
ব্যাংকের এটিএম বুথে জালিয়াতির ঘটনায় প্রভাবশালী ব্যবসায়ীসহ কয়েকজন জড়িত রয়েছে। আটক ইউক্রেনীয় বংশোদ্ভূত জার্মান পিওতর সিজোফেন মাজুরেকের দেয়া এ তথ্যের সত্যতা পেয়েছে গোয়েন্দা পুলিশ। তবে প্রভাবশালী কাউকে গ্রেপ্তার করা হয়নি।
পিওতর গোয়েন্দা পুলিশের পাশপাশি আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে শতাধিক ব্যক্তির নামসহ জালিয়াতির বিষয়ে তথ্য দেন। স্বীকারোক্তিতে বলেন, এটিএম কার্ড শাখার কতিপয় কর্মকর্তাদের পাশাপাশি ট্রাভেল এজেন্ট, হোটেল ব্যবসায়ী ও পুলিশের এক সদস্য এটিএম কার্ড জালিয়াতিতে তাকে সহযোগিতা করেছেন। এছাড়া জার্মান ও ইউক্রেনসহ ইংল্যান্ডে বসবাসকারী কয়েকজন বাংলাদেশি নাগরিকও তাকে এ কাজে সহযোগিতা করেন। তার ওই দাবির সত্যতা পেয়েছেন গোয়েন্দারা।
ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) গোয়েন্দা শাখার (ডিবি) এক কর্মকর্তা গণমাধ্যমকে জানান, কয়েক দফা রিমান্ডে পিওতরের কাছ থেকে ব্যাংকের এটিএম জালিয়াতির ঘটনায় প্রভাবশালী অন্তত ৫০ ব্যবসায়ীসহ শতাধিক ব্যক্তির নাম পাওয়া যায়। এছাড়া পিওতরের মোবাইল ফোন জব্দ করে পূর্ব ইউরোপের কালো তালিকাভুক্ত বেশ কয়েকজনের নাম পাওয়া গেছে। সেই সঙ্গে জালিয়াতির মাধ্যমে হাতিয়ে নেয়া টাকা বিদেশে পাচার-সংক্রান্ত গুরুত্বপূর্ণ তথ্যেরও সত্যতা পাওয়া গেছে। তবে জিজ্ঞাসাবাদে পিওতর যাদের নাম বলেছেন তাদের বেশিরভাগই প্রভাবশালী ব্যবসায়ী। এদের মধ্যে আন্তর্জাতিক চক্রের সদস্যদের গ্রেপ্তার করতে ইন্টারপোলের সহযোগিতা নেয়া হচ্ছে। আর দেশি চক্রের সদস্যদের ধরার চেষ্টা চলছে।
পিওতর জিজ্ঞাসাবাদে জানান, ২০১৫ সালে বাংলাদেশে এসে প্রথমে তিনি খান এয়ার ট্র্যাভেলসের সঙ্গে মানবসম্পদ রপ্তানির কাজ শুরু করেন। এক পর্যায়ে খান ট্রাভেলসের মালিক ও কর্মচারীদের মাধ্যমে পিওএস নামের একটি মেশিনের মাধ্যমে জাল কার্ড প্রস্তুত করে ব্যাংক থেকে টাকা তুলতে শুরু করেন তারা। পরে ব্যাংকের এটিএম বুথে বিশেষ যন্ত্র (স্কিমিং ডিভাইস) বসিয়ে বাংকের কার্ড ডিভিশনের কর্মকর্তাদের মাধ্যমে গ্রাহকদের কার্ডের ব্যক্তিগত তথ্য সংগ্রহ করে বানানো হয় ক্লোন কার্ড।
ডিবি সূত্রে জানা যায়, স্বীকারোক্তিতে জালিয়াতির মাধ্যমে এ পর্যন্ত পাঁচ থেকে ছয় কোটি টাকা হাতিয়ে নেয়ার দাবি করেছেন পিওতর। তদন্তে পিওতরের দাবির পক্ষে প্রমাণ পাওয়া গেছে। এর বাইরে পিওতরের দুজন বন্ধু ২৬ হাজার ডলার নিয়ে দেশ ত্যাগ করেছেন বলে তথ্য মিলেছে।
দ্বিতীয় দফা রিমান্ড শেষে গত বৃহস্পতিবার পিওতরকে আদালতে পাঠানো হয়। সেখানে তিনি স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন। পরে গুলশান থানার আরেক মামলায় পিওতরকে গ্রেপ্তার দেখিয়ে ১০ দিনের রিমান্ডে নেওয়ার আবেদন করা হয় অপর একটি আদালতে। ওই আদালত পাঁচ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করে আদেশ দেন।
গত ৬ থেকে ১২ ফ্রেব্রুয়ারির মধ্যে রাজধানীর ইস্টার্ন, সিটি ও ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংকের (ইউসিবি) চার বুথে ‘স্কিমিং ডিভাইস’ বসিয়ে কার্ডের তথ্য চুরি করে পরবর্তী সময়ে কার্ড ক্লোন করে গ্রাহকদের অজান্তে টাকা তুলে নেওয়া হয়। ওই ঘটনায় ১৪ ফেব্রুয়ারি ইউসিবি কর্তৃপক্ষ জালিয়াতির অভিযোগে গুলশান থানায় মামলা করে। একইদিন সিটি ব্যাংকের দায়ের করা তথ্যপ্রযুক্তি আইনের মামলায় বলা হয়, বনানীতে একটি বুথে স্কিমিং ডিভাইস বসানোর সময় ক্লোজড সার্কিট ক্যামেরার ভিডিও ফুটেজে এক বিদেশীর ছবি পাওয়া গেছে। এরপর গত ২২ ফেব্রুয়ারি পিওতরসহ সিটি ব্যাংকের তিন কর্মকর্তা মোকসেদ আল মাকসুদ, রেজাউল করিম ও রেফাত আহমেদ ওরফে রনিকে গ্রেপ্তার করা হয়। তাদের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে গ্রেপ্তার করা হয় মানি এক্সচেঞ্জের কর্মকর্তা হুমায়ন কবির ও আইটি সল্যুশনের কর্মকর্তা সাইফুজ্জামানকে। পিওতর ছাড়া অন্যরা বর্তমানে কারাগারে আছেন।




Discussion about this post