শেরপুর জেলা কারাগারের তত্ত্বাবধায়ক ও প্রধান কারারক্ষীসহ ১৭ জনকে আসামি করে মামলা হয়েছে। সোমবার বিকেলে শেরপুরের মুখ্য বিচারিক হাকিমের আদালতে এ মামলা হয়।
শেরপুরের পরিবহন শ্রমিক নেতা আলমগীর হোসেন ওরফে বিষু ড্রাইভারের স্ত্রী শান্তি বেগম এই মামলা করেছেন। তাঁর অভিযোগ, জামিন পাওয়া আসামির স্বজনদের কাছ থেকে অবৈধভাবে অর্থ হাতিয়ে নেওয়ার প্রতিবাদ করায় কারারক্ষীরা আলমগীরকে নির্যাতন করেছেন।
পরে মুখ্য বিচারিক হাকিম মো. সাইফুর রহমান এক আদেশে চিকিৎসকের সনদপত্র সংগ্রহ সাপেক্ষে ঘটনার বিষয়ে তদন্ত করে প্রতিবেদন দাখিলের জন্য শেরপুর সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে (ওসি) নির্দেশ দিয়েছেন।
মামলার অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, গত বৃহস্পতিবার সন্ধ্যার কিছুক্ষণ আগে জামিন পাওয়া আসামিদের আত্মীয়-স্বজনের কাছ থেকে প্রধান কারারক্ষী বাবুল মিয়া, কারারক্ষী জাফর আলী ও সেলিম মোল্লা প্রকাশ্যে নগদ টাকা হাতিয়ে নিলে কারাগারের পার্শ্ববর্তী নওহাটা এলাকার বাসিন্দা পরিবহন শ্রমিক নেতা আলমগীরসহ কয়েকজন প্রতিবাদ করেন। বিষয়টি নিয়ে কারারক্ষীদের সঙ্গে তাঁদের বাগ-বিতণ্ডা হয়। এরপর তাঁদের কারা প্রাঙ্গণ থেকে বের করে দেওয়া হয়। পরে বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ৮টার দিকে জেল সুপারের কথা বলে আলমগীরকে কারাগারে ডেকে নেওয়া হয়। তিনি (আলমগীর) কারাগারের প্রধান ফটক পেরিয়ে ভেতরে প্রবেশের পরপরই প্রধান কারারক্ষী বাবুল, কারারক্ষী আবু জাফর ও সেলিম মোল্লাসহ একদল কারারক্ষী তাঁকে ভেতরে নিয়ে যান এবং দা, লোহার পাইপ ও রডসহ লাঠিসোঁটা দিয়ে মাথা ও শরীরে উপর্যুপরি পিটিয়ে রক্তাক্ত জখম করেন। এ সময় গায়ের জামা ও প্যান্ট ছাপিয়ে মেঝেতে রক্ত গড়াতে থাকলে তিনি (আলমগীর) কারাগার প্রাঙ্গণে লুটিয়ে পড়েন। এরপর সদর থানা-পুলিশকে খবর দিয়ে কারা কর্তৃপক্ষ আহত শ্রমিক নেতা আলমগীরকে পুলিশে তুলে দেন। আলমগীরের অবস্থা গুরুতর হওয়ায় পুলিশ তাঁকে জেলা সদর হাসপাতালে নিয়ে ভর্তি করায়। বর্তমানে তিনি সেখানেই চিকিৎসাধীন রয়েছেন। মামলার বাদী আলমগীরের স্ত্রী শান্তি বেগম আদালতের নিকট এ ঘটনার জন্য দায়ী আসামিদের সুবিচার প্রার্থনা করেন।
বাদীপক্ষের আইনজীবী ও মানবাধিকারকর্মী প্রদীপ দে কৃষ্ণ কারা কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের ও আদালতের নির্দেশনার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
অপরদিকে মামলার অভিযোগ অস্বীকার করে কারা তত্ত্বাবধায়ক মো. মজিবুর রহমান সোমবার রাতে গণমাধ্যমকে বলেন, গত ২৯ সেপ্টেম্বর বৃহস্পতিবার রাতে কারাবিধি ভঙ্গ করে আলমগীর হোসেনের নেতৃত্বে একদল লোক কারাগার প্রাঙ্গণে অনুপ্রবেশ করেন। পরে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে কারাগারের বিভিন্ন জানালার কাচ ভাঙচুর করেন এবং কারাগারের অস্ত্রাগার থেকে অস্ত্র লুট করতে উদ্যত হন। এ সময় কারারক্ষীরা তাঁদের বাধা দিলে তাঁরা কারারক্ষী আবু জাফর ও সেলিম মোল্লাকে বেদম মারপিট করে গুরুতর আহত করেন। এ ঘটনায় আলমগীরসহ ১৫-২০ জনের বিরুদ্ধে সদর থানায় মামলা দায়ের করা হয়েছে। তাই আলমগীরের পরিবার ক্ষিপ্ত হয়ে ‘কাউন্টার’ মামলা দিয়েছে।
Discussion about this post