জঙ্গি সংগঠন জামাআতুল মুজাহিদীন বাংলাদেশের (জেএমবি) সদস্য হলেও র্যাব ও পুলিশের হাতে গ্রেফতার হওয়া নারী জঙ্গিরা ভিন্ন-ভিন্ন গ্রুপের। তারা আলাদা আলাদাভাবে জঙ্গি কার্যক্রম করে থাকে। তাই র্যাব-পুলিশের হাতে গ্রেফতার নারী জঙ্গিদের মধ্যে কোনও সম্পৃক্ততা পায়নি আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। নারী জঙ্গিদের একটি গ্রুপ স্বামীদের প্ররোচনায় জঙ্গি হয়, অন্য একটি গ্রুপ স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে জেএমবিতে নাম লিখিয়েছে। তারা কেউ কাউকে চেনে না। র্যাব ও পুলিশ কর্মকর্তারা এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
১৪ ও ১৫ আগস্ট গাজীপুরের সাইনবোর্ড, রাজধানীর মগবাজার ও মিরপুর এলাকা থেকে চার নারী জঙ্গিকে গ্রেফতার করে র্যাব। র্যাবের ভাষ্য, ওই চারজনের মধ্যে জেএমবির নারী বিভাগের ‘উপদেষ্টা’ আকলিমা রহমান, সদস্য মৌ ও মেঘলা বেসরকারি মানারাত বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী। আরেক সদস্য ঐশী ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের শিক্ষানবিস চিকিৎসক; তিনি ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ থেকেই এমবিবিএস পাস করেন। এছাড়া ১৬ অক্টোবর নরসিংদী থেকে সুলতানা আক্তার কচি নামে আরও এক নারী জঙ্গিকে গ্রেফতার করে র্যাব-৪। গ্রেফতার হওয়া নারী জঙ্গিরা গুরুত্বপূর্ণ তথ্য দিয়েছে। তাদের তথ্য যাচাই-বাছাই করছে র্যাব।
র্যাবের ওই অভিযানের পর গত ১০ সেপ্টেম্বর রাতে আজিমপুরে একটি জঙ্গি আস্তানায় অভিযান চালায় পুলিশ। এতে জঙ্গি তানভীর কাদেরী নিহত হয়। এ সময় তিন শিশু ও তিন নারীকে গ্রেফতার করা হয়। গ্রেফতার হওয়া তিনজনের একজন গুলশান হামলার অন্যতম মাস্টারমাইন্ড নুরুল ইসলাম মারজানের স্ত্রী আফজান ওরফে প্রিয়তি। আরেক নারী জঙ্গি শায়লা আফরিন। তার বাড়ি রাজধানীতেই। তৃতীয় নারী জঙ্গির নাম শারমিন। এ ঘটনায় গত ১৫ সেপ্টেম্বর রাজধানীর লালবাগ থানায় সন্ত্রাসবিরোধী আইনে মামলা হয়। তারা আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে।
তবে র্যাব ও পুলিশ জানিয়েছে, পৃথক এই দুই ঘটনায় গ্রেফতার নারী জঙ্গি গ্রুপ দুটির সঙ্গে কোনও লিংক এখনও পাওয়া যায়নি। তারা কেউ কাউকে চেনে না।
এ বিষয়ে র্যাব-৪ অধিনায়ক অতিরিক্ত ডিআইজি খন্দকার লুৎফুল কবীর বলেন, ‘পুলিশের হাতে গ্রেফতার নারীরা স্বামীদের মাধ্যমে জঙ্গি সম্পৃক্ততায় জড়িত হয়েছে। তাদের স্বামীরা সরাসরি জড়িত। জঙ্গি নারীরা স্বামীদের মাধ্যমে মটিভেটেড হয়েছে। আর আমরা যাদের গ্রেফতার করেছি, তারা স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে জঙ্গি হয়েছে। তারা নারী জঙ্গি নেটওয়ার্কের সদস্য। তারা সরাসরি জড়িত। তাদের সঙ্গে আজিমপুরে গ্রেফতার জঙ্গিদের কোনও লিংক আমরা পাইনি। তাদের সঙ্গে আমরা স্পষ্ট কোনও লিংক পাইনি।’
র্যাব ও পুলিশ সূত্র জানিয়েছে, জেএমবির নারী জঙ্গিরা মূলত অর্থ ও সদস্য সংগ্রহ করে থাকে। তারা সরাসরি কোনও নাশকতার সঙ্গে এখনও জড়িত হয়নি। তবে কোথাও নাশকতা চালানোর আগে নারী জঙ্গিরা পুরুষ জঙ্গিদের বিভিন্নভাবে সহায়তা করে। পুরুষ জঙ্গিদের আশ্রয়, স্পট রেকিও করেছে কেউ কেউ।
কাউন্টার টেররিজন অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি) ইউনিটের প্রধান মনিরুল ইসলাম বলেন, ‘জেএমবির নারী জঙ্গিরা পরবর্তী প্রজন্মকে উগ্রবাদ ও জঙ্গিবাদের শিক্ষা দিয়ে থাকে। তারা পুরুষ জঙ্গিদের বিভিন্নভাবে সহায়তা করে। অর্থ সংগ্রহ, সন্তান লালন-পালন ও পুরুষ জঙ্গিদের দেখাশোনা করাই নারী জঙ্গিদের মূল কাজ।’ তিনি বলেন, ‘নারী জঙ্গিরা আলাদা আলাদাই থাকত, তবে পুলিশের অভিযানের কারণে তারা আজিমপুরের ওই জঙ্গি আস্তানায় একত্র হয়েছিল।’
র্যাবের হাতে গ্রেফতারকৃত নারী জঙ্গিদের সঙ্গে আজিমপুরের জঙ্গি আস্তানা থেকে গ্রেফতার নারী জঙ্গিদের কোনও সম্পৃক্ততা এখনও পাওয়া যায়নি বলেও জানান তিনি।
বাংলা ট্রিবিউন
Discussion about this post