বিডি ল নিউজঃ বিশ্বকাপের পর আগামী এপ্রিলে বাংলাদেশ সফর করার কথা ছিল পাকিস্তান ক্রিকেট দলের। তবে এই সফরটি নিয়ে বেশ দোদুল্যমনতা তৈরী হয়েছিল আগেই। গত অক্টোরে যখন পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ড (পিসিবি) চেয়ারম্যান শাহরিয়ার খান বাংলাদেশ সফরে এসে কয়েকটি শর্ত জুড়ে দিয়েছিলেন, তখন।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে বিসিবির উচ্চপদস্থ এক কর্মকর্তা বলেছেন, ‘পাকিস্তানের বাংলাদেশ সফরের সম্ভাবনা নেই বললেই চলে। এই সফর দুই দেশের ক্রিকেট বোর্ডের কোনো জটিলতার কারণে বাতিল হচ্ছে না। হচ্ছে দুই দেশের বিদ্যমান রাজনৈতিক সম্পর্কের কারণেই। তবে ভিন্ন প্রেক্ষাপট সৃষ্টি হলে এই সফরের জন্য বিসিবি শেষ পর্যন্ত চেষ্টা করবে।’
উল্লেখ্য, বিশ্বকাপ ক্রিকেট শেষে আগামী এপ্রিল মাসে বাংলাদেশ সফরে আসার কথা ছিল পাকিস্তানের। যদিও এই সফর নিয়ে বিশ্বকাপ শুরুর আগে বেশ জল ঘোলা হয়েছে। পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ড অযৌক্তিকভাবে এই সিরিজ থেকে যা আয় হবে তার অর্ধেকটা দাবি করেছিল। নিজেদের দাবির পক্ষে পিসিবির যুক্তি ছিল- ‘এপ্রিল-মে মাসে যে সিরিজটি বাংলাদেশে অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা তা আসলে পিসিবিরই বকেয়া সিরিজ। কেননা ২০১১ সালে পাকিস্তান দল বাংলাদেশ সফর করেছে। দ্বিপাক্ষিক চুক্তি অনুযায়ী ওই সফরের বিনিময়ে ২০১২ সালে বাংলাদেশ দলের পাকিস্তান সফরের কথা। কিন্তু বাংলাদেশ তা করেনি। ফলে বিসিবির কাছে পিসিবির একটি সিরিজ পাওনা রয়েছে। আসন্ন সিরিজটি পাকিস্তানের সেই পাওনা সিরিজই। আসলে এটি হবে পাকিস্তানেরই টেকনিক্যাল হোম সিরিজ। তাই এই সিরিজের লভ্যাংশের একটা অংশ চাওয়া অযৌক্তিক কিছু নয়।’ বিষয়টি নিয়ে দুই দেশের ক্রিকেট বোর্ডের মধ্যে দরকষাকষি সৃষ্টি হয়েছে। বিষয়টির সম্পূর্ণ বিরোধিতা করে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি)। বিসিবির প্রধান নির্বাহী নাজিমউদ্দিন চৌধুরী সুজন সেই সময়ে বাংলাদেশের অবস্থান পরিষ্কার করেছেন। তিনি বলেছেন, ‘এটা আমাদের হোম সিরিজ হিসেবে গণ্য হবে। ট্যুরের স্ট্যাটাস নিয়ে কোনো সমস্যা হওয়ার কথা নয়। এটা নিয়মে নেই। তবে তারা যেটা বলেছে এটা হতে পারে না। এটা বাংলাদেশেরই হোম সিরিজ। এখন সেটাকে আপনি কীভাবে কনসিডার করবেন? তা নিয়ে আলোচনার হতে পারে।’ তবে শেষ পর্যন্ত বিষয়টি সতর্কতার সঙ্গেই সামলে নিয়েছে বিসিবি। দুই দেশের ক্রিকেট বোর্ডের মধ্যে একটি সমঝোতার পথও তৈরি হয়েছিল। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে সৃষ্ট অনভিপ্রেত রাজনৈতিক সম্পর্কের রেশ পড়ছে ক্রিকেট সম্পর্কেও, যে কারণে পাকিস্তান ক্রিকেট দলের বাংলাদেশ সফরের বিষয়টি ভেস্তে যেতে বসেছে।
পাকিস্তান দলের বাংলাদেশ সফরে না আসার কারণ দুই দেশের কূটনৈতিক বিরূপ সম্পর্কের সূচনা, যার শুরু ফেব্রুয়ারিতে। ভাষা মাসের শুরুতেই জঙ্গিগোষ্ঠীর সঙ্গে সম্পৃক্ততা, মুদ্রা পাচার ও জাল মুদ্রাসহ বিভিন্ন অপকর্মের অভিযোগ উঠেছিল পাকিস্তান হাইকমিশশের কর্মকর্তা মোহাম্মদ মাযহার খানের বিরুদ্ধে। এ ব্যাপারে পাকিস্তান সরকারের কাছে তার বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক অভিযোগও দায়ের করেছিল বাংলাদেশ। ওই ঘটনার জের ধরেই বাংলাদেশ ত্যাগ করতে হয়েছে মাযহারকে। তদন্ত করে তার বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য পাকিস্তান সরকারের কাছে অনুরোধ করেছিল বাংলাদেশ। তবে বিষয়টি নিয়ে যেন দুই দেশের কূটনৈতিক সম্পর্কে কোনো বিরূপ প্রভাব না পড়ে, বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে সে বিষয়েও সর্বোচ্চ সতর্কতা অবলম্বন করা হয়েছিল। কিন্তু পাকিস্তান বিষয়টিকে খুব একটা ভাল চোখে নিয়েছে বলে মনে হয় না। পাকিস্তান দলের বাংলাদেশ সফর বাতিলের প্রাথমিক খবর তেমন ইঙ্গিতই বহন করছে।। কেননা হুট করে পিসিবির এমন সিদ্ধান্তের পেছনে অন্য কোনো কারণ থাকার কথা নয়।
পাকিস্তান ক্রিকেট দলের বাংলাদেশ সফর নিয়ে ঝামেলার শুরু বিশ্বকাপ ক্রিকেটের আগেই। বাংলাদেশ সফরে পাকিস্তান ২টি টেস্ট, ৩টি ওয়ানডে এবং ১টি টোয়েন্টি২০ ম্যাচের পূর্ণাঙ্গ সিরিজ খেলার কথা ছিল। তবে এখনো লিখিতভাবে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত জানায়নি পিসিবি। এ ব্যাপারে বিসিবির এক কর্মকর্তা বলেছেন, ‘যেহেতু তারা চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত লিখিতভাবে জানায়নি, তাই শেষ সম্ভাবনার আলো এখনো থাকছে।’
Discussion about this post