ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সদ্য সমাপ্ত দুই দিনের ঢাকা সফরের দ্বিতীয় দিনে হোটেল সোনারগাঁওয়ে বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার সাথে বৈঠক করেন। ৭ জুন বিকালে অনুষ্ঠিত প্রায় এক ঘণ্টার এই বৈঠকের অন্তত ১০ মিনিট তারা দুজন একান্তে কথা বলেন। এই একান্ত বৈঠকের বিষয়বস্তু নিয়ে বিএনপির পক্ষ থেকে এখনও কিছু আনুষ্ঠানিকভাবে জানানো হয়নি। তবে গত ১০ জুন কলকাতা থেকে প্রকাশিত দৈনিক স্টেটসম্যানের এক খবরে বলা হয়েছে, নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে বৈঠকে বাংলাদেশে গণতন্ত্র নেই বলে নালিশ জানাতে গিয়েছিলেন খালেদা জিয়া। তবে শেষ পর্যন্ত নরেন্দ্র মোদীর করা তিন প্রশ্নে বিব্রতকর অবস্থায় পড়েন বিএনপি চেয়ারপারসন।
প্রতিবেদনে বলা হয়, ওই বৈঠকে তাঁদের মধ্যে কী নিয়ে কথা হয়েছিল তা নিয়ে ঢাকায় প্রচুর জল্পনা-কল্পনা চলছে। বিশ্বস্ত সূত্রের বরাত দিয়ে স্টেটসম্যানের খবরে বলা হয়, মোদী বেগম জিয়ার সঙ্গে সাক্ষাত্কারের কথা মাথায় রেখে আগেভাগেই পুরো হোমওয়ার্ক করে নিজেকে তৈরি করেন। এই বৈঠকের পর বেগম জিয়ার দলীয় মুখপাত্ররা সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, তাঁদের নেত্রী মোদীর কাছে বাংলাদেশে গণতন্ত্র নেই বলে নালিশ করেছেন। তিনি ভারতের প্রধানমন্ত্রীকে বলেন, দেশের সামাজিক ও অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন গণতন্ত্র ও দায়বদ্ধতা। বাংলাদেশে গণতন্ত্র হুমকির মুখে জানিয়ে আশঙ্কা প্রকাশ করে খালেদা জিয়া বলেন, বিএনপি নেতানেত্রী ও বিরোধী দলের ওপর দমন-পীড়ন চলছে। জবাবে মোদী বিএনপি নেত্রীকে বলেন, ভারত গণতন্ত্রকে সমর্থন করে এবং সব ধরনের মৌলবাদ ও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডকে নির্মূল করতে বদ্ধপরিকর।
এরপর নরেন্দ্র মোদী বেগম খালেদা জিয়াকে তিনটি প্রশ্ন করেন, যা তাকে রীতিমত বিব্রতকর অবস্থায় ফেলে। তিনি এসব প্রশ্নের জবাব দিতে ব্যর্থ হন। মোদীর প্রথম প্রশ্ন ছিল—ভারতের রাষ্ট্রপতির (প্রণব মুখার্জি) সঙ্গে যেদিন সাক্ষাতের পূর্বনির্ধারিত কর্মসূচি ছিল সেটা বানচাল করতে কারা সেদিন ঢাকায় হরতাল ডেকেছিল? বেগম জিয়া উত্তরে বলেন, বিএনপি-জামায়াত ও অন্যান্য জোটসঙ্গীরা যৌথভাবে হরতালের ডাক দিয়েছিল। মোদী বেগম জিয়ার জবাবে কোনো মন্তব্য করেননি।
মোদীর দ্বিতীয় প্রশ্ন ছিল, ২০০৪ সালে চীন থেকে গোপনে দশ ট্রাক অস্ত্র চট্টগ্রাম বন্দরে অবৈধভাবে খালাস করে ভারতীয় সন্ত্রাসীদের কাছে পৌঁছে দেয়ার যে আয়োজন করা হয়েছিল সেটা ঘটেছিল আপনার (খালেদা জিয়ার) প্রধানমন্ত্রীত্বের সময়ে। আর সেই গোপন আমদানির সঙ্গে আপনার ক্যাবিনেটের দুই গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রী, স্বরাষ্ট্র ও শিল্পমন্ত্রী জড়িত ছিলেন। শোনা যাচ্ছে আপনি এবং আপনার দল ওই ঘটনার তদন্তে খুব একটা সাহায্য করেননি? সূত্র মতে, বেগম জিয়া এই প্রশ্ন শুনে এতটাই বিব্রত হন যে তিনি তার কোনো জবাবই দিতে পারেননি।
আর তৃতীয় প্রশ্ন ছিল বর্ধমানের খাগড়াগড় বিস্ফোরণ নিয়ে। মোদী জিয়াকে জানান, বর্ধমানের খাগড়াগড় বিস্ফোরণের ঘটনায় তাঁর দলের ও জোটসঙ্গী জামায়াতের নেতাদের সম্পৃক্ততার কথা ভারত-বাংলাদেশ যৌথ তদন্তে উঠে আসছে। বিএনপি ও তার জোটসঙ্গীদের ওইসব দোষীদের আড়াল না করে তাদের শাস্তিদানের জন্য তদন্তকারীদের সাহায্য করার আশ্বাস দেয়া তাঁর নৈতিক দায়িত্ব। সূত্র মতে, এ ব্যাপারেও বেগম জিয়া জবাব দেননি। মোদীর এ প্রশ্নেও তিনি বিড়ম্বনায় পড়ে যান।




Discussion about this post