মীর কাসেম আলীর মৃত্যুদণ্ডের চূড়ান্ত রায় ঘোষণার পর থেকে অনেকটা দম আটকে বসে আছেন সাক্ষীরা। খবর শুনলেই স্বস্তির নিশ্বাস ফেলবেন তারা। তারা বলছেন, ‘বাবাকে বাঁচাতে সাক্ষী কিনতে চেয়েছিলেন তার ছেলে আহমেদ বিন কাসেম। তিনি নাকি আবার ব্যারিস্টারও। টাকার প্রলোভনসহ নানা প্রলোভন দিয়ে আমাদের আদালতে গিয়ে সাক্ষ্য না দেওয়ার জন্য বলা হয়েছিল। কিন্তু আমরা এই দিনের অপেক্ষায় ছিলাম।’
গত ৩০আগস্ট রিভিউ আবেদন খারিজ হওয়ার পরপরই ফাঁসি দ্রুত কার্যকর করার দাবি জানিয়েছেন ডালিম হোটেলে নির্যাতনের শিকার ও নির্যাতনে মৃত্যুবরণকারীদের স্বজনরা।
একাধিক সাক্ষী বলেছেন, ‘তাদের অনেক টাকা থাকতে পারে। কিন্তু আমাদের প্রতি যে অন্যায় অবিচার করা হয়েছে, তার শাস্তি হওয়া জরুরি। ত্রিশ লাখ শহীদের রক্তে সে স্বাধীনতা এসেছে, তার সঙ্গে বেঈমানি করি কী করে?’
মীর কাসেমের আলবদর বাহিনীর হাতে নির্যাতিত মুক্তিযোদ্ধা জাহাঙ্গীর চৌধুরী সাক্ষ্য দিয়েছিলেন ট্রাইব্যুনালে। ডালিম হোটেলের বিভীষিকাময় সময়গুলোকে বারবার স্মরণ করতেও যেন শিউরে ওঠেন। তিনি বলেন, ‘২৩ দিন ধরে আটকে রেখে মানসিক ও শারীরিক নির্যাতন চালিয়েছিল। চোখমুখ বাঁধা, হাত পেছনে মোড়ানো। এমন সময়ও গেছে এক টুকরো শুকনো কমলার খোসা চিবিয়ে খেয়ে থেকেছি। আজ আমাদের কষ্ট লাঘব হওয়ার দিন।’ এই মুক্তিযোদ্ধার মা-ভাই মীর কাসেমের ফাঁসি না দেখে মারা গেছেন বলেও আফসোস করেন তিনি।
মুক্তিযোদ্ধা সাংবাদিক নাসির উদ্দিন চৌধুরী। এ রায়ের পর তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় নাসির বলেন, ‘ফাঁসি কার্যকর হতে দেখে আমি স্বস্তি পাচ্ছি। মীর কাসেম ভেবেছিলেন টাকা দিয়ে সব কেনা যায়। তারা টাকা দিতে চেয়েছেন, নিতে না চাইলে হুমকি দিয়েছেন। আর আমরা আজকের দিনের অপেক্ষায় মুখ বুজে সব সহ্য করেছি। সৈয়দ মো. এমরানসহ ৬ ভাইকে ধরে নিয়ে গিয়েছিল মীর কাসেমের আলবদর বাহিনী। ডালিম হোটেলে আটকে রেখে তাদের ওপর অমানসিক নির্যাতন চালিয়েছিল আলবদর সদস্যরা।’
আরেক সাক্ষী মৃদুল দে বলেন, ‘ফাঁসির রায় কার্যকরের মাধ্যমে কলঙ্কমুক্তির প্রহর গুনছে চট্টগ্রাম। তাদের হিসহিসানি আমরা সবসময়ই শুনে আসছি। এত নির্যাতন নিপীড়ন সহ্য করেছি একদিন বিচার পাব এই আশাতেই। মীর কাসেমের অপরাধের শাস্তি তার ফাঁসির মধ্য দিয়ে হবে না জানি। তার মতো জঘন্য নির্মম অপরাধীর চৌদ্দবার ফাঁসি হওয়া দরকার।’
Discussion about this post