বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের অডিটোরিয়ামে বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের স্ট্র্যাটেজিক প্ল্যান তৈরির উদ্দেশ্যে বিচার বিভাগীয় কর্মকর্তাদের সমন্বয়ে একটি দিনব্যাপি কর্মশালা অনুষ্ঠিত হয়।
গতকাল শনিবার (২৯ অক্টোবর) অনুষ্ঠিত উক্ত কর্মশালায় সভাপতিত্ব করেন সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেল সিনিয়র জেলা জজ জনাব সৈয়দ আমিনুল ইসলাম।
জাতিসংঘের উন্নয়ন কর্মসূচী ইউএনডিপি এর আর্থিক ও কারিগরি সহযোগিতায় অনুষ্ঠিত এই কর্মশালায় কনসালটেন্ট হিসাবে উপস্থিত ছিলেন ড. সানাউল মোস্তফা। অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন, হাইকোর্ট বিভাগের রেজিস্ট্রার জনাব আবু সৈয়দ দিলজার হোসেন, আপিল বিভাগের রেজিস্ট্রার জনাব মো. জাকির হোসেন, হাইকোর্ট বিভাগের অতিরিক্ত রেজিস্ট্রার জনাব মো. যাবিদ হোসেন, স্পেশাল অফিসার জনাব হোসনে আরা আকতার, অতিরিক্ত রেজিস্ট্রার জনাব মো. সাব্বির ফয়েজ, ঢাকার জেলা ও দায়রা জজ জনাব এস এম কুদ্দুস জামান, মহানগর দায়রা জজ জনাব মো. কামরুল হোসেন মোল্লা, গাজীপুরের জেলা ও দায়রা জজ আবুল খায়ের মো. এনামুল হক, ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট জনাব শেখ হাফিজুর রহমান, ঢাকার চিফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট বেগম জেসমিন আরা বেগম প্রমুখ।
কর্মশালার শুরুতে ভবিষ্যতের সুপ্রিম কোর্ট কীভাবে কাজ করবে তার একটি খসড়া রূপকল্প ড. সানাউল মোস্তফা বিচার বিভাগীয় কর্মকর্তাদের সামনে উপস্থাপন করেন। বিচার বিভাগীয় কর্মকর্তারা এরপর দলগতভাবে আলোচনায় অংশ নিয়ে রূপকল্পটিকে আরো লাগসই, প্রযুক্তি ভাবাপন্ন এবং বিচারপ্রার্থীবান্ধব করার উদ্দেশ্যে বিভিন্ন মতামত প্রদান করেন। বক্তারা বলেন, সুপ্রিম কোর্ট মানুষের আশা-ভরসার শেষ আশ্রয়স্থল। ভবিষ্যতের সুপ্রিম কোর্টকে এমনভাবে ঢেলে সাজাতে হবে যেন আইনের শাসন অব্যাহত থাকে এবং মানুষের বিশ্বাস ও আস্থা দৃঢ় হয়। এর জন্য প্রয়োজন মামলা জট কমানো। মামলা জট কমাতে হলে সুপ্রিম কোর্টে প্রযুক্তির ব্যবহার আরো বাড়াতে হবে।
সুপ্রিম কোর্টে ইতিমধ্যে অনলাইন কজলিস্ট, বেল কনফার্মেশন, অনলাইন ল রিপোর্ট ব্যবস্থা চালু হয়েছে। ভবিষ্যতে এই ধরনের সুবিধা আরো বৃদ্ধি করতে হবে।
ঢাকার জেলা ও দায়রা জজ জনাব এস এম কুদ্দুস জামান বলেন, উন্নত বিশ্বের দেশগুলোতে ছোটখাট মামলায় আপীলের কোনো সুযোগ থাকে না। নিম্ন আদালতেই সেগুলো নিষ্পত্তি হয়ে যায়। অথচ আমাদের দেশে যে কোনো একটি অন্তর্বর্তীকালীন আদেশের বিরুদ্ধেও এমনকি আপিল বিভাগ পর্যন্ত বিচারপ্রার্থীরা লড়ার সুযোগ পান। এতে বিচারের গতি মন্থর হয়ে যায়। মানুষকে বছরের পর বছর ধরে আদালতে ঘুরতে হয়। এসব বিষয়ের প্রতিকার স্ট্র্যাটেজিক প্ল্যানে আনা উচিত।
মহানগর দায়রা জজ মো. কামরুল হোসেন মোল্লা বলেন, ২০১৪ সালের চেয়ে ২০১৫ সালে মামলা নিষ্পত্তির হার প্রায় ১১ শতাংশ বৃদ্ধি পাওয়ার পুরো কৃতিত্ব অবশ্যই প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার প্রাপ্য। তাঁর ঐকান্তিক প্রচেষ্টা আজকের বাংলাদেশের বিচার ব্যবস্থাকে এমন পর্যায়ে দাঁড় করিয়েছে যা আগে কখনো কল্পনাও করা যেত না। আমরা আশা করবো এমনভাবে স্ট্র্যাটেজিক প্ল্যান করা হবে যেন মামলা নিষ্পত্তির এই উর্দ্ধমূখি প্রবণতা বজায় থাকে।
স্পেশাল অফিসার বেগম হোসনে আরা আকতার বলেন, ভবিষ্যতের সুপ্রিম কোর্ট হবে তথ্য প্রযুক্তির সুপ্রিম কোর্ট। আর এটা শুধু সুপ্রিম কোর্টের মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখলে চলবে না-অধস্তন আদালতের দোড়গোড়াতেও এ সুবিধা পৌঁছাতে হবে।
অতিরিক্ত রেজিস্ট্রার মো. সাব্বির ফয়েজ বলেন, প্রধান বিচারপতি বিচার বিভাগীয় কর্মকর্তাদের সকল সুযোগ সুবিধার দিকে নজর রাখেন। আমাদেরও উচিত হবে তাঁর কর্মউদ্যোগের সাথে তাল মিলিয়ে মামলা নিষ্পত্তিতে আরো আন্তরিকভাবে কাজ করা। সুপ্রিম কোর্টের স্ট্র্যাটেজিক প্ল্যান তৈরি ও বাস্তবায়ন করা সম্ভব হলে ভবিষ্যতে মামলাজট অনেকাংশে কমে আসবে।
কর্মশালার শেষে সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেল সৈয়দ আমিনুল ইসলাম সবাইকে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন এবং বলেন, আগামী ডিসেম্বরে জাতীয় বিচার বিভাগীয় সম্মেলনে স্ট্র্যাটেজিক প্ল্যান আনুষ্ঠানিকভাবে সুপ্রীম কোর্ট কর্তৃক গৃহীত হবে।




Discussion about this post