যুক্তরাষ্ট্রের অরল্যান্ডো শহরের ‘পালস’ নামের সমকামী নাইটক্লাবটিতে রোববার ভয়াবহতম বন্দুক হামলার ঘটনায় মুসলিম যুবক ওমর মতিনের নাম ওঠে এসেছে। পশ্চিমা সংবাদ মাধ্যমগুলোতে ইতিমধ্যে তার একাধিক ছবি প্রকাশিত হয়েছে। এখন সবাই এই যুবক সম্পর্কে আগ্রহী হয়ে ওঠেছেন।
২৯ বছরের ওমর মতিন সম্পর্কে সবচেয়ে চাঞ্চল্যকর তথ্য দিয়েছে মার্কিন দৈনিক দ্য ওয়াশিংটন পোস্ট। তার সাবেক স্ত্রীর বরাত দিয়ে পত্রিকাটি জানাচ্ছে, সে ছিল নিষ্ঠুর প্রকৃতির মানুষ। বিয়ে ভেঙে যাওয়ার আগে সে প্রায়ই তার স্ত্রীকে মারধোর করত। ২০০৯ সালে তাদের বিয়ে হয়েছিল। ছাড়াছাড়ি হয় ২০১১ সালে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই নারী আরো জানিয়েছেন, বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে মতিনের যে একাধিক ছবি প্রকাশিত হয়েছে সেগুলো তার সোস্যাল সাইট ‘Myspace’ একাউন্ট থেকে নেয়া হয়েছে। বিভিন্ন সময়ে সে নিজের ওয়ালে এসব ছবি পোস্ট করেছিল। মতিনকে একজন অস্থিরচিত্তের মানুষ হিসেবেও উল্লেখ করেছে তার সাবেক স্ত্রী। তবে নিজের নিরাপত্তার কারণে তিনি তার পরিচয় প্রকাশ করার সাহস দেখাননি। তার ভাষায়,‘সে আমাকে নিয়মিত মারধোর করত। ঘরে ফেরার পরই যে কোনো তুচ্ছ কারণে সে আমাকে পেটাতে থাকত।’ এজন্যই মাত্র তিন বছরের মাথায় তাদের ছাড়াছাড়ি হয়ে যায়।
পত্রিকাটি আরো জানিয়েছে, মতিন ফ্লোরিডার ফোর্ট পিয়ের্সেতে নিরাপত্তা রক্ষী হিসেবে কাজ করত। স্থানীয় পুলিশের ধারণা, রোববার রাতে সে একটি ভাড়া করা গাড়িতে করে অরল্যান্ডো শহরে যায় এবং সমকামীদের নাইটক্লাবে হামলা চালায়।

তবে সিবিএস নিউজ বলেছে, ওমর মতিনের বাড়ি ফ্লোরিডার পোর্ট সেন্ট লুসিতে। সে একজন মার্কিন নাগরিক, এবং তার বাবা-মা আফগান। যদিও মার্কিন পুলিশ অবশ্য এখনো আনুষ্ঠানিকভাবে তাকে সনাক্ত করেনি।
এদিকে জঙ্গি গোষ্ঠী আইএস রোববারের ওই হামলার দায় স্বীকার করেছে বলে কয়েকটি আন্তর্জাতিক সংবাদ মাধ্যমে খবর বেরিয়েছে। এ সম্পর্কে আইএসের নিজস্ব সংবাদ সংস্থা আমাক জানিয়েছে, বন্দুকধারীর টার্গেট ছিল সমকামীদের ওই নাইট ক্লাবের কমপক্ষে ১০০ জনকে হত্যা করা কিংবা আহত করা।
তবে অরল্যান্ডোর নাইটক্লাবে হামলার সঙ্গে আইএসের সরাসরি কোনো সম্পৃক্ততা রয়েছে কিনা সে বিষয়ে এখনও নিশ্চিত হতে পারেনি যুক্তরাষ্ট্র। মার্কিন সংবাদ চ্যানেলগুলো বলছে, ওমর মতিনের নাম এর আগে কোন সন্দেহভাজন সন্ত্রাসীর তালিকায় ছিল না। তবে অন্য একটি অপরাধমূলক ঘটনায় তার বিরুদ্ধে তদন্ত চলছিল। যদিও ওই ঘটনার সঙ্গে নাইটক্লাবে হামলার কোনো সম্পর্ক নেই।
গোয়েন্দা সংস্থা এফবিআই’র উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা রোনাল্ড হপার জানিয়েছেন, হামলাকারী ওমর মতিন সম্পর্কে ২০১৩ এবং ১৪ সালেও তদন্ত করা হয়েছিল। তিনি আরো বলছেন, ‘আমরা আভাস পাচ্ছি যে তার উগ্রপন্থী ইসলামী আদর্শের দিকে ঝোঁক ছিল। তবে এ বিষয়ে এখনও নিশ্চিত হওয়া যায়নি।’

ছেলেকে জঙ্গি হিসেবে মানতে নারাজ মতিনের পিতা মীর সেদ্দিক। তিনি সংবাদ মাধ্যম এনবিসিকে বলেছেন, ‘এই হামলার সঙ্গে ধর্মের কোন সম্পর্ক নেই। সম্প্রতি মিয়ামিতে একটি সমকামী যুগলকে চুম্বনরত অবস্থায় দেখার পর সে ক্রুদ্ধ হয়ে উঠেছিল।’
রোববারের ওই বন্দুক হামলায় ৫০ জন নিহত এবং আরো ৫৩ জন আহত হয়েছে। পরে পুলিশের গুলিতে নিহত হয় বন্দুকধারী ওমর মতিনও।




Discussion about this post