অবশেষে জননীর আদর পেল মাতৃগর্ভে গুলিবিদ্ধ মাগুরার সেই শিশুটি। মাতৃদুগ্ধও পান করেছে সে। আধা ঘণ্টারও বেশি সময় মায়ের কোলে থেকে এখন আবারও ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের নবজাতকদের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (এনআইসিইউ) ঘুমোচ্ছে সে।
নাজমার কন্যার নাম রাখা হয়েছে সুরাইয়া বেগম। সন্তান সুরাইয়াকে প্রায় আধা ঘণ্টা কোলে আগলে রাখেন নাজমা। এরপর দুগ্ধ পান করান। কিছু সময় পর সুরাইয়া ঘুমিয়ে গেলে তাকে আবারও কাঁচের ঘরে রেখে দেওয়া হয়। নাজমাকে ফিরিয়ে আনা হয় তার ওয়ার্ডে।
শিশু কন্যাকে কোলে নেওয়ার পর নাজমা আবেগাপ্লুত স্বরে বলেন, আমাকে যখন আমার কলিজার টুকরোর ওয়ার্ডে নিয়ে যাওয়া হলো, তখন কেমন লাগছিল বলতে পারবো না। দেখলাম ওকে কাঁচের ঘরে শুইয়ে রাখা হয়েছে। পরে একজন চিকিৎসক আমার কলিজাকে আমার কোলে তুলে দেন। কী বলবো, মায়ের যে কী অনুভূতি, আপনারা বুঝবেন না।
নাজমা আরও বলেন, আমার মানিককে নিয়ে চেয়ারে বসলাম। দেখলাম আমার মেয়ে আমার দিকে তাকিয়ে আছে। হাত মুঠো করে কামড় দেওয়ার চেষ্টা করছে। আধা ঘণ্টার বেশি সময় তাকে কোলে রাখতে পেরেছি। এরপর দুগ্ধ পান করাই। দুগ্ধ পানের কিছু পরই সুরাইয়া ঘুমিয়ে পড়ে। ঘুমন্ত অবস্থায়ও আমার কোলে কিছুক্ষণ ছিল। পরে চিকিৎসকরা আবার কলিজার টুকরোকে কাঁচ ঘরে শুইয়ে দেন।
নিজের ওয়ার্ডে ফিরে আসা নাজমা বেগমও অনুরোধ করেন, তার মেয়ে সুরাইয়াকে যেন কেউ ‘বুলেট বেগম‘ না ডাকে। মঙ্গলবার (৪ আগস্ট) এই অনুরোধ করেছিলেন সুরাইয়ার বাবা বাচ্চু ভূঁইয়া।
সুরাইয়ার তত্ত্বাবধানে থাকা ঢামেকের শিশু সার্জারি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. কানিজ হাসিনা শিউলী জানান, শিশুটিকে মায়ের আদর পাওয়ার সুযোগ করে দেওয়া হয়েছে। তার অবস্থা আগের চেয়ে অনেক ভালো আছে।
আগামী শনিবারের (৮ আগস্ট) মধ্যেই সুরাইয়াকে এনআইসিইউ ওয়ার্ড থেকে বের করে আনা যাবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন সুরাইয়া।
আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে গত ২৩ জুলাই মাগুরা শহরের দোয়ারপাড়ায় সাবেক ছাত্রলীগকর্মী কামরুল ভুঁইয়ার সঙ্গে সাবেক যুবলীগকর্মী মহম্মদ আলী ও আজিবরের সমর্থকদের সংঘর্ষ হয়।
এসময় কামরুলের বড় ভাই বাচ্চু ভূঁইয়ার অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রী নাজমা বেগম (৩০) ও প্রতিবেশি মিরাজ হোসেন গুলিবিদ্ধ হন। কামরুলের চাচা আব্দুল মোমিন ভূঁইয়া গুলিতে নিহত হন।
ওই রাতেই মাগুরায় অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে নাজমার গুলিবিদ্ধ শিশুটি ভূমিষ্ঠ হয়। দুই দিন পর তাকে ঢাকা মেডিকেলে পাঠানো হয়।




Discussion about this post