বাংলাদেশের অর্ধেক নারীকে বঞ্চিত করে সামাজিক-অর্থনৈতিক উন্নয়ন সম্ভব না বলে মন্তব্য করেছেন প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার (এসকে) সিনহা। শনিবার (২০ ফেব্রুয়ারি) সন্ধ্যায় রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে জাতীয় মহিলা আইনজীবী সমিতির আয়োজিত ‘উইমেন ল’ ইয়ার্স কনভেনশন’ এ প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
ধর্ষিতা নারীর আইনের ধারায় ত্রুটি আছে বলে মন্তব্য করে এ বিষয়ে নারী আইনজীবীদের কাজ করার আহ্বান জানান প্রধান বিচারপতি।
তিনি বলেন, জাতীয় উন্নয়ন বিশেষ করে সমাজে শান্তি প্রতিষ্ঠা করতে হলে নারীর অধিকার প্রতিষ্ঠা জরুরি। নারীর প্রতি সহিংসতা বিশেষ করে যৌন হয়রানি রোধে কার্যকর পদক্ষেপ নেয়ার বিষয়ে প্রধান বিচারপতি বলেন, কার্যকর আইন ছাড়া কর্মক্ষেত্রে নারীর প্রতি যৌন হয়রানি বন্ধ সম্ভব নয়। পাশাপাশি দেশে সাক্ষ্য আইনের ১৫৫ ধারায় ধর্ষিতার স্বপক্ষে সাক্ষ্যের বিষয়ে বিদ্যমান বিধানে থাকা ত্রুটি দূর করতে মহিলা আইনজীবীদের সোচ্চার হওয়ার আহ্বান জানান।
প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহা বলেন, নারীর প্রতি সহিসংসা শুধুই বাংলাদেশের নিজস্ব সমস্যা নয়। এটা আন্তর্জাতিক সমস্যা। তবে আশার কথা হলো, নারীর উন্নয়ন, সহিংসতা রোধ এবং ক্ষমতায়নে সরকার ব্যাপক পদক্ষেপ নিয়েছে। সিডও অনুসরণ করে বাংলাদেশ সরকার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন বিশেষ আইন, অ্যাসিড সন্ত্রাস প্রতিরোধ আইনসহ নারীর নির্যাতন প্রতিরোধের বিষয়ে বিদ্যমান আইন একের পর এক সংশোধন করছে।
তিনি আরো বলেন, দেশের বড় বড় সরকারি মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ওয়ান স্টপ ক্রাইসিস সেন্টার স্থাপন করা হয়েছে। মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের অধীনে একটি বিভাগ রয়েছে, নির্যাতিত ও অধিকার বঞ্চিত নারীদের অভিযোগ নিষ্পত্তির জন্য। এ বিভাগ অগ্রাধিকার ভিত্তিতে এসব অভিযোগ আমলে নিয়ে সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করছে।
নারীর ক্ষমতায়নে বাংলাদেশ অনেকদূর এগিয়েছে জানিয়ে প্রধান বিচারপতি বলেন, দেশের প্রধানমন্ত্রী নারী, বিরোধী দলীয় নেতা নারী, জাতীয় সংসদের স্পিকার নারী। দেশের অন্যতম একটি রাজনৈতিক দলের প্রধান নারী।
তিনি বলেন, তৈরি পোশাক শিল্পে ৯০ ভাগ কর্মী নারী। প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষক নিয়োগে তাদের সর্বনিম্ন শিক্ষাগত যোগ্যতা দেখা হয়। নিম্ন আদালতে বিচারক নিয়োগে শতকরা ১০ ভাগ কোটা নারীর জন্য সংরক্ষণ করা হয়েছে। এরপরও মেধার ভিত্তিতে ৪০ থেকে ৪৫ ভাগ নারী বিচারক নিয়োগ হচ্ছে। নিম্ন আদালতে বিচারকদের মধ্যে ২৫ ভাগই নারী বিচারক। যা যুক্তরাজ্যসহ পৃথিবীর অন্যান্য উন্নত দেশের তুলনায় অনেক বেশি।
দেশের সর্বোচ্চ আদালত হাইকোর্ট বিভাগে ৬ জন নারী বিচারপতি রয়েছেন বলে জানান তিনি।
নারীর অধিকার রক্ষায় দেশের সর্বোচ্চ আদালত অগ্রণী ভূমিকা রাখছে উল্লেখ করে প্রধান বিচারপতি বলেন, মহিলা আইনজীবী সমিতির পক্ষ থেকে জনস্বার্থে একটি রিট আবেদন করা হয়েছিল। এ আবেদন বিবেচনায় নিয়ে হাইকোর্ট কর্মক্ষেত্রে ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে নারীর যৌন হয়রানি রোধে একটি গাইডলাইন করে দিয়েছিল। যতক্ষণ পর্যন্ত এক্ষেত্রে সংসদ একটি কার্যকর আইন প্রনয়ণ না করে ততক্ষণ পর্যন্ত আইন হিসেবে বিবেচনা করতে তা মেনে চলতে বলা হয়। দেশের সর্বোচ্চ আদালত নারীর অধিকার রক্ষায় নির্দেশনা দিয়েছে।
রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে সমিতির সভাপতি অ্যাডভোকেট ফাওজিয়া করিম ফিরোজের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এ সম্মেলনে সমিতির প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক অ্যাডভোকেট সিগমা হুদা, নির্বাহী পরিচালক অ্যাডভোকেট সালমা আলী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন অনুষদের অধ্যাপক ড. শাহনাজ হুদা, ভারতের সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী অ্যাডভোকেট অর্পনা ভাট (ফেলানী হত্যার অভিযোগে ভারতে বিচারাধীন মামলায় বাংলাদেশ মহিলা আইনজীবী সমিতি নিযুক্ত ফেলানীর পরিবারের পক্ষের আইনজীবী), নেপালের মানবাধিকতার কমিশনের সদস্য মোহনা আনসারী বক্তব্য রাখেন।
অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ পাঠ করেন সমিতির সদস্য ব্যারিস্টার তানিয়া ফেরদৌস।
Discussion about this post