শনিবার সকালে জাতীয় প্রেসক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলনে সুজন সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার কিছু প্রশ্ন উত্থাপন করেন।
প্রশ্নগুলো হলো- হালনাগাদ কার্যক্রম সম্পর্কে প্রচার প্রচারণা না চালানো, জানুয়ারির পরিবর্তে জুলাই মাসে ভোটার তালিকা হালনাগাদ, ১৫-১৭ বছর বয়সী নাগরিকদের নিবন্ধিত করা।
লিখিত বক্তব্যে বদিউল আলম মজুমদার বলেন, ভোটার তালিকা আইন’২০০৯ এর ধারা ৭ (১) (খ) অনুসারে শুধুমাত্র ১৮ বছর বয়স্ক নাগরিকরাই ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হবে। কিন্তু নির্বাচন কমিশন এবার ১৫-১৭ বছর বয়স্কদের নিবন্ধন করছে। কী উদ্দেশ্যে এটা করা হচ্ছে তা বোধগম্য নয়। কারণ, প্রতি বছর ভোটার তালিকা হালনাগাদ করা কমিশনের দায়িত্ব। তাই আগে থেকে কারো নাম নিবন্ধনের প্রয়োজন নেই।
১৫-১৭ বছর বয়স্কদের নিবন্ধন করা হলে তারা যে ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হয়ে যাবে না বা দুইবার ভোটার হয়ে যাবে না তার নিশ্চয়তা নিয়েও প্রশ্ন তোলেন বদিউল আলম।
তিনি বলেন, আইনের ১১ (১) ধারা অনুসারে প্রতি বছরের ২ জানুয়ারি থেকে ৩১ জানুয়ারি ভোটার তালিকা হালনাগাদ কার্যক্রম পরিচালনার বাধ্যবাধকতা রয়েছে। কিন্তু কমিশন জুলাই থেকে এ কার্যক্রম শুরু করছে। এ ধরনেরর বিলম্ব আইনের সুষ্পষ্ট লঙ্ঘন। ইতোমধ্যে দেশের কোনো কোনো জেলায় বন্যার পূর্বাভাস পাওয়া গেছে। বন্যার কারণে যদি কেউ নিজ বাড়ি-ঘর ছেড়ে অন্যত্র আশ্রয় নেয়, তাহলে তাদের মধ্যে অনেকে বাদ পড়ে যাবে।
লিখিত বক্তব্যে আরো বলা হয়, হালনাগাদ কার্যক্রমে যেন কেউ বাদ না যায়, তার জন্য আগে থেকে বিভিন্ন গণমাধ্যম ব্যবহার করে ব্যাপক প্রচার-প্রচারণা চালানো আবশ্যক। কিন্তু এবার কোনো রকম প্রচার-প্রচারণা চালানো হয়নি। শুধুমাত্র খবরের কাগজে বিজ্ঞাপন ও মোবাইল ফোনে ইংরেজি হরফে একটি এসএমএস চোখে পড়েছে। যা অনেক নাগরিকই পড়তে পারবে না। আবার অনেক নাগরিক খবরের কাগজও পড়ে না। টিভিতে বিজ্ঞাপন দিলে ভালো হতো।
এছাড়া বাড়ি বাড়ি না নিয়ে ভোটার তালিকা প্রণয়ন না করা নিয়েও প্রশ্ন সুজনের। এ বছরের জানুয়ারিতে হালনাগাদের সময় বাড়ি বাড়ি না যাওয়ার অভিযোগ পত্র-পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে। বাড়ি বাড়ি না গেলে অনেকেই ভোটাধিকার থেকে বঞ্চিত হবে।
ড. বদিউল আলম মজুমদার বলেন, সংবিধানের ১১৯ অনুচ্ছেদ অুনসারে দায়িত্ব পালনে নির্বাচন কমিশন দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ হয়েছে। ফলে ভোটার তালিকায় জেন্ডার গ্যাপের মতো একটি গুরুতর, কিন্তু অনাবশ্যক সমস্যা দেখা দিয়েছে। যে কারণে অনেক নারী ভবিষ্যতে ভোটাধিকার থেকে বঞ্চিত হতে পারেন।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন সুজন সভাপতি সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা এম হাফিজ উদ্দিন খান, সাবেক নির্বাচন কমিশনার বিগ্রেডিয়ার জেনারেল (অব.) সাখাওয়াত হোসেন, সুজনের নির্বার্হী সদস্য সৈয়দ আবুল মকসুদ, স্থানীয় সরকার বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক তোফায়েল আহমেদ, সাবেক মন্ত্রিপরিষদ সচিব আলী ইমাম মজুমদার, নারীনেত্রী ও অর্থনীতিবিদ সালমা খান এবং সাবেক রাষ্ট্রদূত নারীনেত্রী নাসিম ফেরদৌস।
এক প্রশ্নের জবাবে সাখাওয়াত হোসেন বলেন, ১৮ বছরের আগে ভোটার হওয়ার আইনগত ভিত্তি নয়। আমি এটা জানি না। তারা কি ভোটার হচ্ছে নাকি শুধু পরিচয়পত্রের জন্য নিবন্ধিত হচ্ছে?
সৈয়দ আবুল মকসুদ বলেন, ছাত্রলীগ-যুবলীগের হাতে দিলে এ নির্বাচন কমিশনের চেয়ে ভালো নির্বাচন করবে। সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য নির্বাচন কমিশন পুর্নগঠন করতে হবে। এ কমিশন পুর্নগঠন না করা হলে নির্বাচন সুষ্ঠু হবে এটা আশা করা যায় না।
তোফায়েল আহমেদ বলেন, কিছু জেলায় নারী ভোটার কমে যাওয়া আইয়ামে জাহেলিয়াতের লক্ষণ। এটা খতিয়ে দেখা দরকার।
শনিবার প্রথমবারের মতো ১৫ বছর বয়সীদের তথ্য সংগ্রহ করবে ইসি। রেজিস্ট্রেশন সম্পন্ন হলে প্রথমে তাদের জাতীয় পরিচয়পত্র দেওয়া হবে। পরে ১৮ বছর পূর্ণ হওয়া সাপেক্ষে স্বয়ংক্রিয়ভাবে তাদের ভোটার তালিকায় যুক্ত করবে ইসি। এক্ষেত্রে যাদের জন্ম ২০০০ সালের ১ জানুয়ারি বা তার আগে তারাই কেবল হালনাগাদের আওতায় আসবেন।
বাড়ি বাড়ি গিয়ে তথ্য সংগ্রহকারীরা তিন ধাপে নাগরিকেদের তথ্য নেবেন। প্রথম ধাপে ১৮৯ উপজেলায়, দ্বিতীয় ধাপে ৬ আগস্ট থেকে ১৮৪ উপজেলায় এবং তৃতীয় ধাপে ৭ সেপ্টেম্বর থেকে ১৪১ উপজেলায় তথ্য সংগ্রহের কথা রয়েছে। তবে এর মধ্যে ৯০টি উপজেলায় তথ্য সংগ্রহের সময়সূচিতে পরিবর্তন এনেছে ইসি।
বর্তমানে দেশে ৯ কোটি ৬২ লাখ ভোটার রয়েছেন। তাদের মধ্যে প্রায় ৯ কোটি ২০ লাখ নাগরিকের জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) রয়েছে। অবশিষ্টদের এখনও দেওয়া হয়নি।
ছবিসহ ভোটার তালিকা কার্যক্রম শুরু হয়েছিল ২০০৮ সালে। এরপর বর্তমান কমিশন ২০১৩ ও ২০১৪ সালে দুইবার হালনাগাদ করেছে।
Discussion about this post