
বাংলাদেশে ধূমপানের ফলে নারীদের পরোক্ষ আক্রান্ত হওয়ার হার অনেক বেশি। যার সংখ্যা প্রায় এক কোটি। আর দিন দিন এ হার বেড়েই চলেছে। এর কারণে সরাসরি ধূমপান না করেও ধূমপানজনিত বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন নারীরা। এ অবস্থার পরিবর্তনে পরোক্ষ ধূমপান থেকে নারীকে রক্ষা করতে তামাক নিয়ন্ত্রণ আইনের পূর্ণ বাস্তবায়নের ওপরেই জোর দিচ্ছেন সংশ্লিষ্টরা।
গ্লোবাল এডাল্ট টোবাকো সার্ভে অনুসারে, বাংলাদেশে ৪ কোটি ১৩ লাখ লোক পরোক্ষভাবে ধূমপানের শিকার। এর মধ্যে ১ কোটি নারী। কর্মক্ষেত্রে ৬৩ শতাংশ, পাবলিক প্লেসে ৪৫ শতাংশ মানুষ ধূমপান করছে। শুধুমাত্র দেশের সব রেস্তোরাঁ ও হোটেলে ২ কোটি ৫৮ লাখ মানুষ ধূমপান করছে।
বাংলাদেশ জাতীয় যক্ষ্মা নিরোধ সমিতির (নাটাব) তথ্যমতে, দেশের ৩০ ভাগ নারী কর্মস্থলে এবং ২ দশমিক ১ ভাগ নারী পাবলিক প্লেসে পরোক্ষ ধূমপানের শিকার। দেশের কর্মক্ষেত্র ও পাবলিক প্লেস ছাড়াও নিজ গৃহেও পরোক্ষ ধূমপানের শিকার হচ্ছেন। প্রজ্ঞার দেয়া তথ্যানুযায়ী, দেশে বর্তমানে নারী ধূমপায়ীর সংখ্যা প্রায় ৭ লাখ। আর ১ কোটি ৩০ লাখের ওপরে ধোঁয়াবিহীন জর্দা, সাদাপাতা, গুল তামাকজাত দ্রব্য সেবনে অভ্যস্ত। ধোঁয়াবিহীন তামাক ব্যবহারে শতকরা ২৮ জন নারী এবং শতকরা ২৬ জন পুরুষ। প্রত্যক্ষ ধূমপানের হার পুরুষের মধ্যে অনেক বেশি। ৪৫ ভাগ পুরুষ এবং ১.৫ ভাগ নারী সিগারেটের মাধ্যমে এবং ২১ ভাগ পুরুষ ও ১ দশমিক ১ ভাগ নারী বিড়ির মাধ্যমে ধূমপান করেন। তবে পুরুষদের ধূমপানের ফলে নারীদের পরোক্ষ ধূমপানের শিকার হওয়ার হার অনেক বেশি। পরোক্ষ ধূমপান পুরুষের তুলনায় নারীর ওপর বেশি ক্ষতিকর প্রভাব ফেলে। পরোক্ষ ধূমপানের কারণে বিশ্বে প্রতিবছর প্রায় ৮১ লাখ নারী মৃত্যুবরণ করেন।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (হু) তথ্যানুযায়ী, বাংলাদেশে ২৯ ভাগ নারী সরাসরি তামাক ব্যবহারকারী। তার মধ্যে ধোঁয়াবিহীন তামাক সেবনের হার ২৮ ভাগ। ১ দশমিক ৫ ভাগ নারী সিগারেট এবং ১ দশমিক ১ ভাগ নারী বিড়ির মাধ্যমে ধূমপান করেন। আগামীতে নারীদের ধূমপান তিনগুণ বাড়বে। বিশ্বজুড়ে প্রায় ৫৩ কোটি নারী আগামীতে ধূমপায়ী হয়ে উঠবে। যার মধ্যে ৮০ শতাংশই উন্নয়নশীল দেশেই হবে। দক্ষিণ এশিয়াতে ধূমপায়ী নারীর হার ৩ শতাংশ। তামাক এবং বিড়ি সিগারেটের ধোঁয়ায় ৭ হাজারের বেশি ক্ষতিকর রাসায়নিক পদার্থ রয়েছে এবং তামাক ব্যবহারের প্রত্যক্ষ ফল হিসেবে বাংলাদেশে ত্রিশোর্ধ জনগোষ্ঠীর মধ্যে ৫৭ হাজার মানুষ প্রতিবছর মৃত্যুবরণ করছে এবং ৩ লাখ ৮২ হাজার মানুষ পঙ্গুত্ববরণ করছে।
গবেষকদের মতে, ধূমপান ও তামাকজাত দ্রব্য সেবনের ফলে ২৫টি প্রাণঘাতী রোগের প্রধান কারণ চিহ্নিত করা হয়েছে। তামাক বলতে শুধু বিড়ি বা সিগারেট সেবনকে বুঝায় না। পানের সঙ্গে জর্দ্দা, সাদা, গুল, খৈনি, নার্সি ইত্যাদিকেও বুঝায়। পরোক্ষ ধূমপানের প্রভাবে নারীর ক্ষতির বিষয়টি গবেষকদের কাছে অত্যন্ত উদ্বেগের। বিশেষ করে গর্ভবতী নারীরা খুবই ক্ষতির ঝুঁকিতে থাকে। গর্ভবতী নারীর ক্ষেত্রে পরোক্ষ ধূমপানে গর্ভপাত, মৃতশিশু জন্ম দেয়া ও জন্মকালীন শিশুর স্বল্প ওজন দেখা দিতে পারে।
নারীর পরোক্ষ ধূমপান প্রসঙ্গে ডব্লিউবিবি ট্রাস্টে প্রোগ্রাম ম্যানেজার সৈয়দা অনন্যা রহমান বলেন, ধোঁয়াবিহীন এবং ধোঁয়াযুক্ত সব ধরনের তামাকজাত দ্রব্যই স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর। ধূমপায়ী না হয়েও অনেককে বিশেষ করে নারী এবং শিশুদের পরোক্ষ ধূমপানের ফলে এর ক্ষতির শিকার হতে হয়। তামাক সেবন ও পরোক্ষ ধূমপান থেকে নারীদের রক্ষায় জর্দা, গুল, সাদাপাতা, বিড়ি, সিগারেটসহ সব ধরনের তামাকজাত দ্রব্যের মোড়কে আইন অনুসারে ছবিসহ স্বাস্থ্য সতর্ক বাণী নিশ্চিতের পাশাপাশি সব ধরনের তামাকজাত দ্রব্যের ওপর উচ্চহারে করারোপ এবং ধূমপানমুক্ত পরিবেশ গড়ে তুলতে হবে। বাংলাদেশ সরকার এ বিষয়ে আইন প্রণয়ন করেছে কিন্তু কোম্পানিগুলো নানাভাবে আইনের লঙ্ঘন করে জনগণকে তামাকজাত দ্রব্যের প্রতি আকৃষ্ট করার চেষ্টায় লিপ্ত রয়েছে। আইনের কার্যকর বাস্তবায়ন এবং আইন লঙ্ঘনকারী তামাক কোম্পানিগুলোকে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি প্রদান করতে হবে।




Discussion about this post