আমলাতন্ত্রের কারণে ভালো কিছু করা সম্ভব হয় না মন্তব্য করেছেন দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) চেয়ারম্যান ইকবাল মাহমুদ। তিনি বলেছেন, ‘আমি নিজে একজন সাবেক আমলা হিসেবে বলছি, আমাদের দেশের সবচেয়ে বড় সমস্যা হচ্ছে আমলাতন্ত্র। সিভিল সার্ভিস অ্যাক্টসহ যেকোনো সংস্কারই আমলাতন্ত্রের “ব্ল্যাক হোলে” হারিয়ে যায়।’
রাজধানীর বাংলাদেশ প্রেস ইনস্টিটিউট (পিআইবি) মিলনায়তনে দুদক, পিআইবি ও জার্মান উন্নয়ন সংস্থা জিআইজেডের যৌথ উদ্যোগে ‘দুর্নীতি প্রতিরোধে গণমাধ্যমের ভূমিকা’ শীর্ষক মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে সোমবার (৮ মে) তিনি এ কথা বলেন।
দুদক চেয়ারম্যান বলেন, ‘সরকারের সদিচ্ছা থাকা সত্ত্বেও কচ্ছপগতিতে চলা আমলাতন্ত্রের কারণেই ভালো কিছু করা সম্ভব হচ্ছে না। তাই আমাদের পদ্ধতিগত পরিবর্তনে মনোনিবেশ করতে হবে।’
সব ব্যাংকের অর্থই জনগণের আমানত উল্লেখ করে ইকবাল মাহমুদ বলেন, ‘আমরা জনগণের আমানত খেয়ানত হতে দিতে পারি না। তাই আমার অনুরোধ, যাঁরা অবৈধভাবে ব্যাংক থেকে অর্থ নিয়েছেন, সে অর্থ নিজ উদ্যোগে ফেরত দিন। যাঁরা অবৈধভাবে অর্থ প্রদান করেছেন, তাঁরা সে অর্থ আদায় করুন। আমরা জনগণের অর্থ আত্মসাৎকারীদের কোনো অবস্থাতেই ছাড় দেব না। জনগণের টাকা জনগণের কাছে ফেরত দিতে হবে।’
দুদক চেয়ারম্যান বলেন, আপাতত ব্যাংক কর্মকর্তা কিংবা ব্যাংক থেকে অবৈধভাবে ঋণ গ্রহণকারীদের গ্রেপ্তার কিছুটা কম হচ্ছে। তার অর্থ এ কথা নয় যে তাঁদের আর গ্রেপ্তার করা হবে না। তিনি বলেন, ‘আমরা কিছুটা বিরতি দিয়েছি। আমরা পর্যবেক্ষণ করছি, যদি এই সময়ের মধ্যে এ জাতীয় অর্থ আদায় হয়ে যায়, তবে সবার জন্য মঙ্গল। তা না হলে জড়িত সবাইকে কঠিন পরিণতি ভোগ করতে হবে।’
দুর্নীতি প্রতিরোধে কোনো মন্ত্রণালয় দুদকের কাছে সহযোগিতা চায়নি উল্লেখ করে দুদক চেয়ারম্যান বলেন, ‘আমরা মেগা প্রজেক্ট ও বড় নিয়োগের ক্ষেত্রে কমিশনকে সম্পৃক্ত করে দুর্নীতি প্রতিরোধে সরকারকে সহযোগিতা করতে চেয়েছিলাম। সরকারের মন্ত্রিপরিষদ বিভাগও প্রতিটি মন্ত্রণালয়কে পত্র দিয়ে বিষয়টি অবহিত করেছে। কিন্তু আজ পর্যন্ত কোনো মন্ত্রণালয়ই এ বিষয়ে কমিশনের কাছে কোনো সহযোগিতা চায়নি।’
বেসিক ব্যাংকের অর্থ আত্মসাৎ প্রসঙ্গে দুদক চেয়ারম্যান বলেন, এ বিষয়ে ৫৬টি মামলা করা হয়েছে। অনেকে ব্যাংকে টাকা জমা দিয়েছেন। কোনো কোনো ঋণ নিয়মিতকরণ করা হয়েছে। দুদকের উদ্দেশ্য কাউকে আটকিয়ে রাখা নয়। বেসিক ব্যাংকের অর্থ আত্মসাতের বিষয়টি তদন্তাধীন। তাই এ বিষয়ে এই মুহূর্তে কোনো মন্তব্য করা যাবে না।
পিআইবির পরিচালনা বোর্ডের চেয়ারম্যান ও সমকাল সম্পাদক গোলাম সারওয়ারের সভাপতিত্বে মতবিনিময় সভায় বিশেষ অতিথির বক্তব্য দেন তথ্য কমিশনার নেপাল চন্দ্র সরকার। মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক মফিজুর রহমান।
অনুষ্ঠানে প্রথম আলোর যুগ্ম সম্পাদক সোহরাব হাসান বলেন, গণমাধ্যম তখনই দুর্নীতি দমনে দুদককে সহায়তা করতে পারবে, যদি গণমাধ্যমকে তারা আস্থায় রাখে। গণমাধ্যমকে আস্থায় রাখতে হলে তার প্রবেশাধিকার নিশ্চিত করতে হবে। গণমাধ্যমকে প্রতিপক্ষ ভেবে দুর্নীতি দমন সম্ভব নয়।
অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য দেন দুদক মহাপরিচালক মো. শামসুল আরেফিন, পিআইবির মহাপরিচালক শাহ আলমগীর, একাত্তর টিভির প্রধান সম্পাদক মোজাম্মেল বাবু, যুগান্তরের ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক সাইফুল আলম, এটিএন বাংলার প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা জ ই মামুন, বাসসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আবুল কালাম আজাদ।




Discussion about this post