বিভিন্ন অপরাধের অভিযোগে সংশ্লিষ্ট পুলিশ সদস্যকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। তবে তাদের বিরুদ্ধে সহসাই মামলা হচ্ছে না, তদন্তও হচ্ছে না। এ বিষয়ে জানতে চাইলে মানবাধিকার নেত্রী সিগমা হুদা আমাদের অর্থনীতিকে বলেন, পুলিশের ঘটনার মামলায় পুলিশ তদন্ত করতে পারবে না-এ সংক্রান্ত হাইকোর্টের রায় রয়েছে। কিন্তু পুলিশ ওই রায়ের কথা ভুলে গেছে। এছাড়া কোনো পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধে সাধারণ মানুষের মামলা গ্রহণেও অনীহা রয়েছে থানা পুলিশের। পরে ভুক্তভোগীরা বাধ্য হয়ে দারস্থ হন আদালতের। এক্ষেত্রে পুলিশ কর্মকর্তাদের বক্তব্য, সব মামলাই তদন্ত করে অভিযোগের প্রমাণ পেলে মামলা নথিভুক্ত করা হয়। কিন্তু সম্প্রতি রাজধানীর তিনটি ও যশোরের একটি ঘটনায় সংশ্লিষ্ট পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা বলতে কেবল সাময়িক বরখাস্তই করা হয়েছে। কিন্তু তাদের বিরুদ্ধে কোনো মামলা দায়ের করা হবে কি না তা পুলিশ কর্মকর্তারাই বলতে পারছেন না। তবে পুলিশকর্তারা বলছেন, এসব ঘটনায় গঠিত তদন্ত কমিটির পক্ষ থেকে প্রতিবেদন না দেওয়ায় মামলা করা যাচ্ছে না।</p> সিগমা হুদা বলেন, ওই রায়ে উচ্চ আদালত বলেছে, সিআরপিসি ও পুলিশ অ্যাক্ট অনুসারে পুলিশ এসব তদন্ত করতে পারে না। বেশ কয়েক বছর আগে রাজধানীর বিজয় নগরে মনি বেগম নামে এক মহিলার কাপড় ধরে টানাটানি করেন এক পুলিশ সদস্য। ওই ঘটনায় মামলা হলে পুলিশই তার তদন্ত করে। এর বিরুদ্ধে আমি হাইকোর্টে যাই। এরপর আদালত থেকে ওই রায় আসে।</p> তিনি বলেন, আইজিপি বলেছেন, এসব ঘটনায় পুলিশের প্রতি মানুষের অনাস্থা বাড়ে। তাহলে তারা বিচার বিভাগীয় তদন্ত করাচ্ছেন না কেন? সভ্য দেশে এটা উচিত নয়। আর অনেক দিন হয়ে গেলে আদালতের রায়ও তারা ভুলে যান।</p> জানতে চাইলে আরেক মানবাধিকার নেত্রী এলিনা খান বলেন, পুলিশের এসব ঘটনায় প্রশাসনিক তদন্ত হয়। পুলিশের ঘটনায় পুলিশই তদন্ত করে। সুতরাং এটা সাকসেস হবে না। সে জন্য বিচার বিভাগীয় তদন্ত হওয়া দরকার। তিনি বলেন, খুব বড় ঘটনা না হলে সাধারণ মানুষ তো মিডিয়া বা পুলিশের কাছে যেতে পারে না। তাই প্রতিকার পাওয়ার সম্ভাবনাও থাকে না।</p> এলিনা খান বলেন, এসব কথা বার বার আমরা কেবল বলতেই পারি। কিন্তু এর বাস্তবায়ন করতে হলে দরকার রাষ্ট্রের সদিচ্ছা। তাছাড়া পুলিশেরও সদিচ্ছার অভাব বলে মনে করেন তিনি। পরামর্শ দিয়ে তিনি বলেন, পুলিশের সব সদস্য তো খারাপ নয়। কিন্তু হাতেগোনা কয়েকজন সদস্যের জন্য পুরো বাহিনীর বদনাম হয়। তাই বিচার বিভাগীয় তদন্ত হলে পুরো বাহিনীর সম্মানও রক্ষা পাবে।</p> জানা যায়, গত বৃহস্পতিবার যশোরে সুইডিশ ও বাংলাদেশের দ্বৈত নাগরিকের কাছ থেকে ৩ হাজার ইউএস ডলার ছিনিয়ে নেওয়ার ঘটনায় অভিযুক্ত এসআই এজাজুর রহমানসহ ৫ পুলিশকে প্রত্যাহার করা হয়েছে। পুলিশ লাইনে ক্লোজড হওয়া অপর ৪ সদস্য হলেন- আজিজুর রহমান, মামুন হোসেন, বাবর আলী ও জিয়াউল হাসান।</p> যশোর জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার কে এম আরিফুল হক জানিয়েছেন, বিনা অনুমতিতে তল্লাশি ও চৌকি বসিয়ে যাত্রীদের তল্লাশির নামে হয়রানি করার অভিযোগে এসআই এজাজসহ ৫ কনস্টেবলকে লাইনে ক্লোজড করা হয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা হচ্ছে। তবে গতকাল পর্যন্ত তাদের বিরুদ্ধে কোনো মামলা দায়েরের খবর পাওয়া যায়নি।</p> এদিকে গত ৯ জানুয়ারি কেন্দ্রীয় ব্যাংক কর্মকর্তা গোলাম রাব্বীকে নির্যাতনের অভিযোগ ওঠার পর সমালোচনার মধ্যে থাকা পুলিশ কর্তৃপক্ষ বাহিনীর কর্মকর্তা মাসুদ শিকদারকে সাময়িক বরখাস্ত করেছে। অভিযোগ ওঠার পর এসআই মাসুদকে থানা থেকে সরিয়ে নেওয়া হয়েছিল। বিষয়টি নিয়ে গভর্নর আতিউর রহমান পুলিশ প্রধানকে চিঠি পাঠানোর দুদিন পর সাময়িক বরখাস্তের আদেশ দেওয়া হয়।</p> এরপর ঘটনাটি তদন্তের জন্য ডিএমপির মোহাম্মদপুর জোনের সহকারী কমিশনার হাফিজ আল ফারুককে দায়িত্ব দেওয়া হয়। তদন্তে প্রাথমিকভাবে অভিযোগের সত্যতা পাওয়া গেছে বলে পুলিশের একটি দায়িত্বশীল সূত্র জানালেও ২০ দিনেও তদন্ত প্রতিবেদন দেওয়া হয়নি।</p> এছাড়া রাজধানীর যাত্রাবাড়ীতে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের এক কর্মকর্তাকে পেটানোর ঘটনার তদন্ত চলছে ঢিমেতালে। এ ঘটনায়ও তিন পুলিশকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। কিন্তু তাদের বিরুদ্ধেও কোনো মামলা দায়ের করেনি পুলিশ।</p> তাছাড়া গত রোববার রাতে রাজধানীর উত্তরায় এক তরুণ ব্যবসায়ীকে তার বান্ধবীসহ রাতভর আটকে রেখে আড়াই লাখ টাকা মুক্তিপণ আদায়ের অভিযোগে তিন পুলিশ সদস্যকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। এ ঘটনায় ভুক্তভোগী ওই ব্যবসায়ী একটি অভিযোগ করলেও তা আমলে নেওয়া হয়নি। তাছাড়া মামলা করা হয়নি অভিযুক্ত পুলিশ সদস্যদের বিরুদ্ধে।</p>




Discussion about this post