কুড়ি বছরেও ‘হজম’ হল না পশুখাদ্য! বিহারে ৯০০ কোটি টাকার পশুখাদ্য কেলেঙ্কারিতে আবার ধাক্কা খেলেন আরজেডি সুপ্রিমো লালুপ্রসাদ যাদব। দেওঘর ট্রেজারি থেকে ৯৬ লক্ষ টাকা তছরুপের অভিযোগে লালুর বিরুদ্ধে বিচার শুরুর নির্দেশ দিল দেশের সর্বোচ্চ আদালত।
আজ সোমবার (৮ মে) সুপ্রিম কোর্ট জানাল, লালুপ্রসাদের বিরুদ্ধে অপরাধমূলক ষড়যন্ত্রের অভিযোগেই মামলা চলবে।
এর আগে, আরজেডি সুপ্রিমোর বিরুদ্ধে ওই অভিযোগে আর মামলা হবে না বলে রায় দিয়েছিল ঝাড়খণ্ড হাইকোর্ট। সুপ্রিম কোর্ট সেই রায় আজ খারিজ করে দিল। জানাল, চাইবাসা ট্রেজারি তছরুপ মামলায় লালুপ্রসাদ ইতিমধ্যেই জেল খেটেছেন মানে এই নয় যে আর কোনও তছরুপে তাঁর বিরুদ্ধে মামলা হবে না।
শুধু লালুপ্রসাদ যাদব নন, বিহারের আর এক প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী জগন্নাথ মিশ্র এবং প্রাক্তন শীর্ষ আমলা সজল চক্রবর্তীর বিরুদ্ধেও পশুখাদ্য কেলেঙ্কারিতে নতুন করে বিচার শুরু হচ্ছে। বিচারপতি অরুণকুমার মিশ্র এবং বিচারপতি অমিতাভ রায়ের বেঞ্চ সোমবার এই রায় দিয়েছে। কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা সিবিআই-এর আবেদনের ভিত্তিতেই সুপ্রিম কোর্টের এই নির্দেশ। এর আগে ঝাড়খণ্ড হাইকোর্ট জানিয়েছিল, পশুখাদ্য কেলেঙ্কারি একটিই দুর্নীতির ঘটনা। সেই কেলেঙ্কারিতে ইতিমধ্যেই লালুপ্রসাদ এক বার দোষী সাব্যস্ত হয়েছেন এবং জেল খেটেছেন। তাই নতুন করে ওই মামলায় আর লালুর বিরুদ্ধে অপরাধমূলক ষড়যন্ত্রের অভিযোগ আনা যাবে না। লালুর বিরুদ্ধে ভারতীয় দণ্ডবিধির ২০১ ধারায় (তথ্য লোপাট) এবং ৫১১ ধারায় (যাবজ্জীবন কারাদণ্ডযোগ্য বা কারাদণ্ডযোগ্য অপরাধ ঘটানোর চেষ্টা করা এবং সেই লক্ষ্যে কাজ করা) মামলা চালানো যাবে বলে জানিয়েছিল ঝাড়খণ্ড হাইকোর্ট।
এই রায়ের বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হয় সিবিআই। গত ২০ এপ্রিল বিষয়টির শুনানি শেষ করে সুপ্রিম কোর্ট রায় রিজার্ভ রেখেছিল। সোমবার রায় ঘোষণা করে দুই বিচারপতির বেঞ্চ জানাল, একধিক ট্রেজারি থেকে যদি টাকা তছরুপ হয়ে থাকে, তা হলে একধিক বার অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে অপরাধমূলক ষড়যন্ত্রের অভিযোগে মামলা হতে পারে এবং একাধিক বার বিচার হতে পারে। লালুপ্রসাদদের বিরুদ্ধে আবার ওই অভিযোগের বিচার হবে বলে সুপ্রিম কোর্ট জানিয়ে দিয়েছে। লালুপ্রসাদ এবং অন্য অভিযুক্তদের বিচার আগামী ৯ মাসের মধ্যে শেষ করতে হবে বলেও সুপ্রিম কোর্ট নির্দেশে দিয়েছে।
১৯৯০-এর দশকের মাঝামাঝি সময়ে লালুপ্রসাদের বিরুদ্ধে ৯০০ কোটি টাকার পশুখাদ্য কেলেঙ্কারির অভিযোগ সামনে আসে। পশুপালন দফতরের মাধ্যমে গৃহপালিত পশুর খাদ্য এবং ওষুধ কেনার নামে অবিভক্ত বিহারের বিভিন্ন জেলার ট্রেজারি থেকে বিপুল টাকা গায়েব করে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছিল। তৎকালীন জনতা দল সভাপতি তথা বিহারের তদানীন্তন মুখ্যমন্ত্রী লালুপ্রসাদ যাদবকে সিবিআই সেই মামলায় অভিযুক্ত করে। বিহারের আর এক প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী জগন্নাথ মিশ্রের বিরুদ্ধেও এই অভিযোগ আনা হয়। গ্রেফতার হওয়ার পরিস্থিতি তৈরি হওয়ায়, লালুপ্রসাদ মুখ্যমন্ত্রিত্ব ছাড়তে বাধ্য হন এবং স্ত্রী রাবড়ি দেবীকে মুখ্যমন্ত্রী পদে বসান। জনতা দলও তিনি ভেঙে দেন। নিজের পৃথক দল আরজেডি তৈরি করেন এবং সংখ্যাগরিষ্ঠ বিধায়ক তাঁর সঙ্গে থাকায় আরজেডি-ই বিহারে সরকার গড়ে।
৯০০ কোটি টাকা তছরুপে অভিযুক্ত হওয়া সত্ত্বেও বিহারের উপর রাজনৈতিক কর্তৃত্ব অক্ষুণ্ণ রাখতে লালু যে ভাবে সফল হয়েছিলেন, আইনি প্যাঁচ-পয়জার এড়াতে কিন্তু তিনি ততটা সফল হননি। চাইবাসা ট্রেজারি থেকে প্রায় ৩৮ কোটি টাকা পশুখাদ্য কেনার নামে তছরুপ হয়েছে বলে যে অভিযোগ উঠেছিল, সে অভিযোগে আরজেডি সুপ্রিমো দোষী সাব্যস্ত হন এবং তাঁর পাঁচ বছরের কারাদণ্ড হয়। দোষী সাব্যস্ত হওয়ার পর লালুর সাংসদ পদও বাতিল হয়ে গিয়েছিল। কিন্তু জেল থেকে বেরিয়ে আসার পর বিহারের রাজনীতিতে আবার লালুর পুনরুত্থান হয়। ২০১৫ সালে আরজেডি-জেডিইউ-কংগ্রেস জোট বিপুল গরিষ্ঠতা নিয়ে বিহারের মসনদ দখল করে এবং লালুর দল আরজেডি ৮০টি আসন নিয়ে বিহার বিধানসভার বৃহত্তম দল হয়। বছর দেড়েক আগের সেই বিপুল জয়ের সুবাদে লালুর জন্য পরিস্থিতি যতটা অনুকূল হয়ে উঠেছিল, ততটা আর রইল না। দেওঘর ট্রেজারি থেকে ৯৬ লক্ষ টাকা তছরুপের অভিযোগে ফের লালুপ্রসাদের বিরুদ্ধে অপরাধমূলক ষড়যন্ত্রে লিপ্ত থাকার অভিযোগ উঠল। সুপ্রিম কোর্ট সেই অভিযোগের বিচার করার নির্দেশও দিয়ে দিল। দোষী সাব্যস্ত হলে লালুপ্রসাদকে আবার জেলে যেতে হতে পারে।
-আনন্দবাজার




Discussion about this post