বিচারাঙ্গনে বিগত বছরগুলোর তুলনায় এ বছর মামলা নিষ্পত্তির হার বেড়েছে। সুপ্রিমকোর্টের হাইকোর্ট ও আপিল বিভাগে এবং দেশের অধঃস্তন আদালতে গত বছরের তুলনায় এ বছর মামলা নিস্পত্তির হার অনেক বেড়েছে। আপিল বিভাগে গত বছরের তুলনায় এ বছর প্রায় দ্বিগুণ মামলা নিষ্পত্তি হয়েছে।<br /> সুপ্রিমকোর্ট সূত্র জানায়, জানুয়ারি থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত আপিল বিভাগে নিষ্পত্তি হয়েছে আট হাজার ৫২৯টি ও হাইকোর্ট বিভাগে নিষ্পত্তি হয়েছে ২৩ হাজার ৬৯০টি মামলা। ২০১৪ সালে আপিল বিভাগে নিষ্পত্তি হয়েছে পাঁচ হাজার ৯১১টি এবং হাইকোর্ট বিভাগে নিষ্পত্তি হয়েছে ২২ হাজার ৪৪৭টি।<br /> গত বছরের তুলনায় নিম্ন আদালতেও মামলা নিষ্পত্তির হার এ বছর বৃদ্ধি পেয়েছে। এ বছর জানুয়ারি থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত দেশের জেলা, দায়রা, বিভিন্ন ট্রাইব্যুনাল ও ম্যাজিস্ট্রেট আদালতগুলোতে মামলা নিষ্পত্তি হয়েছে ১০ লাখ ৬৭ হাজার ৭৩৩টি। গত বছরের জানুয়ারি থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত নিষ্পত্তি হয়েছে প্রায় ১২ লাখ। সূত্র জানায়, এ বছরের ডিসেম্বর পর্যন্ত মামলার পরিসংখ্যান এখনো প্রস্তুত হয়নি। তবে এ বছর নিষ্পত্তি হওয়া মামলার সংখ্যা প্রায় ১৫ লাখ হতে পারে বলেও সূত্র জানায়।<br /> প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার নেয়া বিভিন্ন উদ্যোগের কারণে মামলা নিষ্পত্তির হার বেড়েছে বলে সংশ্লিষ্টরা জানায়। দ্রুত মামলা নিষ্পত্তি করতে সুপ্রিমকোর্টের উভয় বিভাগ, দেশের সব আদালতের বিচার কার্যক্রমের সময় বৃদ্ধি, অধঃস্তন আদালতের বিচারিক কার্যক্রমের তথ্য সুপ্রিমকোর্টে প্রেরণসহ প্রধান বিচারপতি বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করেছেন। এসব পদক্ষেপের ফলে মামলাজট কমছে। এতে বিচারপ্রার্থীদের ভোগান্তিও কমছে।<br /> সুপ্রিমকোর্টের রেজিষ্ট্রার জেনারেল সৈয়দ আমিনুল ইসলাম জানান, প্রধান বিচারপতির নির্দেশে আদালতের সব ক্ষেত্রে প্রযুক্তি ব্যবহার, মামলা জট কমানো, দ্রুত বিচার কাজ শেষ করতে বিভিন্ন নির্দেশনা জারি করা হয়। সুপ্রিমকোর্টের উভয় বিভাগের কার্যতালিকা ১ নভেম্বর থেকে অনলাইনে প্রদর্শন কার্যকর হয়। গুরুত্বপূর্ণ মামলা নিস্পত্তি সংক্রান্ত তথ্য ও নিউজ এখন সুপ্রিমকোর্টের ওয়েবসাইটে অনলাইনে (নিউজ আবডেট) দেয়া হচ্ছে। বিচার বিভাগকে ডিজিটাইজেশনের অংশ হিসেবে উচ্চ আদালতে দেয়া জামিন আদেশ এখন অনলাইনে নিশ্চিতকরণ করা হয়।<br /> বিচারাঙ্গনে গুরুত্বপূর্ণ অবদানের স্বীকৃতি স্বরূপ প্রধান বিচারপতি পুরস্কার চালু করতে যাচ্ছে সুপ্রিমকোর্ট প্রশাসন। সুপ্রিমকোর্ট সূত্র জানায়, বিচারাঙ্গনে বিচারকসহ বিভিন্ন সংস্থা বা প্রতিষ্ঠানের অবদানের মূল্যায়ন, উচ্চ আদালত এবং নিম্ন আদালতের বিচারকদের মামলা নিষ্পত্তির গতি, দক্ষতা, যোগ্যতা, মেধা, সততা বিষয়ে মূল্যায়ন করতে এবং এসব ক্ষেত্রে উৎসাহ আরো বাড়াতে এ পুরস্কার প্রদানের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।<br /> বিচারপ্রার্থী জনগোষ্ঠিকে আইনি সেবা প্রদানে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে এবং দাপ্তরিক ও বিচারিক সেবার মানোন্নয়নে সুপ্রিমকোর্টের রেজিস্ট্রার কার্যালয়ে অভিযোগ-পরামর্শ বাক্স স্থাপন করা হয়েছে। এ অভিযোগ-পরামর্শ বাক্সে বিচারপ্রার্থী, আইনজীবীসহ সংশ্লিষ্ট সকলকে সৃজনশীল ধ্যান-ধারনা এবং মূল্যবান মতামত প্রদান করতে অনুরোধ করা হয়েছে।<br /> সারা দেশের অধঃস্তন আদালতসমূহে বিচারাধীন মামলার আধিক্য হ্রাস, মামলা নিস্পত্তিতে দীর্ঘসূত্রিতা পরিহার এবং সর্বোপরি দ্রুত বিচার নিস্পত্তির লক্ষ্যে সারা দেশের আদালতে কর্মরত সকল পর্যায়ের বিচার বিভাগীয় কর্মকর্তাগণকে ছুটির দিনেও কর্মস্থলে অবস্থান করা এবং সুপ্রিমকোর্টের রেজিস্ট্রারকে অবহিতকরন ছাড়া কর্মস্থল ত্যাগ না করতে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। নির্দেশনার আলোকে সংশ্লিষ্টরা কার্যক্রম চালাচ্ছে। ফলে ইতিবাচক ফল আসছে বলে মত দেয় সংশ্লিষ্টরা।</p>




Discussion about this post