নাজিমউদ্দিন রোডের কেন্দ্রীয় কারাগার এখন শুধুই স্মৃতি। এক সময়ের বন্দিশালা এখন একেবারেই ফাঁকা। ভেতরে কিছু ফ্যান আর আসবাবপত্র ছাড়া আর কিছুই নেই ২শ’ বছরের পুরনো এ বন্দিশালায়।
শুক্রবার (২৯ জুলাই) দিনব্যাপী কারাবন্দিদের স্থানান্তর করা হয় কেরানীগঞ্জে নবনির্মিত কারাগারে। ফলে শুক্রবার দিনগত রাত ১টার দিকে নাজিমউদ্দিন রোডের কেন্দ্রীয় কারাগারের মূল ফটকে দেখা যায় এক ভিন্ন চিত্র। অন্যসময় কেন্দ্রীয় কারাগারের মূল ফটকে দেখা যেত ২৪ জন জেল পুলিশ সারিবদ্ধভাবে মূল গেটের সামনে অবস্থান করে আছে। কিন্তু শুক্রবার দিনগত রাতে দেখা যায় মাত্র দুইজন জেল পুলিশ মূল ফটকে অনেকটা আয়েশি ভঙ্গিতে দাঁড়িয়ে আছে।
তাদের এই আয়েশি ভঙ্গির কারণটাও হয়তো সবারই জানা, কারণ যাদের জন্য পাহাড়া দেওয়া হতো তারাতো আর এখানে নেই। শুক্রবার সারাদিনে ২৫টি প্রিজন ভ্যানে করে ২০ ধাপে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর নিরাপত্তা বলয়ের মধ্য দিয়ে ৬ হাজার ৫১১ জন কারাবন্দিকে কেরানীগঞ্জে নিয়ে যাওয়া হয়। এর মধ্যে দিয়ে দুইশ’ বছরের অধিক সময়ের ইতিহাসের যবনিপাত ঘটে।
কেন্দ্রীয় কারাগারে দুই বছর ধরে দায়িত্ব পালন করেন জেল পুলিশ আল-আমিন। শুক্রবার দিনগর রাত ১টায় বলেন, ‘সবাই (সহকর্মীরা) চলে যাওয়ার পর খুব খারাপ লাগছে। কালও (বৃহস্পতিবার) সবাই কতো হাসি-খুশি ছিলাম, আজ অনেক ফাঁকা এখানে কেউ নেই। ভেতরে শুধু ফ্যান আর কিছু জিনিসপত্র রয়েছে কোনো বন্দি নেই।’ তার সঙ্গেই ডিউটি করছেন মিলন নামের আরেক জেল পুলিশ।
তিনিও বলেন, আজ এসে দুইজন দেখছেন। অথচ কালও এখানে আমরা ২৪ জন ডিউটি করেছি। মূল গেটের সামনে অস্থায়ী ব্যারিকেড দিয়ে রাখা হতো। এখন কেউ নেই, তাই নিরাপত্তাও নেই। শুক্রবার কারাবন্দি স্থানান্তরের পর এখানকার পুলিশের টহলও কমিয়ে দেওয়া হয়েছে। রাতে পুলিশের একজন উপ-পরিদর্শক (এসআই) এর নেতৃত্বে ৫ জন পুলিশকে কেন্দ্রীয় কারাগারের অনুসন্ধান কক্ষে বসে থাকতে দেখা যায়।
একসময় কারাবন্দির স্বজন ও শুভানুধায়ীদের পদচারণায় মুখোরিত ছিলো কেন্দ্রীয় কারাগার, আজ তা কেবলই স্মৃতি। শুক্রবারের পর এখানে আর কেউ আসবেন না তার স্বজনের সঙ্গে দেখা করতে। কারণ যারা ছিলেন, তাদের নতুন ঠিকানা কেরানীগঞ্জে।
পুরান ঢাকার নাজিমউদ্দিন রোডে ১৭৮৮ সালে প্রতিষ্ঠা করা হয় ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার। কারাবন্দিদের এই জায়গায় হবে বিনোদনকেন্দ্র। পরিকল্পনা অনুযায়ী এখানে থাকছে শপিংমলও। সেই সঙ্গে হবে সবুজ-আধুনিক পার্ক, প্রশিক্ষণ কেন্দ্র, ব্যায়ামাগার ও কনভেনশন সেন্টার এবং ঐতিহ্যগুলো সংরক্ষণে জাদুঘর। বিশাল আয়তনের এ এলাকায় আরও থাকবে পর্যাপ্ত হাঁটার জায়গা। সেজন্যে ভাঙাভাঙির কাজও শুরু করা হবে বলে কারাগার সূত্র জানিয়েছে।
কেরানীগঞ্জের তেঘরিয়া ইউনিয়নের রাজেন্দ্রপুরে সাড়ে ছয় হাজার বন্দি ধারণ ক্ষমতার নতুন ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার গত ১০ এপ্রিল উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
Discussion about this post