বিডি ল নিউজঃ মানবতাবিরোধী অপরাধে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত জামায়াতে ইসলামীর সহকারি সেক্রেটারি জেনারেল মুহাম্মদ কামারুজ্জামানের দণ্ড স্থগিত করার আহ্বান জানিয়েছে নিউইয়র্কভিত্তিক মানবাধিকার সংগঠন হিউম্যান রাইটস ওয়াচ (এইচআরডব্লিউ)। বিচার প্রক্রিয়াকে ত্রুটিপূর্ণ উল্লেখ করে এ মামলায় একটি স্বাধীন পর্যালোচনারও আহ্বান জানিয়েছে তারা। তবে এইচআরডব্লিউ-এর এই দাবিকে অসতর্ক অবস্থান এবং বাংলাদেশের সার্বভৌমত্বের উপর আঘাত বলে বিবেচনা করছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউটর ব্যারিস্টার তুরিন আফরোজ।
সোমবার হিউম্যান রাইটস ওয়াচের নিজস্ব ওয়েবসাইটে প্রকাশিত এক বিবৃতিতে বলা হয়,‘রায়ের পূর্ণাঙ্গ কপি প্রকাশ হওয়ার পর কামারুজ্জামান ২০১৫ সালের ৫ই মার্চ সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে তাঁর মৃত্যুদণ্ডের রায়ের স্বাধীন রিভিউ চেয়ে আবেদন করেন। অথচ মেরিট অনুযায়ী তার রিভিউ আবেদনের শুনানি না করে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ আদালত সংক্ষিপ্ত আদেশে আবেদন খারিজ করেন এবং মৃত্যুদণ্ড বহাল রাখেন।’
এইচআরডব্লিউ’র এশিয়াবিষয়ক পরিচালক ব্র্যাড অ্যাডামস বিবৃতিতে বলেন, ‘মৃত্যুদণ্ড একটি অপরিবর্তনীয় এবং নিষ্ঠুর সাজা। এটা আরো ভয়াবহ হয় যখন এ ধরনের সাজা পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে পর্যালোচনা করে দেখতে বিচার বিভাগ ব্যর্থ হয়। বাংলাদেশে যুদ্ধাপরাধের বিচারে ন্যায়বিচার লঙ্ঘনের ক্রমাগত এবং বিশ্বাসযোগ্য অভিযোগ রয়েছে যার নিরপেক্ষ বিচার বিভাগীয় পর্যালোচনা দরকার।’’
ব্র্যাড অ্যাডামস বলেন, ‘১৯৭১ সালে ভয়াবহ যেসব যুদ্ধাপরাধ সংঘটিত হয়েছিল, তার ন্যায়বিচার ও জবাবদিহিতার ব্যাপারে হিউম্যান রাইটস ওয়াচ দীর্ঘকাল থেকে সমর্থন জানিয়ে আসছে। কিন্তু, এ বিচারসমূহ আন্তর্জাতিক নিরপেক্ষ বিচার ব্যবস্থার মানদণ্ডে হওয়া উচিত। ন্যায়বিচার প্রদানের জন্য সর্বোচ্চ মানদণ্ডের নীতিতে অবিচল থাকা আবশ্যক, বিশেষ করে জীবন যখন বিপন্নপ্রায়। কামারুজ্জামানের বিচার প্রক্রিয়া যেভাবে পরিচালিত হয়েছে, তাতে সে মানদণ্ডসমূহ অনুসরণ করা হয়েছে, তেমনটা বলা যায় না।’
প্রসঙ্গত, মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার শুরুর পর থেকে দেয়া বিভিন্ন বিবৃতিতে হিউম্যান রাইটস ওয়াচ বিচারের ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক মান অনুসরণের দাবি জানিয়ে আসছে। তবে বাংলাদেশের আইসিটি অ্যাক্টের কোন জায়গাটি আন্তর্জাতিক মানকে ক্ষুণ্ন করে তা নিয়ে কখনও কোনো কথা বলেননি তারা। যদিও অতীতের যেকোনো আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুন্যালের চে বাংলাদেশের মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারে গঠিত ট্রাইবুনালে আসামি পক্ষ বেশি আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ পায়। সুপ্রিম কোর্টের সিনিয়র আইনজীবী ব্যারিস্টার তুরিন আফরোজ এ বিষয়ে প্রিয়.কমকে বলেন, ‘আমরা দেশের সর্বোচ্চ আদালতের রায় পেয়েছি, সেই রায়ের প্রতি আমাদের শ্রদ্ধাশীল হতে হবে। এইচআরডব্লিউর মন্তব্যকে অসতর্ক অবস্থান বলে উল্লেখ করেন তিনি।’
তুরিন আফরোজ আরও বলেন, ‘কোন আন্তর্জাতিক সংস্থা যদি কোন দেশের সর্বোচ্চ আদালতের বিচার ব্যবস্থাকে ত্রুটিপূর্ণ বলেন, তাহলে সেটি সে দেশের সার্বভৌমত্বকে নিয়ে কথা বলা হয়। যা কিনা সেই দেশের জন্য হুমকিস্বরূপ।’
২০১৩ সালের ৯ই মে কামারুজ্জামানকে মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে মৃত্যুদণ্ডাদেশ দেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২। এ রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করা হলে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ গত বছরের ৩ নভেম্বর তাঁর মৃত্যুদণ্ডাদেশ বহাল রাখেন। চলতি বছরের ১৮ই ফেব্রুয়ারি ওই রায়ের পূর্ণাঙ্গ অনুলিপি প্রকাশ করা হয়। এর পর ১৯শে ফেব্রুয়ারি কামারুজ্জামানের মৃত্যু পরোয়ানা কারাগারে পৌঁছায়।-প্রিয়
Discussion about this post