বিনাদোষে ১৮ দিন জেল খাটতে হয়েছে কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামের আপন দুই ভাই আতিকুল ইসলাম মজুমদার (৫৪) ও শহিদুল ইসলাম মজুমদারকে(৪৫)।
ঢাকার দক্ষিণ খান থানার একটি মাদকদ্রব্য মামলার কাগজপত্র জালিয়াতি করে ভুয়া গ্রেফতারি পরোয়ানায় ডাকাতি ও খুনের মামলা দেখিয়ে তাদের আটক করা হয়। জামিনে মুক্তি পাওয়া এই দুই সহোদর ন্যায়বিচার চেয়ে প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।
জানা গেছে, ঢাকার দক্ষিণ খান থানায় ২০১২ সালে মাদকদ্রব্য আইনের মামলায় (নং-১৮(১১)১২) বরিশালের এক ব্যক্তি আসামি। ওই মামলায় দুই ভাইয়ের নাম নেই।
কিন্তু প্রতারকচক্র ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৭ এর বিচারকের স্বাক্ষর ও সিল জালিয়াতির মাধ্যমে ২০১৫ সালের ১৫ মার্চের তারিখ দেখিয়ে (পি-৪০৩/১৫ নং) একটি গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করে। ওই পরোয়ানায় দন্ডবিধির ৩৯৫/৩৯৬/১০৯নং ধারা উল্লেখ করা হয়, যা ডাকাতি ও খুনের ধারা বলে আইনজীবীরা জানান।
এ গ্রেফতারি পরোয়ানার আলোকে গত ২৩ জুলাই শনিবার রাতে চৌদ্দগ্রাম থানার এএসআই কৃষ্ণ সরকার ও এএসআই মনির আহাম্মদের নেতৃত্বে পুলিশ দুই ভাইকে নিজ বাড়ি থেকে গ্রেফতার করে। পরদিন ২৪ জুলাই তাদেরকে আদালতে পাঠায়।
বিজ্ঞ আদালত দুই ভাইয়ের জামিন নামঞ্জুর করে কুমিল্লা জেলহাজতে পাঠান এবং সংশ্লিষ্ট আদালতে মামলার কাগজপত্র পাঠানোর আদেশ দেন। কিন্তু কুমিল্লা কোর্ট থেকে ওইদিন কাগজপত্র না পাঠিয়ে ২ আগস্ট পাঠানো হয়। ৪ আগস্ট ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৭ এ কাগজপত্র পৌঁছে।
পরে সেখানে নথিপত্র যাচাই বাছাই করে দেখা যায়-উক্ত মামলাটি একটি মাদকের মামলা। মামলায় আটক দুই ভাইয়ের কোন নাম নেই। ঢাকার বিজ্ঞ আদালত-৭ এ গত ৭ আগস্ট রবিবার দুই ভাইয়ের পক্ষের আইনজীবীরা জামিন আবেদন করলে আদালত জামিন (স্মারক নং-বিঃ জঃ আঃ ৭/ঢাকা/১২৬০) মঞ্জুর করেন। পরবর্তীতে ৯ আগস্ট শহিদুল ইসলাম মজুমদার ও ১০ আগস্ট আতিকুল ইসলাম মজুমদার কুমিল্লা কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে মুক্তি পান।
দুই ভাইয়ের আইনজীবী ইসরাত জাহান ইমু জানান, ঢাকার দক্ষিণ খান থানার মামলাটি মাদকদ্রব্য আইনের মামলা। সেখানে বরিশাল পিরোজপুরের জনৈক এক ব্যক্তি আসামি। ওই মামলায় আমার মক্কেলরা আসামি নয়। তাদের বিরুদ্ধে ঢাকার কোন থানায় মামলা নেই। তাদেরকে যে পরোয়ানায় গ্রেফতার দেখানো হয়েছে, সে পরোয়ানায় জালিয়াতির মাধ্যমে বিচারকের স্বাক্ষর ও সিল ব্যবহার করা হয়েছে। আদালত সেটি বুঝতে পেরেই মক্কেলদের জামিন দিয়েছেন।
এ বিষয়ে চৌদ্দগ্রাম কোর্টের জিআরও মোশারফ হোসেন দলিলপত্র দেরি করে পাঠানোর বিষয়ে নিজের সম্পৃক্ততা নেই দাবি করে বলেন, ‘অনেকে তো কাজ করে, নেজারত শাখা থেকে কাগজপত্র পাঠাতে দেরি হয়েছে’।
স্থানীয় শ্রীপুর ইউপি চেয়ারম্যান মো. শাহজালাল মজুমদার বলেন, ‘আমার জানা মতে তারা ভালো লোক। এ ধরনের ঘটনার সঙ্গে তারা জড়িত নেই। দুই ভাই ষড়যন্ত্রের শিকার’।
জেল খাটা দুই ভাই কান্নাজড়িত কণ্ঠে অভিযোগ করেন, ‘প্রতিবেশি এক প্রভাবশালী ব্যক্তির সঙ্গে দীর্ঘদিন ধরে জায়গা নিয়ে বিরোধ চলছিল। ওই ব্যক্তিই হুমকি ধমকি দিয়ে আসছিল- আমাদেরকে দেখে ছাড়বে’।
আমাদের ধারণা ওই প্রভাবশালী ব্যক্তির ষড়যন্ত্রের শিকার হয়ে ভুয়া মামলায় জেল খাটতে হয়েছে। তবে এভাবে যেন আর কাউকে হয়রানির শিকার হতে না হয় সেজন্য তারা প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন।
তারা প্রশ্ন রেখে বলেন, ‘ঢাকার দক্ষিণ খান থানার একটি মাদকদ্রব্য আইনে দায়েরকৃত মামলা কীভাবে ডাকাতি ও খুনের মামলা হয়ে যায়?’ সূত্র: দ্য রিপোর্ট




Discussion about this post