বিডি ল নিউজঃ এফডিসিতে সেদিন ঘটল ধুন্ধুমার কাণ্ড। বলা-কওয়া নেই, অভিনেতা পরমব্রত চট্টোপাধ্যায়ের দিকে তেড়ে এলেন একজন। কী ঘটছে এখানে—গাঢ় হলো কৌতূহল। সেই কৌতূহল থেকেই জমল আড্ডা… ফকিরের বাচ্চা, তুই আমার মেয়েকে ভালোবাসিস’! সেটে ঢুকতেই ছুটে এল বাক্যটি। কাকে ধাওয়া করছে এই তীক্ষ্ণ বাক্যবাণ? দেখা গেল, পাশের দেশ থেকে অতিথি হয়ে আসা পরমব্রত চট্টোপাধ্যায়কে উদ্দেশ করেই এ সম্বোধন! এর মধ্যে টানটান উত্তেজনায় হঠাৎ হুংকার করে উঠলেন একজন—অনিমেষ আইচ, ভয়ংকর সুন্দর ছবির পরিচালক।
বললেন, ‘কাট!’ অমনি খানিক ছেদ পলে শুটিংয়ে। ২৫ এপ্রিল এফডিসির ৭ নম্বর ফ্লোরে চলছিল ভয়ংকর সুন্দর ছবির শুটিং। এতে অভিনয়ের মাধ্যমে বাংলাদেশের ছবিতে ডেব্যু হচ্ছে কলকাতার জনপ্রিয় তারকা শিল্পী ও পরিচালক পরমব্রতর। কিন্তু বাংলাদেশে এটা তার প্রথম কাজ হলেও এ দেশে এটাই তার প্রথম সফর নয়, আগেও এসেছিলেন। তার নানা বিখ্যাত চলচ্চিত্রকার ঋত্বিক ঘটক। মাসির বাড়িও এখানে। সেই সূত্রে আগেও ঘুরেছেন ঢাকার অলিগলি আর কক্সবাজার।
তখনই অবাক হয়েছিলেন তিনি, ‘বাংলাদেশের মানুষ আমাকে চেনে!’ শুধু কি চেনা? রীতিমতো পরমকে নিয়ে টানাটানি শুরু হয়েছিল সেবার। তার ওপর পরিচিতজনদের আপ্যায়ন আর ঢাকাইয়া খাবারে সে দফায় বেড়ে গিয়েছিল ওজন। তবে এবার এ শিল্পীর বাংলাদেশ সফর শুধুই কাজের সূত্রে। এর পরও ইচ্ছা আছে, সুযোগ মিললেই একবার পা ছোঁয়াবেন নানা ঋত্বিক ঘটকের পৈতৃক ভিটেয়, ঘুরে দেখবেন মা সুনেত্রা ঘটকের মুখ থেকে শোনা বাংলাদেশটা।
বললেন, ‘দু-একটি জায়গা ছাড়া বাংলাদেশ খুব একটা দেখা হয়নি আমার।’ তবে এ দেশকে অনেক জানেন তিনি। কীভাবে? প্রশ্ন করতেই বললেন, ‘নিয়মিতই এ দেশের গান, গল্প, কবিতা আর চলচ্চিত্র নিয়ে মেতে থাকি। ওপার বাংলায় কিন্তু এ দেশের নাটকগুলোর প্রশংসা হয় অনেক।
শুধু নাটক?
‘না না। ব্যক্তিগতভাবে এ দেশের গানও খুব শুনি আমি। কেবল বাংলাদেশের নয়, অর্ণব তো আমার সব সময়কার প্রিয় একজন শিল্পী। পাশাপাশি কৃষ্ণকলি আর আনুশেহকেও ভালো লাগে।
আর সিনেমা?
পরম এবার বললেন তারেক মাসুদের কথা। জানা গেল, অকালপ্রয়াত এ চলচ্চিত্র নির্মাতার সঙ্গে পারিবারিক বন্ধুত্ব ছিল তাঁদের। তা ছাড়া নাসির উদ্দীন ইউসুফ, তানভীর মোকাম্মেল, মোস্তফা সরয়ার ফারুকীর কাজও দেখেছেন। পড়েছেন আখতারুজ্জামান ইলিয়াস থেকে হুমায়ূন আহমেদ পর্যন্ত। এতকিছু জানার পর আমাদের বুঝতে আর বাকি নেই, বাংলাদেশ সম্পর্কে বেশ ভালো ধারণা আছে এ অভিনেতার। মোড় ঘুরিয়ে এক্ষণে তাই অন্য প্রসঙ্গ। জানতে চাওয়া হলো পরমের প্রেম নিয়ে। কিছুটা সলজ্জ ভঙ্গি তার চোখেমুখে। জানালেন, তিনি ভালোবাসেন ইক্যে নামের এক ভিনদেশি নারীকে। জন্মসূত্রে ডাচ, চক্ষু বিশেষজ্ঞ এই নারী এখন থাকেন কলকাতায়। তবে অভিনয়শিল্পী পরমব্রতর জগৎ থেকে একেবারেই ভিন্ন দুনিয়া ইক্যের। তার চারপাশে এখন যেমন বর্ণিল আলোর ঝলকানি, ইক্যে ঠিক এর উল্টো—খ্যাতির জগৎ থেকে দূরেই থাকেন।
পরিচালক কিংবা অভিনেতা, পরমের ভক্তরা দুভাবেই হাসিমুখে গ্রহণ করেছেন তাকে। নারী ভক্তদের কাছ থেকে প্রশংসাসূচক ‘কিউট’ শব্দটি শুনতে হয় প্রায়ই। কিন্তু মজার বিষয় হলো, এ তারকা যখন নিজের নাম লিখে গুগলে সার্চ দেন, তখন নাকি ‘পরমব্রত হট পিকস’ অপশনটাই তার সামনে ভেসে ওঠে সবার আগে। কথাটি বলতে বলতেই পরমের মুখে ঝলক দিয়ে উঠল হাসি, ‘জানেন, মাঝেমধ্যে নিজের তাপমাত্রা মেপে দেখি, সত্যিই কি আমি এতটা হট, গুগল আমাকে যতটা বলে?
হঠাৎ বাংলাদেশে কেন? প্রশ্নের জবাবটি ২৩ এপ্রিল বাংলাদেশে আসার পর সংবাদ সম্মেলনেই দিয়েছিলেন। ওইদিন তার মুখে শোনা গিয়েছিল, অনিমেষ আইচ খ্যাপাটে নির্মাতা। অনেকটা এ কারণেই তার সঙ্গে কাজ করতে বাংলাদেশে আসা।
হ্যাঁ, ‘খ্যাপাটে’ বিষয়টি কিন্তু পরমের ভেতরও কম নেই। সব সময় কেমন একটা অস্থিরতা তার চোখজুড়ে। পরমও কবুল করলেন বিষয়টি, ‘আসলে কি, আত্মতৃপ্তি চলে এলে একটা গণ্ডির ভেতর বাধা পড়তে হয়। কিন্তু একটা অস্থিরতা যদি সব সময় কাজ করে, তাহলে নিজেকে নতুনভাবে আবিষ্কারের সুযোগ থাকে অনেক বেশি। তাই সেই অস্থিরতা থেকেই নতুন নতুন আঙ্গিকের কাজ বেছে নেওয়া। বাংলাদেশে আসাটাও বলতে পারেন অনেকটা ওই অস্থিরতার কারণেই।
এফডিসিতে আমাদের সঙ্গে আলাপে কথায় কথায় সেদিন বেরিয়ে এল, এরপর পরিচালক পরমব্রত বানাবেন এমন একটি ছবি, যা ভারত-পাকিস্তানের ওয়াগা সীমান্ত থেকে শুরু হয়ে শেষ হবে ঢাকা শহরে এসে। পরের ছবিতে একটা সফর দেখাবেন তিনি। আমরা বলি, ভয়ংকর সুন্দর আগে শেষ হোক, পরের ছবির কথা নাহয় পরেই জানা যাবে। এর মধ্যে আড্ডায় দাঁড়ি টেনে আবারও শুটিংয়ে ফিরতে হলো পরমব্রতকে। পরিচালক বললেন, ‘অ্যাকশন’ সঙ্গে সঙ্গেই আবারও সেই—‘ফকিরের বাচ্চা, তুই আমার মেয়েকে ভালোবাসিস… !-প্রথমআলো
Discussion about this post