সংবিধানে ইসলামকে রাষ্ট্রধর্ম রাখার বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে করা রিট খারিজ করে দেয়া হাইকোর্টের রায় প্রকাশ হয়েছে। গত ৬ নভেম্বর এ রায় প্রকাশ হয়েছে বলে জানিয়েছেন রিটকারী আইনজীবী সমরেন্দ্র নাথ গোস্বামী।
বাংলাদেশের বাস্তবতার পরিপ্রেক্ষিতে রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম বৈধ বলে রায়ে উল্লেখ করা হয়েছে। সংসদ দেশের বাস্তবতার নিরিখে সংবিধান সংশোধন করতে পারে। দেশের বাস্তবতার প্রেক্ষাপটে ধর্ম নিরপেক্ষতার পরিধি বাড়ানোর আইনত ও সাংবিধানিক এখতিয়ার সংসদের। সংসদ সেটাই করেছে বলে রায়ে উল্লেখ করা হয়েছে।
রায়ে বলা হয়, ১৯৭২ সালের বাংলাদেশের প্রথম সংবিধানে রাষ্ট্রধর্ম ইসলামের বিষয়টি ছিল না। ১৯৮৮ সালে অস্টম সংশোধনীর মাধ্যমে ২ক অনুচ্ছেদ যুক্ত করা হয়। যেখানে রাষ্ট্রধর্ম হিসেবে ইসলাম ঘোষণা করা হয়। এই সংশোধনীতে ২(ক) অনুচ্ছেদে বলা হয়, প্রজাতন্ত্রের রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম, তবে অন্যন্য ধর্মও প্রজাতন্ত্রে শান্তিতে পালন করা যাইবে।
২০১১ সালের পঞ্চদশ সংশোধনীর মাধ্যমে এটাকে আরো কিছু পরিমার্জন করা হয়েছে। ২(ক) এ বলা হয়েছে, প্রজাতন্ত্রের রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম,তবে হিন্দু,বৌদ্ধ,খ্রিস্টানসহ অন্য অন্য ধর্ম পালনে রাষ্ট্র সমমযাদা ও সমঅধিকার নিশ্চিত করিবেন। এ দ্বারা স্বীকৃত যে, ২(ক) অনুচ্ছেদে ইসলামকে রাষ্ট্রধর্ম ঘোষণা করা হলেও অন্যন্য ধর্মকেও সমমযাদা ও সমঅধিকার দেওয়া হয়েছে। এ কারণে আমরা ২(ক)অনুচ্ছেদ বাতিলের আবেদন গ্রহণ করতে পারছি না। বর্তমান বাস্তবতার বিবেচনায় ধর্ম নিরপেক্ষতার আদর্শ দেখার অধিকার জাতীয় সংসদের। জাতীয় সংসদ সেটাই করেছে বলে রায়ে উল্লেখ করা হয়।
২০১৫ সালের ৭ সেপ্টেম্বর বিচারপতি মো. এমদাদুল হক ও বিচারপতি মুহাম্মদ খুরশীদ আলম সরকারের বেঞ্চ রাষ্ট্রধর্মের বৈধতা নিয়ে রিট সরাসরি খারিজ করে দেন।
রিট আবেদনকারী আইনজীবী সমরেন্দ্র নাথ গোস্বামী আদালতে নিজেই শুনানি করেন। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল মুরাদ রেজা ও ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল খোরশেদুল আলম। তাদের সঙ্গে ছিলেন সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল শেখ সাইফুজ্জামান।
১৯৮৮ সালে সংবিধানের অষ্টম সংশোধনীর মাধ্যমে ইসলামকে রাষ্ট্রধর্ম ঘোষণা এবং ২০১১ সালে পঞ্চদশ সংশোধনীতে রাষ্ট্রধর্ম বহাল রাখা হয়। বিষয়টি চ্যালেঞ্জ করে গত বছরের ১ আগস্ট সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী সমরেন্দ্র নাথ গোস্বামী এই রিট আবেদনটি করেন।
রিটে পঞ্চদশ সংশোধনীতে রাষ্ট্রধর্ম কেন সংবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক ঘোষণা করা হবে না’-এই মর্মে রুল জারির নির্দেশনা চাওয়া হয়েছিল।
প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের শাসনামলে ১৯৮৮ সালের ৫ জুন চতুর্থ জাতীয় সংসদে অষ্টম সংশোধনী অনুমোদন হয়। এর মাধ্যমে সংবিধানে অনুচ্ছেদ ২-এর সঙ্গে ২ (ক) দফা যুক্ত হয়। এতে বলা হয়, “প্রজাতন্ত্রের রাষ্ট্রধর্ম হবে ইসলাম, তবে অন্যান্য ধর্মও প্রজাতন্ত্রে শান্তিতে পালন করা যাইবে’।
২০১১ সালের ২৫ জুন আনা পঞ্চদশ সংশোধনীতে ওই অনুচ্ছেদ আবারও সংশোধন করা হয়। সেখানে বলা হয়, “প্রজাতন্ত্রের রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম, তবে হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিস্টানসহ অন্যান্য ধর্ম পালনে রাষ্ট্র সমমর্যাদা ও সমঅধিকার নিশ্চিত করবে।
রিট আবেদনকারীর যুক্তি ছিল, একটি নির্দিষ্ট ধর্মকে রাষ্ট্রধর্ম ঘোষণা করা সংবিধানের মৌলিক কাঠামোর সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়।
সংবিধানে রাষ্ট্রধর্ম হিসেবে ইসলামকে অন্তর্ভুক্তির বিধানের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে অপর একটি রিটও গত ২৮ মার্চ খারিজ করে দেন হাইকোর্টের আরেকটি বেঞ্চ। সেটার রায় এখনও প্রকাশ হয়নি। ২৮ বছর আগে স্বৈরাচার ও সাম্প্রদায়িকতা প্রতিরোধ কমিটির পক্ষে সাবেক প্রধান বিচারপতি কামালউদ্দিন হোসেন, কবি সুফিয়া কামাল, অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরীসহ ১৫ বিশিষ্ট নাগরিক হাইকোর্টে ওই রিট আবেদনটি দায়ের করেছিলেন।
Discussion about this post