়ামী লীগ নেতা আব্দুল গফুরকে বালিশচাপা দিয়ে হত্যা করা হয়েছে। তার আগে দুই দিন তাকে খাবার না দিয়ে একটি রুমে বন্দি অবস্থায় রাখা হয়। দুদিন ধরে না খেয়ে থাকা মেয়র গফুর আগে থেকেই ছিলেন অনেক দুর্বল।
কথিত চিকিৎসক জান্নাতুল সামলা মীমের সামনেই তার বেডরুমেই মেয়র গফুরকে বালিশচাপা দিয়ে হত্যা করে তার স্বামী হারুন-অর-রশিদ।
এ তথ্য জানিয়েছেন মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ও পবা থানার পরিদর্শক (ওসি-তদন্ত) আবুল কালাম আজাদ।
ওসি আরো জানান, আটকের সময় গফুরের স্ত্রী পরিচায়দান করা মীম রিমান্ডেই মেয়রকে হত্যা করার বিষয়টি স্বীকার করেছিলেন। কিন্তু আদালতে পরপর দুই দিন নিয়ে যাওয়া হলেও ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিতে অস্বীকৃতি জানান। তারপর আদালত তার রিমান্ড আরো সাতদিন বাড়িয়ে দেন।
মঙ্গলবার সকালে মীমকে নিয়ে ঢাকার উদেশ্যে রওনা হন ওসি আবুল কালাম আজাদ। দুপুরে ঢাকায় পৌঁছে মীমকে নিয়ে আজিমপুর কবর স্থানে যাওয়া হয়। সেখান একটি কবরস্থান থেকে মেয়র গফুরের লাশ ঢাকা জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মিজানুর রহমানের উপস্থিতি উত্তোলন করা হয়।
পুলিশ কর্মকর্তা জানান, গত ৫ জানুয়ারি মেয়র গফুরকে ঢাকার মোহাম্মদপুরে মীমের বাসায় ডেকে নিয়ে যাওয়া হয়। এরপরে মেয়রকে একটি ঘরে বন্দী রাখা হয়। দুদিন ধরে তাকে কোনো খাবার দেয়া হয়নি। না খেয়ে দুর্বল হওয়ার পর শোবার ঘরে মুখে বালিশচাপা দিয়ে মীমের সামনেই তার স্বামী মেয়র গফুরকে হত্যা করে। মৃত্যুর পর মেয়র গফুরকে আজিমপুর গোরস্থানে দাফন করা হয়।
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা আবুল কালাম আজাদ আরো জানান, গত ৮ জানুয়ারি রাতে স্বাভাবিক মৃত্যু হিসেবে গফুরের লাশ দাফন করেন মীম। দাফনের সময় মীম নিজেকে গফুরের বোন ও হারুন তার ভগ্নিপতি পরিচয় দেন।
নিখোঁজের দুই মাস পর মেয়রের লাশ উত্তোলন করার সময় আজিমপুর গোরস্থানে তার নেমপ্লেটে মৃত্যুর সময় উল্লেখ করা হয়েছে ৩ জানুয়ারি। বাড়ির ঠিকানা ব্যবহার করা হয়েছে রাজশাহী মহানগরীর বোয়ালিয়া থানার রামচন্দ্রপুর এলাকায়।
পরিবারের লোকজন জানান, গেল বছরের ৩১ ডিসেম্বর মেয়র আবদুল গফুর ঢাকার উদ্দেশ্যে বাড়ি থেকে বের হন। গত ৬ জানুয়ারি পর্যন্ত মেয়রের সঙ্গে তার পরিবারের সদস্যদের মোবাইল ফোনে যোগাযোগ ছিল। এরপর থেকে মেয়রের মোবাইল ফোন বন্ধ পাওয়া যায়। কিন্তু ১৬ ও ১৭ জানুয়ারি মেয়রের দুইটি ফোন নম্বর থেকে তার ছেলের মোবাইলে দুইটি এসএমএস আসে। ওই দুইটি এসএমএসের একটিতে ২৫ হাজার টাকা ও অপরটিতে ৫০ হাজার টাকা বিকাশে দাবি করা হয়।
পুলিশ কর্মকর্তা আবুল কালাম আজাদ জানান, দীর্ঘদিন যোগাযোগ বিছিন্ন থাকার পর এসএমএস করে বিকাশে টাকা চাওয়ার বিষয়টি সন্দেহ হয়। পরে ১৯ জানুয়ারি গফুরের স্ত্রী ফজিলাতুন্নেসা পারুল পবা থানায় অপহরণ মামলা করেন। এরপরই তদন্ত শুরু করা হয়।
পরিদর্শক আবুল কালাম আরো বলেন, মোবাইল ফোন ট্র্যাকিং করে মেয়রের ফোন নম্বরের অবস্থান গত ৭ জানুয়ারি নওগাঁ ও তারপর থেকে ঢাকায় পাওয়া যায়। এর সূত্র ধরে গত ২৩ জানুয়ারি ঢাকার সংসদ ভবন এলাকা থেকে মীমকে আটক করা হয়। আটকের পর মীম নিজেকে মেয়রের স্ত্রী দাবি করেন। এরপর ৩১ জানুয়ারি মীমের দুই বোন জান্নাতুন নাইম ও জান্নাতুন ফেরদৌসকে নওগাঁ ও ঢাকায় আটক করা হয়। তাদের আটকের পর আদালতে হাজির করে জিজ্ঞাবাদের জন্য সাতদিন করে রিমান্ড চাওয়া হয়। কিন্তু হরতালের কারণে আদালত বন্ধ থাকায় রিমান্ড শুনানি হয়নি।
গত ২৬ ফেব্রুয়ারি শুনানি শেষে মীমের চারদিন এবং জান্নাতুন নাইম ও জান্নাতুন ফেরদৌসের একদিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করেন আদালত।
প্রসঙ্গত, মীমের বাবার বাড়ি রাজশাহীর গোদাগাড়ীতে। তার বিয়ে হয়েছে গাইবান্দার সাঘাটা উপজেলার বোনারপাড়া গ্রামের এমাজ উদ্দিনের ছেলে হারুন অর রশিদের সঙ্গে। হারুন ঢাকায় একটি ক্লিনিকে চাকরি করেন।
কয়েক বছর আগে হরুন অর রশিদ রাজশাহীর নওহাটায় সায়াগ্রাম নামে একটি এনজিও প্রতিষ্ঠা করেন। ওই এনজিও নামে একটি ক্লিনিক খুলে নিজেকে এমবিবিএস চিকিৎসক দাবি করে চিকিৎসা সেবা কার্যক্রম চালান। এসময় মীমের সঙ্গে মেয়র গফুরের পরিচয় ও সুসম্পর্ক সৃষ্টি হয়। দুই বছর আগে ওই এনজিও এবং ক্লিনিকটি তিনি গুটিয়ে নেন। এরপর নওগাঁ গিয়ে ‘সালমা ক্লিনিক’ নামের একটি ক্লিনিক খোলেন। মীম ও তার বোন জান্নাতুন নাইম ওই ক্লিনিক দেখাশোনা করতেন।
Discussion about this post