শেষ হলো রাজধানীর কল্যাণপুরে জঙ্গি আস্তানায় সোয়াটের নেতৃত্বে পুলিশ-র্যাব-ডিবির যৌথ অভিযান। ‘স্টর্ম টোয়েন্টি সিক্স’ নামক এ অভিযানে নিহত হয়েছে ৯ জঙ্গি। গুলিবিদ্ধ অবস্থায় আটক হয়েছে আরও এক জঙ্গি। আহত হয়েছেন এক পুলিশ সদস্যও।
কল্যাণপুরের ফুটওভার ব্রিজ সংলগ্ন একটি বাড়িতে সোমবার (২৫ জুলাই) রাত থেকে মঙ্গলবার (২৬ জুলাই) ভোর পর্যন্ত সংঘটিত এ ঘটনার পুরো প্রবাহ পাঠকদের জানিয়ে দিচ্ছে বাংলানিউজ।
রাত ১১টা (সোমবার)
সারাদেশে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর জঙ্গিবিরোধী অভিযান ‘ব্লক রেড’ এর অংশ হিসেবে সোমবার রাত ১১টায় কল্যাণপুর এলাকায় অভিযানে নামে সংশ্লিষ্ট থানা পুলিশ। বেশ কয়েকটি মেসে অভিযান চালানোর পর তারা ফুটওভার ব্রিজ সংলগ্ন ৫ নম্বর রোডের মেসগুলোতে অভিযানে যায়।
রাত ১২টা-১টা
রাত ১২টার দিকে ৫ নম্বর রোডের ওই সাততলা বাড়িটিতে অভিযানে যায় আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী। বাড়িটির পঞ্চম, ষষ্ঠ ও সপ্তম তলায় মেস ছিলো। সেই মেসগুলোতে অভিযানে গেলে সেখানে থাকা জঙ্গিরা বুঝতে পেরে পুলিশকে লক্ষ্য করে হাতবোমা ও গুলি নিক্ষেপ করে। এতে এক পুলিশ সদস্য আহত হন। তৎক্ষণাৎ বিষয়টি তারা মিরপুর জোনের উপ-কমিশনারসহ (ডিসি) ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের জানান।
রাত পৌনে ৩টা
ঘটনাস্থল থেকে কর্মকর্তাদের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে অভিযান আরও জোরদার করে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী। ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) কমিশনারের নির্দেশে মিরপুর জোনের ডিসি কাইয়ুম উজ্জ জামানের নেতৃত্বে পুরো এলাকা ঘিরে ফেলে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী। ঘটনাস্থলে আসে ৠাব ও গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) বিপুলসংখ্যক সদস্যও। এরপর আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী আবারও অভিযানে গেলে জঙ্গিদের সঙ্গে গুলিবিনিময় হতে থাকে।
রাত সোয়া ৩টা
পুলিশের সঙ্গে গুলিবিনিময়কালে হাসান নামে জঙ্গিদের একজন আহত হয়। তাকে আটক করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সে পুলিশকে জানায়, মেসে আরও ৯ জঙ্গি সদস্য রয়েছে। তার কাছ থেকে তথ্য পেয়ে এ নিয়ে বৈঠকে বসে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী। যেহেতু ওই বাড়িটির অন্যান্য ফ্ল্যাটে সাধারণ লোকজন থাকে, সেহেতু তাদের নিরাপত্তার কথা ভেবে রাতের পরিবর্তে দিনের আলোতেই অভিযান চালানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
ভোর ৫টা ৫১ মিনিট (মঙ্গলবার)
সিদ্ধান্ত অনুসারে মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের বিশেষায়িত টিম সোয়াটের নেতৃত্বে
ভোর ৫টা ৫১ মিনিটে অভিযান শুরু হয়। অভিযানের নাম দেওয়া হয় ‘স্টর্ম টোয়েন্টি সিক্স’। এতে সহযোগিতা করে পুলিশের বোম্ব ডিসপোজাল ইউনিট, ৠাব ও ফায়ার সার্ভিস। প্রায় এক ঘণ্টা ধরে থেমে চলতে থাকে গুলিবিনিময়।
ভোর ৬টা ৫১ মিনিট
এক ঘণ্টা পর ভোর ৬টা ৫১ মিনিটের দিকে শেষ হয় সোয়াটের নেতৃত্বাধীন ‘স্টর্ম টোয়েন্টি সিক্স’। ঘটনাস্থলেই মারা যায় ৯ জঙ্গি।
সকাল সাড়ে ৭টা
সকাল সাড়ে ৭টার দিকে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) একেএম শহীদুল হক। তিনি সাংবাদিকদের বলেন, নিহত জঙ্গিদের পোশাক-আসবাব সবকিছুতেই গুলশানে হামলাকারীদের সঙ্গে মিল রয়েছে। তদন্ত শেষে এ সম্পর্কে বিস্তারিত বলা যাবে। জঙ্গিরা গুলি করতে করতে পালাতে চেষ্টা করেছিলো। তারা পুলিশকে লক্ষ্য করে হ্যান্ড গ্রেনেডও ছুড়ে। তবে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা সতর্ক থাকায় কোনো হতাহতের ঘটনা ঘটেনি। এই জঙ্গি আস্তানায় বিপুল পরিমাণ বিস্ফোরক রয়েছে। রাজধানী ঢাকায় বড় ধরনের হামলার পরিকল্পনা ছিলো তাদের।
এসময় তার সঙ্গে ছিলেন ডিএমপি কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়া ও ডিবির যুগ্ম-কমিশনার মনিরুল ইসলাম।
সকাল ৮টা
সকাল ৮টার দিকে ঘটনাস্থলে পৌঁছায় অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) ক্রাইম সিন ইউনিট। তারা সেখানে পৌঁছালে ৮টা ১৭ মিনিটে ঘটনাস্থল ত্যাগ করে অভিযানে নেতৃত্ব দেওয়া সোয়াট। সিআইডির ক্রাইম সিন ইউনিট ঘটনাস্থলে পৌঁছেই তাদের তৎপরতা শুরু করে। সুত্র বাংলানিউজ




Discussion about this post