সুশাসনের অভাবে জনগণের মধ্যে হতাশা বাড়ছে মন্তব্য করে সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা, আইনজীবী ও মানবাধিকারকর্মী সুলতানা কামাল বলেছেন, ‘অনিয়ম লুটপাটের ফলে দেশে যে অরাজক পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে তা থেকেই তৈরি হচ্ছে হতাশা। মানুষ হতাশ হয়ে দেখছে- কোনো কিছুর তোয়াক্কা না করে রাষ্ট্র বারবার আইন নিজের হাতে তুলে নিচ্ছে।’
শনিবার (১৮ জুন) রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ আয়োজিত “এসডিজি বাস্তবায়নে নাগরিক প্লাটফর্ম, বাংলাদেশ” শীর্ষক সেমিনারে তিনি এ কথা বলেন।
মাদারীপুরে শিক্ষক হত্যাচেষ্টায় আটক সন্দেহভাজন জঙ্গি ফাহিম রিমান্ডে থাকা অবস্থায় কথিত বন্দুকযুদ্ধে নিহত হওয়ার ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে সুলতানা কামাল বলেন, ‘মানুষ আমাদের বলছে, ক্রসফায়ার হওয়ার পরে আপনারা কথা বলছেন কেন? যাদের ক্রসফায়ারে দেয়া হচ্ছে, তারা অন্যের মানবাধিকার লঙ্ঘন করেছে। অতএব তাদের মানবাধিকার নেই। এই যে একটা বোধ সমাজে চলে আসে, যেনতেনভাবে নিজের অস্তিত্ব রক্ষা করতে হবে- এটা কোনো আধুনিক, গণতান্ত্রিক, সুশাসনসম্পন্ন রাষ্ট্রের লক্ষ্য নয়। মানুষ মানুষকে পিটিয়ে মেরে ফেলছে, অথচ ফতোয়ার মাধ্যমে অমানবিক কার্যক্রমকে সমর্থন দিচ্ছে রাষ্ট্র।’
তিনি বলেন, ‘একটি দেশের উন্নয়ন বলতে সে দেশের প্রত্যেকটি মানুষ নিরাপত্তার সাথে জীবন যাপন করবে, ন্যায়বিচারের সাথে থাকবে, আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে সাহস নিয়ে চলতে পারবে। যে আমি এ দেশের নাগরিক, আমার ন্যূনতম যে অধিকারগুলো সংবিধানে অঙ্গিকার করা হয়েছে তা বাস্তবায়নে রাষ্ট্র আমার পাশে আছে। সেজন্য রাষ্ট্র এবং জনগণকে একসাথে কাজ করতে হবে।’
সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আরেক উপদেষ্টা রাশেদা কে চৌধুরী বলেন, ‘নাগরিক হিসেবে রাষ্ট্রের প্রতি যেমন কিছু দায়দায়িত্ব আছে তেমনি রাষ্ট্রকেও জনগণের কল্যাণে কাজ করতে হবে।’
তিনি বলেন, ‘যেহেতু আজ বৈশ্বিক ইস্যু চলে এসেছে সেক্ষত্রে আমাদের সকলকে একসাথে কাজ করতে হবে।’
টিআইবির ইফতেখারুজ্জামান বলেন, ‘আমাদের কর্মসূচি বৈশ্বিক ও সর্বজনীন। এর লক্ষ্যমাত্রা ২০৩০ সাল। আমরা সরকারের সহায়ক শক্তি হিসেবে কাজ করতে চাই। তাদের ভালো কাজের পরামর্শ ও ভুল কোনো সিদ্ধান্তের সমালোচনা করতে চাই- যাতে করে সরকার এ লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে সমর্থ হয়।’
উল্লেখ্য, এজেন্ডা ২০৩০ এ অন্তর্ভুক্ত রয়েছে ১৭টি লক্ষ্য এবং ১৬৯টি অভিষ্ট, যা সম্মিলিতভাবে টেকসই লক্ষ্যমাত্রা হিসেবে পরিচিত। এ লক্ষ্যমাত্রা বাস্তবায়নকালে প্রস্তাবিত উদ্যোগটি যেসব ক্ষেত্রে ভূমিকা রাখবে তা হলো- বাংলাদেশে এসডিজি বাস্তবায়নের অগ্রগতি ও মাত্রা পর্যবেক্ষণ করা; বাস্তবায়নের সময় সম্ভাব্য চ্যালেঞ্জগুলোর বিষয়ে নীতিনির্ধারকদের সচেতন করা- যাতে অর্থের সুষ্ঠু ব্যবহার হয়; বাস্তবায়ন প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা এবং বাস্তবায়নকারী সকল প্রতিষ্ঠানের মধ্যে তথ্য বিনিময়ে সার্বিক সমন্বয় ও সহযোগিতা করা।
সেমিনারে অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন- মানুষের জন্য ফাউন্ডেশনের প্রতিনিধি শাহিন আনাম, সিপিডির প্রধান নির্বাহী প্রফেসর মুস্তাফিজুর রহমানসহ সহ-আয়োজক সংগঠনের প্রতিনিধিরা।




Discussion about this post